শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলেদের দুর্বিষহ অবস্থা

খুলনা অফিস : খুলনার কয়রা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা, বাগেরহাটের মংলা, রামপাল, শরণখোলা মোরেলগঞ্জ, সাতক্ষীরার তালা, আশাশুনি, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লক্ষাধিক জেলে-মাঝির এভাবেই দুর্বিষহ জীবন চলছে। মাছ ধরতে পারছেন না। যে কারণে অনেকের চুলাইও জ্বলছে না আগুন। খুলনা জেলার সর্বদক্ষিণে সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা এবং উপকূলীয় উপজেলা কয়রার মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামের জেলে আইয়ুব আলী আক্ষেপ করে বলছিলেন-‘ছাবাল (ছেলে) ম্যায়ি (মেয়ে) নিয়ে না খাইয়ে আছি, ভালো কুরি (করে) কেউ শোনে না আমাগে কথা। নদীতে মাছ ধরতে গেছিলাম। কোস্টগার্ড বাধা দেয়। চুলি (চলে) আইছি। সরকারের নিষেধে মাছ ধরতি পারি না। শরীল গতরও ভালো না। গ্রামে কোনো কামও নাই।’ 

জেলে আইয়ুব আলী জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের চেয়ে তাদের কাছে তিনবেলা খাবার খেয়ে জীবন বাঁচানোটাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন তারা সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে মাছ ধরতে পারছেন না। নদীতে থাকার কারণে তারা কোনো রাজনীতি করারও সুযোগ পান না। যে কারণে নেতাদের কোনো সহযোগিতা তারা পাচ্ছেন না।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে কর্মজীবী মানুষ। বিশেষ করে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপকূলীয় জেলেপল্লীর জেলেরা। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সবমিলিয়ে গত কয়েক দিনে তাদের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। যথাসময়ে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার জেলের কাছে খাদ্যসহায়তা না পৌঁছানোর কারণে লক্ষাধিক জেলে পরিবারে কাটছে মানবেতর জীবন। জেলেরা জানান, অন্য পেশার মানুষ বারো মাস আয় করতে পারেন। কিন্তু বছরে কয়েক দফা মাছ শিকার নিষেধাজ্ঞা থাকা জেলেদের। মাঝেমধ্যে পেটের দায়ে কেউ মাছ ধরতে নামলে ভ্রাম্যমাণ আদালত আটক করে জেল-জরিমানা, জাল-নৌকা জব্দ করে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক জেলে। এর কারণে এখন করোনার এই সময়ে কেউ ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে নামছেন না।

খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের ইউপিতে মোট ৫২শ’ পরিবার আছে। এদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ করা সাধারণ সহায়তার (জিআর) চাল দুই টন ১৬২ কেজি বরাদ্দ হয়েছে। প্রতি পরিবারের জন্য ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ রয়েছে। তাতে ২৪৬ পরিবার চাল পান। কিন্তু শুধুমাত্র ইউনিয়নে ৩৯৫৭ পরিবার জেলে। বিশাল এ জেলে পরিবারকে কোনো জিআর চালসহ সরকারি সহযোগিতা দেয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা দস্যু, সবকিছুই মোকাবিলা করে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে এসব জেলেরা মাছ শিকার করে থাকেন। জীবিকার জন্য জীবন বাজি রেখে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে অনেক সময় তাদের অথৈ সাগরে যেতে হয় মাছ শিকারে। বর্তমানে করোনার কারণে তারা কাজে যেতে পারছেন না। এর কারণে তিন বেলা খাবারও জুটছে না এসব কর্মহীন জেলেদের।

বটিয়াঘাটার জলমা গ্রামের এক মাছ শিকারি শিমুল বলেন, পরিবার নিয়ে এখন বেঁচে থাকায় কষ্টের হয়ে গেছে। নদীতে মাছ ধরতে দিচ্ছে না। গ্রামেও কোনো কাজ নেই। দু’মুঠো ভাতের যোগাড় করতেই পারছি না।

সুন্দরবনের জয়মনির ঠোটার জেলে পল্লীর জেলে আব্দুল্লাহ বলেন, এহন আমাগো খারাপ দিন। নদীতে মাছ ধরতে দেয় না। মাইয়ে, পোলা নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে আছি। মাছের উপর সংসার চলে।

তিনি আরও বলেন, এই পল্লিতে স্থায়ী প্রায় ৫ হাজার মানুষ থা। অন্যান্য এলাকা থেকে মাছের মওসুমে আরও ৫ হাজার মানুষ আসে। মাছ ধরি বদ্দর, হরিণটানা, আন্ধাররা, মাইডা থেকে। এখন কোথাও মাছ ধরতে দেয় না। তাই জাল, দড়ি, লগি, বৈঠা, নৌকা ঠিক করে সময় কাটছে।

মংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের সিন্দুরতলা এলাকার জেলে অরেবিন্দু রায় বলেন, এমনি তে তো কোনো পোনা ধরতে দিচ্ছিল না কয়েক মাস ধরে। কিছু সাদা মাছ ধরে সংসার চালাতাম তাও এখন বন্ধ।

তিনি বলেন, তাদের গ্রামে প্রায় ৩০০ মৎস্যজীবী রয়েছেন। করোনার কারণে সবাই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। যাদের অনেকের চুলা এখন জ্বলছে না।

বাগেরহাট উপকূলী মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে জনসমাগম ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞারোপ করার পর থেকে কোনো জেলে নদ-নদী, খাল-বিল এমনকি সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না। এতে কর্মীহীন হয়ে পড়েছেন। হাজার হাজার জেলে পরিবার।

তিনি বলেন, কেবলমাত্র বাগেরহাটেই ৩০ হাজারেরও অধিক জেলে রয়েছে। যারা বর্তমানে কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব জেলেরা পাচ্ছে না কোনো সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা। তিনি অভিযোগ করেন, জেলেদের দুর্বিষহ কথা জানানোর জন্য মৎস্য অধিদফতরে বার বার যোগাযোগ করা হলে কাউকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

নিম্নআয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর

আহ্বান ক্রিকেটার সালমার

করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন খুলনার মেয়ে বাংলাদেশ নারী টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি ইউনিয়নের মিল্কি দেয়ারায় তার নিজ বাড়ির আশপাশের মানুষের মাঝে খাবার বিতরণের সময় এ আহ্বান জানান তিনি। সালমা নিম্ন আয়ের ৬০টি পরিবারের মধ্যে এক সপ্তাহের খাবার বিতরণ করেন। 

এ সময় ২৯ বছর বয়সী অলরাউন্ডার জানান, তার এই সাহায্য অব্যাহত থাকবে। তিনি সকল নারী ক্রিকেটারসহ ক্রীড়াঙ্গনের সকলকে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়ার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বাড়িতে থাকার এবং বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে সালমা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ