শুক্রবার ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

কবিতা

খুশির নিমন্ত্রণ

হাফিজুর রহমান 

 

যে পথে পা বাড়ালে-ই পায়ে কাঁটা বিধে

সেই পথেরও পথিক হতে হয়, কাউকে খুশি করতে;

দেখাতে, ব্যথিত মনের এঁকে দেয়া - রক্তাক্ত পায়ের ছাপ।

 

বুঝতে পারা আর বুঝতে দেয়ার দুর্ভেদ্যে

মান্ধাতা আমলের অচল মানসিকতার 

পুরো সংস্কারের দায় এখন এ প্রজন্মের।

 

একেকজনের ইচ্ছে একেকরকম, বুঝতে পারা মুশকিল!

কেউ খুশি হয় দেখে, কেউবা অভিমান করে না-বুঝে

তাই, উপলব্ধি ভরাটে ফেলছে- স্বার্থের বর্জ্য।

 

শুধু তুমি দেখো নি

হাসান মাহমুদ

 

কতটা ভালোবেসেছি তোমায়

দেখেছে, আকাশ, গ্রহ,নক্ষত্র, চাঁদ, সূর্য, তারা

দেখেছে, জামরুল, গোলাপজাম, নাশপাতি 

ফুল, নিমেরপাতা; কতটা বিরহ করেছি

তোমার।

পেয়ারার ভেজাপাতা, একচোখে চেয়ে থাকা

নয়নতারা, দেখেছে আমার মাতম।

দেখেছে, সুবিল, জলপ্রপাত, হিমছড়ি, মিঠাপুকুর;

কতটা কেঁদেছি ঝরনার নীরব বয়ে চলার মতো।

 

সমস্ত সবুজ দেখেছে আমার বিবর্ণ হয়ে যাওয়া

দেখেছে, মসজিদ, মন্দির, সিনেগগ, প্যাগোডা

আল্লার দোহাই দিয়ে তোমার জন্য 

হৃদয় ঝাঁঝরা করেছি।

 

শুধু তুমি দেখোনি আমার পুড়ে যাওয়া-

 

অনুতাপ 

এম এ রহমান

 

একটি পুরনো পাপ ছায়ার মতোই পাশে হাঁটে 

বিছানায় শুতে গেলে সে সিথানে চুপচাপ বসে

আমার ঘুম আসে না; নির্ঘুম রাত্রিরা কাছে আসে

তাদের কাছেই বলি -সব কথা, যত ভয়, ব্যথা...

 

একটি পুরনো পাপ চোখের ভিতর ঢুকে যায়

জাগতিক সব রঙ মুছে ফেলে করে বর্ণহীন 

জীবনের স্বাদ-গন্ধ বিতৃষ্ণার বাতাসে বাতাসে

 

বুকের ভেতর অদৃশ্য পাথরেরা বড় হয়...

চাপা পড়ে যায় আমি, ভুলে যাই নিজেই নিজেকে

 

পাহাড়ের ঝরনা নদী হয়ে বয়ে চলে সমুদ্রের পথে...

 

মৌন দিনান্ত

নন্দিনী আরজু রুবী

 

ছায়া ছাড়িয়ে কখনো বাড়িয়েছি হাত,

দূরে পারাবার, আলোর সিন্ধু... 

আমার কাকভোর, ঘুঘুদুপুর,

সন্ধ্যা ছোঁয়া হলদেপেঁচা; এই তো দিনান্ত! 

 

এই তো জামরুল চোখে ধূসর বিষাদ গভীরতা, 

মন্থর তরঙ্গে স্থির অকালবেলা; ক্লান্ত পলক

গ্রহণের চাঁদ মেখে বুনোআঁধার। 

ছুঁতে চেয়েছে কেউ! জরাকাল, অসুখ স্নেহ

হয়তো মৃত্যু, বিদায়--

 

নির্দায় নদীর মতো উদাসীন

সববিহ্বলতা ভাসিয়ে দিয়ে, অগন্য ডুবো সন্ন্যাস

তখনো খোঁজে স্থানান্তরের সূচনা।

 

যা কিছু তুমি আনায়াস ভেঙে যেতে পারো...।

 

অনুতপ্ত মন

কনক কুমার প্রামানিক 

 

বড় জটিল সমীকরণ এ মানব জীবনের

মেলানো বেজায় কঠিন,

কভু তার হিসাব মেলে কখনো গরমেলে

শোধ হয় না জীবনের ঋণ।

 

সুখ মেলে কদাচিৎ বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে

লেনদেন চলে পার্থিব জগতের,

জীবনের হিসাব খাতাটা বড় অমিলে ভরপুর

কিছুতে মেলেনা না হিসাব এর।

 

পরকালের পুণ্যের খাতা বিশাল শূন্যে ভরা

রঙিন স্বপ্নে বিভোর সারাক্ষণ,

মত্ত জাগতিক তামাশায়, ডাকিনি প্রভু তোমায়

শেষ বেলায় এসে অনুতপ্ত মন।

 

এখানে স্বপ্ন উড়ে না 

মমিনুল ইসলাম মমিন

 

বাড়িটা আর আগের মতো নেই

মাকড়সার জালে কীট পতঙ্গের মতো ঝুলছে-

বাড়ির অস্তিত্ব, উঠোন জুড়ে ময়লার ভাগাড়

চারপাশে আগাছার উৎসব। 

 

অন্যপাশে দেখো স্যাঁতসেতে অন্ধকার

বাতাসে কী অদ্ভুত গন্ধ, 

সবুজে নেই বিশুদ্ধ অক্সিজেন 

এখানে স্বপ্ন উড়ে না - বিলুপ্তির ভয়, 

দোসর কুয়াশায় হাঁটে দুঃস্বপ্ন। 

 

চেয়ে দেখো, এখানে আকাশ ফুটো! 

বারোমাসি বর্ষা, 

সন্ধ্যায় ভেজা ওড়না উড়ে

পুরনো বাউল কাঁদে নিরবধি। 

 

আমি ভুলে গেছি স্বপ্নদিন

তোমার আঙুলের নরোম স্পর্শ

অতীতের যত সুখস্মৃতি

পুড়িয়ে ফেলেছি মায়ার শরীর। 

 

নির্মম আলো

কামরুল আহসান

 

প্রায়শ'ই গভীর খাদে পড়ে যাই;

নিচের দিকে তাকাতেই ভয়ে কুঁকড়ে উঠি,

যতদূর চোখ যায় কেবলই আঁধারের হাতছানি।

মাথার উপরে খেলা করে নির্মম আলোর বিচ্ছুরণ

ছুঁতে চাওয়ার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা..........!

কিন্তু অশরীরী অন্ধকার কেবলই টানে বুকের পাঁজরে।

আমি খামচে ধরি ভাগ্যের শরীর

একটু সদয় হও!

 

 

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ