শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দেশে করোনায় আক্রান্ত আরও ১ জন ॥ সুস্থ ১৯

স্টাফ রিপোর্টার: দেশে করোনা ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও একজন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জনে। ভাইরাসটি থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও চারজন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৯ জন। গতকাল সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ৩৩৮ জনের। যাদের নতুন করে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। তার বয়স ২০ বছর। তিনি একজন নারী।
আগে থেকে যারা আক্রান্ত ছিলেন তাদের মধ্যে আরও চারজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৯ জন। নতুন যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের মধ্যে ৮০ বছরের একজন বৃদ্ধও রয়েছেন। এ ছাড়া সুস্থদের মধ্যে একজন চিকিৎসক ও একজন নার্সও রয়েছেন। ডা. ফ্লোরা বলেন, গত দুদিন রোগী না পাওয়ার খবরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘরের বাইরে মানুষ বের হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। একদিন রোগী শনাক্ত না হলে বাংলাদেশ করোনামুক্ত মনে করার কোনো কারণ নেই। তাই সবাইকে আমাদের পরামর্শ মেনে ঘরে থাকতে হবে। ব্রিফিংয়ের শুরুতে বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরেন ডা. ফ্লোরা। তুলে ধরেন করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে ঘরে থাকাসহ প্রয়োজনীয় করণীয়ও।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত সোয়া সাত লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ৩৪ হাজার। তবে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন দেড় লাখের বেশি মানুষ। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিনে দিনে সংক্রমণ বেড়েছে। সবশেষ হিসাবে করোনায় বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯, মারা গেছেন ৫ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ১৯ জন।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই ছুটি ১১ এপ্রিল কিংবা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ছুটির সময়ে অফিস-আদালত থেকে গণপরিবহন, সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, জরুরি সেবা এই বন্ধের বাইরে থাকছে। জনগণকে ঘরে রাখার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীও।
করোনা দেশ
রংপুরে হোম কোয়ারেন্টাইনে ২৯৭৩ জন
রংপুর অফিস : রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে আরও ৫৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত এ নিয়ে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁঁিড়য়েছে ২ হাজার ৯শ’ ৭৩ জনে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত ফোকাল পার্সন ডাক্তার জওয়াহেরুল আলম সিদ্দিকী জানান, এর মধ্যে গতকাল সোমবার পর্যন্ত রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ১ হাজার ৭৮৪ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৬ জনসহ ১ হাজার ৭৯০ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বর্তমানে রংপুর বিভাগে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১ হাজার ১৯২ জন।
মেডিকেল আইসোলেশনে যুবক
রাজশাহীতে কোয়ারেন্টাইনে ৫১৯ ॥ ছাড়পত্র ৪২১ জনকে
রাজশাহী অফিস : রাজশাহীতে এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন বিদেশ ফেরত ৫১৯ জন। আর গত ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪২১ জন। রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৫১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন করা হয়। এদিকে রাজশাহীতে করোনা সংক্রমিত সন্দেহে এক যুবককে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক জানান, গত ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত জেলায় মোট ৯৪০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ দিন পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় ৪২১ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। সোমবার সবমিলিয়ে মোট ৫১৯ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তবে কেউ প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেই। নতুন যে ৫১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছে এদের মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার ১৮ জন। এর বাইরে জেলার বাঘা উপজেলায় ১০ জন, বাগমারায় ৪ জন, মোহনপুরে ১১ জন এবং গোদাগাড়ীতে ৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৪ জনই এসেছেনে ভারত থেকে। মালয়েশিয়া থেকে এসেছেন ২ জন। এছাড়া সৌদি আরব, জর্ডান, জার্মান, মালদ্বীপ ও সিঙ্গাপুর থেকে ১ জন করে দেশে এসেছেন। সিভিল সার্জন জানান, রাজশাহীতে এখনো করোনা ভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগের রোগী পাওয়া যায়নি। তারপরেও বিদেশ ফেরতদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে আসার পর তারা ১৪ দিন বাইরে ঘোরাফেরা করতে পারবেন না। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক।
অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আসা ব্যক্তির সংখ্যা কমেছে। রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এ বিভাগের আট জেলায় নতুন করে হোম কোয়ারেন্টাইনে এসেছে ১৩১ জন। রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয় জানিয়েছে, গত ১০ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আসে ৬ হাজার ৮৪০ জন। তবে হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া থেকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৩০৯ জন।
এদিকে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়, করোনা সংক্রমিত সন্দেহে এক যুবককে আইডি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার রাত ১২টার দিকে তাকে ভর্তি নেয়া হয়। ওই যুবকের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলায়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আজিজুল হক আজাদ জানান, ওই যুবকের সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে। তবে এখনো আমরা নিশ্চিত নই। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁয়ের ১শ’ পরিবার কোয়ারেন্টাইনে
ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা: ঠাকুরগাঁওয়ে একই পরিবারের পাঁচজনকে হাসপাতালে পাঠানোর পরদিন তাদের গ্রামের ১শ’ পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। রোববার রাত সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের নদীপাড়া গ্রামের একশ পরিবারের জন্য থেকে এ নির্দেশ কার্যকর হয়েছে বলে জানান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি আরো জানান ১শ পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে সাত দিনের খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। জানাযায়, শনিবার সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান নদীপাড়ার বাসিন্দা রুহুল আমিন সপরিবারে ঢাকায় থাকতেন। কয়েকদিন আগে অসুস্থ্য অবস্থায় বাড়িে আসেন। এতে তার পরিবারের পাঁচ সদস্য জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হলে তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ঐ গ্রামের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমন রোধে গ্রামটির একশ পরিবারকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওই পরিবারের পাঁচজন সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি-না তানিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। জানার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ফেনীতে আরো ২৮ বিদেশফেরত হোম কোয়ারেন্টিনে
ফেনী সংবাদদাতা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ফেনীতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৮ জন বিদেশফেরতকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বর্তমানে জেলায় ১০১৯ বিদেশফেরত হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরাও।
অপরদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে ১০৩ জনের। এ পর্যন্ত ৫৬৬ জনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে। যেসব বিদেশফেরতদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে তাদের মৌখিক ছাড়পত্র দিয়ে পর্যবেক্ষণে রেখেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
গতকাল সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ফেনী জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার তাহসিন নুর অমি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিমানবন্দরের তথ্যানুযায়ী, জেলায় এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৩০০ জনের বেশি প্রবাসী বাড়ি ফিরেছেন। বাকিদের কোনো তথ্য না থাকায় তাদের হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। ইমিগ্রেশন থেকে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে সে ঠিকানায় তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। 
চুয়াডাঙ্গায় এক নারী আইসোলেশনে
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতাঃ চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত সন্দেহে এক নারীকে (৩০) আইসোলেশন ইউনিটে নেয়া হয়েছে।
রোববার গভীর রাতে ওই নারীকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে আইসোলেশন ইউনিটে পাঠিয়ে দেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শামীম কবির জানান, সদর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের ওই নারী বেশ কয়েকদিন ধরেই জ্বর, ঠান্ডা ও কাশিতে আক্রান্ত। এ ছাড়া তার শ্বাসকষ্টও রয়েছে। রোববার রাতে ওই নারী বেশ অসুস্থ হয়ে পরলে তার স্বামী তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরী ওয়ার্ডে নিয়ে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরীক্ষা নিরীক্ষায় করোনা আক্রান্ত সন্দেহ করা হচ্ছে। এ কারণে তাকে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ