বিনুর লাল গরু

মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান
বিনুর বয়স এগার ছুঁই ছুঁই। এই বয়সে অনেক খ্যাতি ও সুনাম তার নামের পাশে। বাবা বলেছে- বুদ্ধিমতী মেয়ে। যাই হোক, বিনুদের গ্রামের নাম ঘোগারকুটি। আর গ্রামের দৃশ্য বলতে গেলে সত্যি অবাক করার মতো। আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ, সুফলা-সুজলা শস্যশ্যামল আরো কতো কি? প্রতিবছর কুরবানি এলে বিনুর বাবা তাদের খামার থেকে কয়েকটা মোটা তাজা গরু বিক্রি করে। একদিন বিনু তার বাবাকে বলল- আচ্ছা বাবা, এবার তো ঈদ ঘনিয়ে আসতে আর বেশি দিন নেই! তুমি আমার পছন্দের লাল গরুটা বিক্রি করবে না। আমি প্রতিদিন লাল গরুটার জন্য কাঁচা ঘাস ও খড় দেই, অনেক যতœ করি। কারণ লাল গরুটা আমার বেশ পছন্দ! তাই আমি ওটাকে বড্ড ভালোবাসি।
বিনুর কথা শুনে বাবা বেশ মুশকিলে পড়ে গেল। বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল- এবার নাকি লাল গরুটাসহ আরও দুইটি গরু বিক্রি করে দিবে। তাই মায়ের সাথে বাবা একটু গোপনে পরামর্শ করল। কিভাবে বিনুকে সান্ত¡না দিবে? তাছাড়া বিনু তো কোনো কিছুতে হার মানার মতো মেয়ে নয়! এদিকে বাবা বিনুকে না জানিয়ে তার পছন্দের প্রিয় লাল গরুটাকে বিক্রি করে দিল। তখন হলো এক সর্বনাশ। বিনু ঘটনাক্রমে জানতে পারল। বাবা আর বিনুর মধ্যে একটা ছোটখাটো সংগ্রাম বেঁধে গেল। পাড়াপড়শিরা ছুটে এলো। ব্যাপার কী? বিনুর মা সব ঘটনা খুলে বললো। এবার কারো কিছু বুঝতে বাকি রইল না।
এদিকে বিনুর মন খারাপ। কোনো মতে সে আর মা বাবার সাথে কথা বলবে না। তাছাড়া কথা বলবে বা কিসের জন্য? তারা তো সবাই মিলে বিনুকে ঠকিয়েছে। বাবার চিন্তার শেষ নেই! পরিশেষে একটা বুদ্ধি বের করলো। যেহেতু বিনুর লাল গরুটার প্রতি গভীর ভালোবাসা জন্মেছে: তাই বাজার থেকে একটা লাল জামা কিনে আনলো। আর বিনুকে লাল জামাটা উপহার দিয়ে আবারও সান্ত¡না দিল। অবশেষে মা বলল- বিনু মা আমার, চিন্তা করবার কিছুই নেই! আগামী কুরবানি আসার আগে তোমাকে একটা লাল গরু কিনে দেওয়া হবে...! যা কখনো বিক্রি করে দেওয়া হবে না। এতে বিনু কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেল। তবে ঘনিয়ে এলো ঈদ। বিনু এবার ঈদে লাল জামা পরবে। আর হাতে পায়ে আলতা মেহেদি রাঙ্গিয়ে কুরবানির ঈদ আনন্দ উপভোগ করবে।