বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বাংলাদেশ-ভারত সাইবার যুদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার : হুমকি-পাল্টা হুমকির মধ্য দিয়ে চলছে ভারত-বাংলাদেশ সাইবার যুদ্ধ। চলতে থাকা সাইবার যুদ্ধে ভারতের পরাজয় হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশী হ্যাকারস গ্রুপ। বাংলাদেশভিত্তিক ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস গ্রুপের ই-মেইল বার্তায় বলা হয় প্রিয় বাংলাদেশী নাগরিকরা আমরা বাংলাদেশের সাইবার যোদ্ধা। সীমান্তে হত্যা বন্ধে আমরা ভারতীয়দের সাথে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত সীমান্ত হত্যা পুরোপুরি বন্ধ না হবে ততদিন আমাদের সাইবার যুদ্ধ থামবে না। ভারত সরকার দেখবে আমরা কতটা ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারি। আমরা শুধু বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিতেই নয়, তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদও করতে পারি। এ পর্যন্ত বাংলাদেশভিত্তিক ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস গ্রুপ বিএসএফের একটিসহ ভারতের প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে। হ্যাকিংয়ের এ পরিমাণ প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে। শত শত নতুন নতুন হ্যাকার আমাদের সাথে যুক্ত হচ্ছে। সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাও যুক্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক একাধিক হ্যাকার গ্রুপ আমাদের সাথে কাজ করছে। সর্বশেষ আমাদের পক্ষ হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সফ্টওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের ভারতীয় ওয়েব স্টোর হ্যাক করেছে চীনা হ্যাকাররা। একটি পোস্টে এক পাঠক লিখেছেন, ‘আমি মৃত্যুর পরোয়া করি না। জয়ী না হওয়া পর্যন্ত আমি আমার মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধ অব্যাহত রাখব।' আমরা বলতে চাই যতক্ষণ সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হবে শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত ততক্ষণ আমাদের যুদ্ধ থামবে না। বিপ্লব কখনো বৃথা যায় না। সাইবার যোদ্ধাদের বিজয় হবেই।

এদিকে হ্যাকিংয়ের কারণে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ওয়েবসাইটটি (www.bsf.nic.in) পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার দক্ষিণ ভারতের বহুল প্রচারিত ইংরেজি ভাষার দৈনিক ডেকান ক্রনিকল এ খবর জানিয়েছে। ক্রনিকলের খবরে বলা হয়, ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস গ্রুপ দাবি করেছে সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার প্রতিবাদে তারা এ কাজ করেছে। ফেসবুকে এই গ্রুপের একটি ফ্যান পেজে এক হ্যাকার লিখেছেন, ভারতের সাথে আমাদের কোনো ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই। কিন্তু বিএসএফের বর্বরতা এবং সর্বোপরি ভারত সরকার এটা করতে আমাদের বাধ্য করেছে। পত্রিকাটি বলেছে, অপর একটি পোস্টে এক হ্যাকার লিখেছেন, ভারত ১৯৭১ সালে আমাদের সমর্থন করেছে। এখন তারা আমাদের হত্যা করছে। একজন ভন্ড বন্ধুর চেয়ে একজন প্রকাশ্য শত্রু ভালো। ডেকান ক্রনিকল জানিয়েছে, বাংলাদেশের এই হ্যাকার গ্রুপটি ভারতের একটি জনপ্রিয় শেয়ার বাজার বিষয়ক সংবাদ ওয়েবসাইটও (www.paisacontrol.com) হ্যাক করেছে। অনেক ওয়েবসাইট হ্যাক করার পর এই গ্রুপটি ওই সাইটে নানা ধরনের দাবি পোস্ট করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘বিএসএফ' সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধ কর। এ ছাড়া ‘থ্রিএক্সপায়ারথ্রি সাইবার আর্মি নামের একটি বাংলাদেশী হ্যাকার গোষ্ঠী ভারতের ৭ শতাধিক ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে বলে খবরে দাবি করা হয়েছে। খবরে বলা হয়, ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস লিখেছে তারা এই হ্যাকিং উৎসব উদযাপন করছে। ভারতীয় হ্যাকার গোষ্ঠীর সদস্য এসেল ইন্ডিয়া ভয়ে সাইবার বিশ্ব ছেড়ে গেছে। তাই আমরা বলতে পারি, এই সাইবার যুদ্ধে ভারতের পরাজয় হয়েছে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি ভিডিও আদান-প্রদানের ওয়েবসাইট ইউটিউবে ভারত সরকারের প্রতি একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে ‘বিডি ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস'। ভিডিওতে মুখোশ পরা একজন হ্যাকারকে যান্ত্রিক (রোবটিক) গলায় কথা বলতে দেখা যায়। তাঁর বক্তব্য হলো, ‘হ্যালো বাংলাদেশের নাগরিকরা, আমরা বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস। এখন সময় আমাদের চোখ খুলবার। বিএসএফ এক হাজারের বেশি বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করেছে। তাদের গুলীতে আহত হয়েছে আরও ৯৮৭ বাংলাদেশী। অপহৃত হয়েছে হাজারো মানুষ। এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। তারা অবিচার করছে। সংকটময় এ মুহূর্তে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু দায়িত্ববোধ রয়েছে। আমরা চাই ভারত সরকার নিরপরাধ বাংলাদেশীদের হত্যা করা বন্ধ করুক। নতুবা আমরা ভারতীয়দের বিরুদ্ধে সাইবার-যুদ্ধ শুরু করব। এটি চলতেই থাকবে। বাংলাদেশের ‘বাংলাদেশ সাইবার আর্মি', ‘বিডি ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস', ‘এক্সপায়ার সাইবার আর্মি' এ তিনটি হ্যাকার গ্রুপ এই সাইবার-যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কয়েকজন হ্যাকার জানান বাংলাদেশী হ্যাকারদের সমর্থন দিয়েছে আন্তর্জাতিক হ্যাকার দল ‘এনোনিমাস'। এ ছাড়া পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরবের শক্তিশালী হ্যাকাররা বাংলাদেশী হ্যাকারদের সমর্থন দিয়ে ভারতীয় সাইটে আক্রমণ করছেন। হ্যাকারদের ফেসবুক গ্রুপ, বিভিন্ন বাংলা ব্লগসাইটের একাধিক ব্লগে বাংলাদেশী হ্যাকারদের আক্রমণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের কোনো সাইট আক্রান্ত হলে বা আক্রমণ ঠেকাতে ওয়েবমাস্টারদের কী করতে হবে তারও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশী হ্যাকার পরিচয় দানকারীরা বলছেন, বিএসএফ সীমান্তে হত্যাকান্ড ও অত্যাচার বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশী হ্যাকাররা এই সাইবার-যুদ্ধ শুরু করেছেন। টিপাইমুখ বাঁধসহ অন্যান্য বিষয়ের কথাও তারা বলছেন।

এদিকে ভারতীয় হ্যাকার দলগুলো বাংলাদেশী হ্যাকারদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাই সব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ভারতের ‘ইন্ডিশেল' হ্যাকার দল বাংলাদেশী সাইটগুলোতে আক্রমণে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ