কে পাবেন এবারের বুকার? লং লিস্টে ১৩ বই

আহমদ মতিউর রহমান
দেখতে দেখতে দেখতে বিশ্বের সেরা দু’টি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার সময় হয়ে এল। নোবেল পুরস্কার ঘোষণা হবে অক্টোবরে। আর নোবেলের পর সবচেয়ে মর্যাদাবান সাহিত্য পুরস্কার বুকার পুরস্কার। ২০২৩ সালের দীর্ঘ তালিকাভুক্ত বইয়ের তালিকা ইতিমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। এ মাসের ২১ তারিখে জানা যাবে শর্ট লিস্টের বইয়ের তালিকা। নভেম্বরের ২৬ তারিখে লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হবে বিজয়ীর নাম। কিন্তু কে পাচ্ছেন এবার এ পুরস্কার এ নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। নোবেলের যেহেতু শর্ট লিস্ট হয় না, তার জল্পনা কল্পনা একরকম। আর বুকারেরটা আরেক রকম।
এবার বুকারের দীর্ঘ তালিকায় চারটি মহাদেশের বই স্থান পেয়েছে। আছেন চারজন আইরিশ লেখক, চারজন আনকোড়া নতুন ঔপন্যাসিক। চারের খেলা যেন। দশজন লেখকের বই রয়েছে যারা প্রথমবারের মতো বুকার পুরস্কার পাবার তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। বেশ আশাবাদী হওয়ার মতো খবর।
বিচারকরা ১ অক্টোবর ২০২২ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এর মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত বই বা এন্ট্রি থেকে ১৩ বই নির্বাচিত করেছেন লং লিস্টের জন্য। তারা সেরা উপন্যাসটি এখন খুঁজছেন। ১৩টি বইয়ের দীর্ঘ তালিকা - ‘বুকার ডজেন’ গত ১ আগস্ট প্রকাশ পায়। লন্ডনের ওল্ড বিলিংগেটে একটি ইভেন্টে ৫০ হাজার পাউন্ডের এই পুরস্কারের বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে, নভেম্বর ২৬, ২০২৩ এ, আগেই বলেছি। দীর্ঘ তালিকাভুক্ত ১৩টি বই সার্বজনীন এবং সাময়িক থিমগুলো অন্বেষণ করে লেখা। যা চলমান ব্যক্তিগত কথন থেকে ট্র্যাজি-কমিক পারিবারিক গল্প পর্যন্ত বিস্তৃত। আছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন পর্যন্ত; বৈজ্ঞানিক সাফল্য থেকে প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলার বিষয়ও আছে বৈকি। ১০ জন লেখক প্রথমবারের মতো দীর্ঘ তালিকাভুক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে চারজন ডেব্যুটেন্ট, আগেই বলেছি। প্রথম বই লংলিস্টে স্থান পাওয়া বড় ব্যাপার অবশ্যই।
যাদের বই আছে লংলিস্টে সেই লেখকদের কয়েকজন : প্রথমে উল্লেখ করা যায় মালয়েশিয়ার পেনাঙে জন্ম নেওয়া তান তুয়ান এঙের উপন্যাস ‘দ্য হাউস অব ডোরস’-এর নাম। গণমানুষের নৈতিকতা এবং ব্যক্তি মানুষের দৃষ্টি দিয়ে দেখা সাম্রাজ্যবাদের কালের প্রেম ও প্রতারণার গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে এ উপন্যাস। আরো আছে আইরিশ লেখক পল মুরের উপন্যাস ‘দ্য বি স্টিং’: দুর্ভাগ্যের সামান্য একটা মুহূর্তও জীবন বদলে দিতে পারে, এমন সত্যের মানদণ্ডে বিচার করলে দেখা যায় বার্নেস পরিবারের কষ্টের কথা নিয়েই তৈরি হয়েছে এ উপন্যাস। আছে কেনিয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক চেতনা মারুর উপন্যাস ‘ওয়েস্টার্ন লেন’, স্কটিশ কথাসাহিত্যিক মার্টিন ম্যাকিনেসের ‘ইন অ্যাসেনসন’, একাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত আইরিশ লেখক পল লিনসের ‘প্রফেট সং’, ব্রিটিশ কথাসাহিত্যিক ভিক্টরিয়া লয়েড বার্লোর ‘অল দ্য লিটল বার্ড হার্টস’, আরেক ব্রিটিশ লেখক সিয়ান হিউজের প্রথম উপন্যাস ‘পার্ল’, আমেরিকান লেখক পল হার্ডিঙের ‘দিস আদার ইডেন’, আইরিশ লেখক এলেইন ফিনির ‘হাউ টু বিল্ড আ বোট’, আরেক আমেরিকান লেখক জনাথন এসেকোফেরির উপন্যাস ‘ইফ আই সারভাইভ ইউ’, কানাডীয় লেখক সারাহ বার্নস্টাইনের ‘স্টাডি ফর ওবিডিয়েন্স’, বহু পুরস্কারে ভূষিত আইরিশ লেখক সেবাস্টিয়ান ব্যারির উপন্যাস ‘ওল্ড গডস টাইম’ এবং নাইজেরিয়ার কথাসাহিত্যিক আয়োবামি আদেবাইয়োর উপন্যাস ‘আ স্পেল অব গুড থিংস’। এবারের বুকার পুরস্কারের বই বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় বিচারক হিসেবে জেমস শাপিরো প্রায় ১৫০টির বেশি বই পড়ার সুযোগ পান। তিনি বলেছেন, এই পাঠ তাঁর ভালো উপন্যাস চেনার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর মতো সাহিত্যের সব পুরস্কারের মধ্যে বুকার পুরস্কার হলো এভারেস্ট পর্বতের মতো।
ঔপন্যাসিক এসি এডুজিয়ান বুকার পুরস্কারের জন্য দু’বার সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত হন। এবার তিনি বিচারক প্যানেলের চেয়ারপার্সন। বিচারক প্যানেলে তার সাথে আছেন অভিনেতা, লেখক এবং পরিচালক আদজোয়া আনদোহ, কবি, প্রভাষক, সম্পাদক এবং সমালোচক মেরি জিন চ্যান; কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক এবং শেক্সপিয়ার বিশেষজ্ঞ জেমস শাপিরো এবং অভিনেতা ও লেখক রবার্ট ওয়েব। বিচারক প্যানেলের প্রধান এসি এডুগিয়ানের মতে, ১৩টি উপন্যাসই আমাদের সময়ে অস্তিত্বের অর্থ কী তা নিয়ে নতুন করে আলোকপাত করেছে এবং লেখকরা এটি মৌলিকভাবে ও রোমাঞ্চকর উপায়ে করেছেন।