শুক্রবার ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

কবিতা

রাত্রি মা

আবদুল হাই শিকদার

 

আমি আসলে দিন ভালোবাসি। 

ঝকঝকে তকতকে লেকের কেয়ারী,

পদ্মার ওই পার ধুধু চোখে বালুর ফেরারী। 

 

ফুরফুরে হাওয়া আর গাছের স্পষ্ট পাতা

যদিও দূরাগত ঝিমুনি সরবরাহ করে,

তবুও আমি হলফ করে বলতে পারি,

হিজল গাছের উঁচু ডাল থেকে

খালের পানিতে লাফিয়ে পড়ার স্বাদই আলাদা!

 

এতো কিছুর মধ্যে বাইনোকুলার সে সরিয়ে দেয়। 

এতো কিছুর মধ্যে মাইক্রোবাস সে সরিয়ে দেয়। 

এতো কিছু মধ্যে কমপিউটার স্ক্যানার সে সরিয়ে দেয়। 

 

আর আমার চোখ জোছনার জন্য 

মাথা কুটে মরে বেলা দশটায়। 

দস্তানার রহস্যের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দেহ বলে,

-দ্যাখো তো আমায় চিনিতে পার কি না?

 

কোলাহলের কামড়ে নির্জনতা যতো ফালি ফালিই হোক,

কিন্তু আমার মন পড়ে থাকে রাত্রি মার উঠানে। 

সেইখানে বেঙ্গমা বেঙ্গমী,

লালকমল নীলকমল জাগে। 

-আর রাত্রি মা আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। 

 

সুন্দরের গান

সায়ীদ আবুবকর

 

কে আর গাইতে পারে, আমি ছাড়া, তোমার প্রশস্তি

এত মিষ্টি করে? হায়, কে বা জানে এত মিষ্টি ভাষা!

আকাশপারের কোন্ তারা বলো, যেন জলহস্তি,

এভাবে বুনতে পারে অশ্রু  দিয়ে বাবুই-এর বাসা?

 

জানি তুমি সুবিশাল, সীমাহীন তোমার রাজত্ব;

তোমার আদেশে ঘোরে কোটি কোটি সুপার ক্লাস্টার

নক্ষত্র নেবুলা নিয়ে কোটি কোটি; কিন্তু এ-ও সত্য,

আমার হাতেই শুধু বেজে ওঠে সুরের সেতার।

 

কেমন বাজাতে পারি, শোনো তুমি এ বীণার সুর;

আমার এ সুর শুনে মহাবিশ্ব কাঁপে থরথর,

চোখের পলকে রাত হয়ে যায় ভয়েতে দুপুর

কারণ বলেছি আমিÍ‘বিশ্বে শুধু তুমিই সুন্দর’।

 

তুমি যে সুন্দর এত, আমি ছাড়া জানে তা ক-জন?

সুন্দরের সেই গান গাই আমি, শোনো দিয়ে মন।

 

বুকের সড়কে

আমিন আল আসাদ

 

একদা এক অনিশ্চয়তার বিষণœ সুর

শিরদাঁড়ায় অস্ফুট ভয়ের শীত শীত কম্পন

অবিরাম অবিরত ফুসে ওঠা নদীর কোলাহল ছিলো

অবারিত ময়দানে বসবাস

সফেদ ডানা ঝাপটানো অসংখ্য ভোর

অতিক্রান্ত অন্ধকার কালের প্রপাত

পরিশেষে জেগে ওঠা সোনালী প্রভাত

মেঘনার বুকে ডিম্বাকৃতি ধুসর বালুচরও একদা,

 

অথচ এখন শুধু বুকের সড়কে

অনবরত বাস ট্রাক লড়ি টেম্পো

কালো ধোয়া কার্বনমনোক্সাইড।

 

কুতুব মিনারের জন্য 

নোমান সাদিক 

 

আকাশ যে ছুতে চায় মাটি ছেড়ে যেতে হয় তাকে

অথচ আকাশে তুমি বাকি নেই মাটিও ছোঁয়ার

 

কয়টি পাথরে গড়া? নথী লেখে ইতিহাসবিদ

প্রতিটি পাথরে তারা দেখেনাই সাগর সম্ভার

 

তোমার পাথরগুলো সেটে আছে গাঢ়তর প্রেমে

যে প্রেমের ভাষ্যটিকা দিতে আজো ভাষা নির্বিকার

 

সুরকি পাথর শুধু দিয়েছিল কুতুবউদ্দিন 

কী নিখুঁত কারিগর গড়ে দিল ইশক মিনার

 

কুতুব ঘুমায় আজ সর্বভূক মাটির করালে

দিল্লির চত্ত্বরে তুমি অক্ষত হৃদপি- তার

 

সুলতানি নেই আজ। ইতিহাস ছাপা হয় প্রেসে

ভবিতব্যের পথে তুমি আজো অক্লান্ত সওয়ার

 

রাত্রি ক্রমশ বাড়ে ঢলে হবো ঘুমের বেহুশ

জেগে রবে তুমি যেন ছায়া কলন্দরের আত্মার।

 

 

শূন্যের সুড়ঙ্গে

গাজী গিয়াস উদ্দিন

 

লাখো সংখ্যার উপচানোতে

শূন্যের সুড়ঙ্গে ঊর্ধ্ব সোপান,

শুভ্র দেখাও পথ-শোনাও স্লোগান।

 

এ হৃদয় দোলাচলে যোজন খেলা করে

পূর্ণতায় আনন্দের একভাগ দাও ভালোবাসা,

এ জগৎ- এ জীবন চারপাশে ঘূর্ণে বিপাশা।

 

শিখি যদি বহুপদী সংখ্যার সঙ্গোপন ভাষা

হারিয়ো না পথ- জানো মন ধন ভালোবাসা।

 

কুসুম সাঁতার

শওকত আলম

 

অবসরে চোখবুলি ফেসবুক বই,

মহারাজ কবিদের মুনিরূপ হই ।

ছায়াবীথি হিমগিরি তারার বহর,

আঁকিবুঁকি ইলহাম বাঁকের নগর।

 

প্যাথলজি অরগ্যান গোলোক ধাঁধাঁয়,

আমাজন রূপবান বিজ্ঞান শাঁখায়।

পাঠদানে ইতিহাস মগজ কাতর,

বারুদের বিভিশিকা মমির পাথর।

 

গোলদারি টিকটক পূর্ণিমা স্বপন,

ভূতের গল্প তপন ছড়া ফিকশন।

 

কবিতার রাজবাড়ি কুসুম সাঁতার,

বউ-মেলা খুনোখুনি পলোক আঁধার।

নয়কুড়ো ভোর হয় জ্ঞানের সাগর,

আটঘাট শানবাঁধা স্বর্গের আসর।

 

 

স্বপ্ন

আবুল খায়ের বুলবুল

 

আজও স্বপ্ন দেখি ঘুম নির্ঘুমে

আশায় বেঁধেছি বুক

যতোবার গিয়েছি যে হেরে

হারাইনি আজও সুখ।

 

হৃদয় বাগে ফুল ফোটাতে

দিয়েছি কতো  জল

দিন প্রতিদিন যতœ নিয়েও

আসেনি কোন ফল

ভেঙে পড়ে যাইনি তবুও আমি

শুকে যায়নি এ বুক।

 

কতো কথা অকথার তুড়িতে যে

ফেলেছি অশ্রুজল

দিকভ্রষ্ট হইনি তবুও এই যে আমি

শুনেছি পাখির কোলাহল

নিন্দায় থেমে যাইনি কখনই আমি

বিজয় আশায় বেঁধেছি  বুক।

 

সেঁজুতি

সাজু কবীর 

 

ঝিল্লিমুখর সন্ধ্যায়

কোন বন্ধ্যাত্ব নেই আর,

জমাটবাধা গোধূলি যখন আঁধারে মিলে যায়

এক অপার্থিব আলো হাতছানি দেয়

জ্বলে ওঠে নিরালায় তোমার সন্ধ্যামালতী

যেন দুখের ভিটেয় উজাল সেঁজুতি--- 

 

তুমি সুখী হলে , জেনো, এ আমিও সুখী।

 

বিবেকের দর্শন

হাফিজুর রহমান

 

অপলক দৃষ্টির অসংখ্য চোখ

স্থির হয়ে চেয়ে থাকে আমার দিকে!

রাত নেই, দিন নেই, ঘুম নেই আকাক্সক্ষার চোখে -

ক্লান্তি নেই, সন্ধ্যা সকালের পালাবদলে। 

 

আমি আড়াল হতে পারি না সে দৃষ্টির

ঘিরে রেখেছে চারপাশ, সূর্যের আলোর মতো;

শীতলতা ছড়ানোয় - বৃষ্টির জলের মতো 

ক্ষুদ্র-ছিদ্র হলেও গড়ায়, অন্তরের দুর্গম অন্দরে।

 

জয়পুরহাট 

রেজা কারিম 

 

জয়পুরহাট 

যতদূর চোখ যায় ফসলের মাঠ

ট্রেনে বসে প্রকৃতিকে করে যাই পাঠ

সবুজের বনে কোনো নাই বিভ্রাট।

 

ধান, পাট, কলাসহ কত শস্য

যতই বলি না কেন হবে হ্রস্ব 

খেজুর ও তাল গাছ রয় সারি সারি 

উপমা দেবো কি আছি উপমার বাড়ি।

 

রেলওয়ে বয়ে গেছে কত মাঠ মাঝে

দুইধারে বিস্তৃত মাঠগুলো সাজে

মাঠের শেষেতো ঐ মানুষের নীড়

অবাক নয়নে দেখে কত মুসাফির। 

 

ঘাস ফুল লতা পাতা ফলের বাগান

সবুজের সমারোহ প্রভু মহীয়ান

মাঠজুড়ে পশুদের কী যে বিচরণ 

মহাসমাবেশে যেন মহা আলোড়ন। 

 

জয়পুরহাট 

এ দেশের বুকে যেন সবুজের হাট।

 

যে যার মতো 

মান্নান নূর

 

তোমার আত্মায় যখন সুখ

তুমি আপ্লুত হয়ে পৃথিবী দেখ। 

পাখিরাও তোমার হয়ে গায় 

সবুজ ভঙ্গিমায় পুচ্ছ তুলে নাচে। 

নীলবসনা আকাশ নারী! সবুজ প্রেম বিলায় 

ভালোবাসার আদর লুটে-মুঠি মুঠি মিহি রোদ

তুমি স্বপ্নে দেখ পৃথিবী তোমার স্বর্গসম ভূ-বাসর -

 

তোমার আত্মায় যখন বিষাদ

তুমি আপ্লুত হয়ে পৃথিবী দেখ 

বিরান বিষাদে ভরা,আগুনে পোড়া।

পাখিরা তোমার হয়েই করুণ কণ্ঠ পাতে 

বর্ষা হয়ে রোদন করে তরতাজা গাছেরা

সবুজ নীল বেদনায় নাচে , যেন -

পুড়ে যাওয়া আমাজান বন, মরু সাহারার হাহাকার বুকে 

সবুজ বিরহ লুটে, বেদনার যাতনায় জাগে 

সাতরঙা ধনু, মুঠি মুঠি রোদ -

এই তুমিই দু‘চোখে দেখ 

স্বর্গসম পৃথিবী-‘নরক যন্ত্রণাময়।

 

 

সুরের মূর্ছনা

শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম

 

এক সুরের মূর্ছনা অনিবার এসে;

হৃদয় দরিয়াপার সর্বদা ধসে!

রাতে ঘুম ফেঁসে যায় কাজরীর গানে;

এমন ব্যাকুল কে গো শান্তি নাই প্রাণে?

 

আমারে সে দিয়েছিল দুটি চোখ বেঁধে;

কানামাছি খেলা বলে আজো উঠে কেঁদে!

এমন নীলাভ চোখ দুটি কথা বলে;

হে নীলাদ্রি এসো এই গগনের তলে!

 

স্কাইলাইটের আলো শহরের পথে,

জোনাকির চলাফেরা পল্লীর জগতে!

তুমিও সেই রকম সব পরিবেশে;

আলোকিত করো তাই কত ভালোবেসে।

 

হেঁটে চলো মরুগিরি ঢের মেঠোপথে;

চেতনারে সাথে নিয়ে আঁধার জগতে!

ব্যর্থ প্রত্যয়ে তুমিই জ্বালিয়েছ আলো;

কবিতা ও গান লিখে দিন কাটে ভালো।

 

সুরের মিতালী আসে নাই অবসাদ;

করে আজ অঙ্গীকার কাঁধে রেখে কাঁধ!

চকিত প্রিয়ার সেই অপলক দৃষ্টি;

হৃদয় আকাশে ঝরে অঝরেতে বৃষ্টি!

 

কষ্ট 

মোহাম্মদ নূরুল্লাহ

 

কষ্ট মাপার 

কোনো মাপকাঠি 

যদি তৈরি হতো!

মাপতাম যতো খুশি

নিজের ইচ্ছে মতো!

 

কে সে বিজ্ঞানী?

যার জন্ম এখনও হয়নি?

এ ধরার মাঝে? 

 

কষ্টের ড্রামগুলো উপচে পড়ছে, 

সেই কবে থেকে? 

 

আগুন পাখি 

মোহাম্মদ ইসমাইল 

 

বুকের ভিতর ভালবাসার একটা আগুন পাখি.... 

নিতান্তই একাকী;

তোর রাজমহলের স্বপ্ন নিয়ে যেন হাওয়ায় শুধু উড়ছে!

আমাদের জীবনের সময়টা তাইতো বুঝি এখন

তোর দ্রোহের আগুনে শুধু পুড়ছে!!

 

 

কোরবানি

কাজল আক্তার নিশি 

 

ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা আসে দুয়ারে 

বাজে খুশির সুর,

মনের পশুত্ব করিতে দূর 

কোরবানির ওই মহান দীক্ষায়

দিতে হবে জোর।

 

নবী রসূলগণের অনেক অনেক 

ত্যাগ মহিমা বাণী, 

খোদার খুশিতে রাজি দিতে

নিজেকে কোরবানি। 

 

মহিমান্বিত ওই ত্যাগের খবর

আসে জিলহজ্জ মাসে,

ঈদুল আজহার খুশির জোয়ার 

পরতে পরতে ভাসে।

 

সকল মুসলিম মহামিলনের মহাপথ

ওই পবিত্র মক্কাতে

পেছনের পাপ ধুয়ে মুছে যায়

কাবা জিয়ারতে।

 

আজি এসো সব পঙ্কিলতা দেই দূর করে 

কোরবানির ওই খুশির আমেজ, 

আসে যেনো ধ্বনি গরীব সকলের ঘরে। 

 

হৃদয়ের আর্তনাদ

নাঈমুল হাসান তানযীম

 

কখনও কখনও হৃদয়ের আর্তনাদ শুনি আমি।

আহত পাখির ছটফটানির মতো তড়পাতে থাকে হৃদয়পাখি

মনে হয়

সব হারানোর কান্নার সাথে সাথে

জখমি হৃদয়ের শরীর বেয়ে ঝরে পড়ছে

ফোঁটা ফোঁটা রক্ত।

আসলে স্বপ্ন মরে গেলে

জীবনের আর কোনো মানে থাকে না

হৃদয়ের তুমুল রক্তক্ষরণে

একসময় নিশ্চল নির্জীব হয়ে পড়ে

আগামীর পথচলা।

মরে যায় বেঁচে থাকার ইচ্ছে,

জীবনের প্রকৃত স্বাদ যখন হারিয়ে যায়

তখন নিরর্থ এই বেঁচে থেকে

পৃথিবীকে বোঝা বানাবার কী মানে...!

 

অপেক্ষা 

রতন ইসলাম 

 

তুমি ছুঁয়ে গেছো হৃদয়ের শেকড় 

চাইলেই কি তোমায় ভোলা যায়? 

শুধু তোমার অনন্ত অপেক্ষায় 

ডুবে থাকা যায় অনন্তকাল 

তোমার মেঘ-রোদ্দুর লুকোচুরি 

বিরক্ত নয়;

ভালোবাসা দিয়ে উপভোগ করতে হয়।

 

শূন্য ফুলদানি 

সাহেব মাহমুদ 

 

তোমাকে ভেঙে ভেঙে নিজেকে গড়তে চেয়েছি অনেকবার, 

আঙিনা জুড়ে পড়ে আছে হাড়গোড় অস্থিমজ্জা।

 

হাত ধরে খেলা করছে ঝিনুকের খোলস মেলেনি মুক্তার দানা।

 

ফুল তুলতে তুলতে কখন যে সেজেছি মালি

তবুও শূন্য রয়ে গেলো ফুলদানি।

 

বৃষ্টিতে ভেসে গেছে 

রাজীব হাসান

 

তুমি ছেড়েছিলে যেদিন এ শহর

আমি ভিজেছিলাম বৃষ্টিতে

সাথে ভিজিয়েছি আমার এই দুচোখ

যা বৃষ্টির পানিতে মিশে একাকার

কোনটা বৃষ্টি আর কোনটা চোখের পানি

তা বোঝার সাধ্য ছিলো না কারো।

 

এই ভেজা শহরে ধুয়ে গেছে চোখের পানি

সাথে নিয়ে গেছে তুমি নামক

যতেœ গড়া ভালোবাসার মানুষটাকে

যে মানুষটা বলেছিলো একদিন হাত ধরে

আমি ছাড়া তার আর কেউ নেই

তবে আজ নিয়তির এই করুণ খেলায়

সব আছে শুধু আমি নেই তার জীবনে।

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ