পরকাল ভাবনা
আর. কে. শাব্বীর আহমদ
পৃথিবীতে কেউ কারো ব্যক্তিগত দুঃখের ভাগী হতে পারে না। মৃত্যুযন্ত্রণা একাই আমাকে, আপনাকে ভোগ করতে হয়। একাই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়। ধরুন, আপনার আমার পরিবারের সবাই আলহামদুলিল্লাহ শারীরিকভাবে ভালো আছে। মাঝখানে হঠাৎ আপনি আমি ক্যান্সার, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, স্ট্রোকে একাঙ্গ বিকলাঙ্গ হয়ে বিছানায় পড়ে আছি, মৃত্যুর আশংকায় ভুগছি। চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার মতো অঢেল টাকাও নেই। স্বজনরা দীর্ঘদিন আপনার আমার সেবা করতে করতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে।
এহেন অবস্থায় আপনার আমার যে একাকিত্ব ও হতাশাবোধের যন্ত্রণা, এটা আপনি আমি যেভাবে অনুভব করি, অন্যরা সেভাবে অনুভব করতে পারে না। আপনার আমার নিদারুণ নিরুপায় যন্ত্রণা আপনাকে আমাকেই ভুগতে হয়।
তাহলে আমরা কেনো ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা চিন্তা না করে বৈধ-অবৈধভাবে সুখভোগের জন্য পৃথিবীর মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ি? সুস্থ অবস্থায় আল্লাহর বন্দেগী করার, আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান আল কুরআনের আলোকে কেনো নিজেকে ও নিজের সমাজকে গড়ার জন্য সময় করে উঠতে পারি না? যদি পারতাম, অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকলেও মনে একটা সান্ত¡না থাকতো যে, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছি। দুনিয়ায় কষ্ট পেলেও পরকালে জাহান্নামের আযাব থেকে হয়তো আল্লাহ তাআলা রক্ষা করবেন। অনন্ত জীবনটা হয়তো সুখের হবে।
এমন একটা সান্ত¡নাবোধের কাজে যদি আমরা দুনিয়ায় আত্মনিবেদিত থাকি, তাহলে একাকী মারাত্মক ব্যাধির যন্ত্রণায়ও একটা বিরাট পুরস্কার পাওয়ার আশায় নিজের মনকে অন্তত হতাশা থেকে মুক্ত রাখা যাবে। কবরের জীবনে, কঠিন হাশরের ময়দানে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে সাথী হিসেবে পাওয়ার আশায় নিজেকে আশ্বস্ত রাখা যাবে।
দুনিয়ার মায়াজালে পড়ে আখিরাতের অনন্ত জীবনের সুখকে বরবাদ না করাই আমাদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আসুন, আমাদের বুদ্ধি-বিবেককে কাজে লাগাই। দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তা’আলাকে বন্ধু ও সাহায্যকারী হিসেবে পাওয়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখি। ব্যক্তিগত রোগ-যন্ত্রণা ভুলে থাকার জন্য নিজের ভালো ভালো কাজকে সান্ত¡না হিসেবে স্মরণ করি। একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।