রবিবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

জীবনঘুড়ির আকাশ দেখা

সাজজাদ হোসাইন খান

দিনে গনগনে রোদ, রাতে ঝলমলে জোসনা। চাঁদ আর সূর্যের খেলা। এই দেখতে দেখতেই যাচ্ছে সময়। আসছে সময়। সময়ের গলিপথে স্কুল, ইলিয়াছের ঘন্টা। বইয়ের পৃষ্ঠায় চোখের হাঁটাহাঁটি। এক তলা থেকে উঠে যাই দু’তলা। ঝরে পড়ে অষ্টম শ্রেণীর হলুদ পাতা। বছরও। নবম শ্রেণীর ক্লাশ সিঁড়ির মুখ বরাবর। বেশ বড়সড় কামরা। পাশেরটি দশম শ্রেণীর। নতুন ক্লাশে নতুন মেজাজে হৈ চৈ। মাসখানেক পার হলো তাইরে নাইরে। এরপর বড় বড় বই। বড় বড় চিন্তা। স্যাররাও ঘামে জবজব। তারপরও মগজ আউলা ঝাউলা। মাথার তালুতে গরম বাতাস। পড়া আর লেখায় চোখে মাথায় ঝিম ঝিম। ঘুম থেকে জাগতে না জাগতেই সময় ফুড়–ৎ। ক্লাশ নাইন যেনো অন্যরকম জগত। স্যাররাও মনে হয় ভিন্ন গ্রহের মানুষ। এক বিষয় বুঝাতে গিয়ে টেনে আনেন আরো তিন বিষয়। ইতিহাস ভূগোল বিজ্ঞান কি চমৎকার। পড়তে মজাই লাগে। ইতিহাস পড়াতেন গিয়াস স্যার। যেনো গল্প উপন্যাসের সবক দিচ্ছেন। হেডস্যারের অংক ক্লাশ। নিজের লেখা বই নিজেই ঘাটেন। আমরা শুধু স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকি। ভাবি এতো বড় বই তিনি কি করে লিখলেন। অংক ক্লাশ শুরু হলেই চোখে আন্ধার এসে উঠবস করে। যোগ-বিয়োগ করতে গেলেও প্যাঁচ লাগে। লাগলেই বা কি করা। অংক বিষয়টা আমার জন্য এক মহা তুফান। হেড স্যারতো বুঝিয়েই খালাস। কিন্তু একটু বাদেই তালাশ করলে সব হাওয়া। হালীম-মুহিবুর অংকে খুব তেজি। ভালো মার্ক পায় ওরা এ বিষয়ে। আমিই কেবল চিৎপটাং। চিৎপটাং হলেই কী আর চলে। তাই অংকের সংখ্যায় চোখ ঘষতে ঘষতেই সময় কাবার। আব্বা ভালো এ্যালজ্যাবরা জানেন। ঘরে আব্বাই অংক স্যার। তাই এ্যালজ্যাবরাই ভরসা। বাকি থাকলো যোগ বিয়োগ পূরণ ভাগ আর সুদ কষা। গোলেমালে দু’একখানায় সূর্য উঠলেই হলো। ভাবনা চিন্তা দাঁড়িয়ে থাকে সেখানেই। প্রথম সাময়িকির মুখোমুখি। অংকের দিন বুক থরথর। হালীম আর মুহিবুর জিজ্ঞেস করলো কিরে কেমন হলো। হাসতে হাসতে জবাব দিলাম ভালোইতো। ওদের চোখতো রাজভোগ। বলে কী! তোদের মতো ঢাঁশা পেয়ারা না পেলেও মনে হয় ডাব্বা মারবো না। ওরা দুজনেই হাসতে হাসতে বললো জিন্দাবাদ। এইতো চাই।

অংক স্যার আমাকে ডাকলেন। তার চেহারায় আনন্দের রক্তজবা। ক্লাশে আমার দিকে সবার নজর। আমিতো কাঁপছি। স্যার বললেন ভয়ের কিছু নাই। তুমিতো ভালো মার্কস পেয়েছো, বলে আমাকে খাতাটি দিলেন। শব্দ করে বললেন আটচল্লিশ কম মার্ক নয়। আসলেও আমার জন্য এ মার্ক অনেক। কোনো ক্লাশেই পঁচিশ ছাব্বিশ পার হয়নি। হালীম মুহিবুরতো খুশির দীঘিতে ডুবসাঁতার। খাতা খুলে দেখা গেলো সবগুলো এ্যালজ্যাবরাই সই সই। হাসি হাসি চেহারা। জ্যামিতির অর্ধেক আর অংকে কোনোমতে একটা। সবমিলিয়ে আটচল্লিশ। আর কি চাই। হালীম মুহিবুর বললো তোর আব্বাকে বাহবা দিতেই হয়। উনার জন্যেইতো তোর এমন মার্ক। একটা এ্যালজাবরাও ভুল হয়নি। কাটা পড়েনি। আমার চোখের তারায় তখন বৈচি ফুল টুপটাপ। এদিকে বাসায় ফুর্তির ফোয়ারা। বাসা বদলের খবর উড়ছে। যেনো প্রজাপতির রঙিন পাখা। অন্য সময় ব্যাপারটা ছিলো কাহিল কাহিল। চেহারা সুরতে ঝরতো ঘামের বন্যা। পেটপিঠ পানিতে জবজব। বাসা বদল এক মহাবিপদ আর কি। কিন্তু এইবার আর সেই বার নয়। কারণ যে বাসায় যাচ্ছি সেই বাসা অনেক বড়। এখনকার বাসা থেকে প্রায় তিনটার সমানতো হবেই। নতুন তৈরি। আমরাই প্রথম। বলতে গেলে নর্থব্রুক থেকেও বড়। ফকফকা। ভিতরটায় মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ। সামনে বিশাল ময়দান। এ দালানের নাম নাকি ডি টাইপ বিল্ডিং। এই জাতিয় দালান এই শুরু। এই কলোনীতে। আমাদেরটার নম্বর ছিলো ডি-২। ডি-১ এ থাকেন হামিদ সাহেব। তিনি পিএমজি। আব্বা জানালেন তিনি নাকি ডাকবিভাগের বড় কর্তা। ডানপাশে টিএন্ডটি স্কুল-কলেজ। এরপরই ফকিরের পুল। পিছনটায় ঢেউ খেলানো দিঘি। সেখান থেকে উড়ে আসে বাতাস। ঠান্ডা শীতল। সামনেও বাতাসের প্রজাপতি মাঠজুড়ে। এ জাতিয় দালান নাকি বড় সাহেবদের জন্য। নতুন বাসায় এসে মনের বনে আনন্দের চড়–ইভাতি। আম্মার মেজাজও ফুরফুরে। বলতে গেলে খুশিতে ঝিকমিক চোখের তারা সবার। নতুন বাড়ি নতুন দালান মেজাজতো ফুরফুরে হবারই কথা। 

পিটি এন্ড কলোনীতে একটা মাত্র ডি মার্কা দালান। তাই নম্বরটি এক। এই এক নম্বর দালানের দুই নম্বর বাসার বাসিন্দা আমরা। সাত নম্বরে ছিলাম দু-তলায়। এখানে মাটির কাছাকাছি। নিচতলায়। (চলবে)

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ