কবিতা
প্রগতির টিয়ে
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
একদিন মাটিতে বোধের শক্ত দেয়াল ছিলো
সেই দেয়ালে কোনো শেওলা ছিলো না
সচেতন ঘাস, লতাগুল্ম আনমনেই বড় হতো
সেই দেয়ালটি এখন কোথায় গেলো..?
উড়োচিঠিতে যে মেয়েটি ভালোবাসি লিখেছিলো
সামনাসামনি দেখা হতেই সে লজ্জাবতী লতা হলো
তখন সামাজিক দালান বোধ চীনের প্রাচীর ছিলো!
এখন একদিনে প্রেম হয়, দুইদিনে বিয়ে
তিনদিনে ভালোবাসা নিয়ে যায় প্রগতির টিয়ে!!
কিছু স্বপ্ন
রবিউল রতন
এই চোখ দিয়ে সব দেখা যায়
সুনীল আকাশ, ছোট এক ভদ্র নদী-ঢেউয়ের ভাঁজে নূপুরের শব্দ;
পাখিদের ওড়াউড়ি-গহিন অরণ্যের জ্যোৎস্না,
কিন্তু সবকিছুই যে পাওয়া হবে-এটা ঠিক নয়!
কিছু না পাওয়ার বেদনা থেকে যায় সমুদ্রের মতো!
পৃথিবীর মতন বিশাল!
অন্ধের মতো অদৃশ্য আগুনে পুড়ে নিভে যায় যাপিত চোখ,
কিছু কিছু ভালোবাসা বশ হয় না জীবনে!
অনাকাক্সিক্ষত ঝড়ে প্লাবিত হয়-রক্তক্ষরণে পাহাড় ধসে পড়ে!
কেউ কাঁদে কেউ হাসে।
অবশেষে এই জীবন দু'মুঠো ঘাস।
কেউ জ্যোৎস্নার নেশায় বিকিয় দেয় স্থাবর- অস্থাবর!
তবু সুখপাখি হয় না আপন-সমুদ্র ফেরে না ঘরে,
মাটি ক্ষয়ের মতো অদৃশ্য জীবনের পথ!
তীব্র জ্বর হয়-চোখের দ্যুতি নিভে ঝরে যায় প্রেমিক ফুল,
কিন্তু কিছু স্বপ্ন কোনোদিন ফেরে না ঘরে।
একটি বটবৃক্ষ
মুনির শফিক
মধ্যদুপুর, তীব্র রইদ।
একটি বটবৃক্ষের কীর্তনে
পথচারী লোক, মাঠে চইড়া খাওয়া পশু
ডানা ঝাপটানো পাখি কৃতজ্ঞতা আদায় করে।
ছোটো-ছোট ডাল,
কচি কচি পাতার
ছায়ায় হৃদয় সিক্ত হয়!
বাবাও একটি বটবৃক্ষ
স্বচ্ছ কর্ম, ক্লান্তিহীন শ্রমে-
সমাজে বিশাল হইয়া দাঁড়ান।
ডাল-পালা হলাম আমরা সন্তান
ইয়াকুব, শওকত, নওশিন।
যখন বটবৃক্ষ খসে পড়ে-
ডালপালার শুরু হইয়া যায়
বিপর্যয়!
মুখোশ
সোলায়মান জয়
ছায়ার গভীরে যে সত্তা
তার অন্তরালে আমার মুখোশ
রাজস্ব খাওয়ার মতো ক্ষুধার্ত আমার চোখ
ছায়ার বর্ণনা নিয়ে অন্ধকারের ছবি আঁকে আকাক্সক্ষা
ফরেন্সিক ল্যাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে
ছায়ার রক্তে পাওয়া যায় প্রচ- ঘৃণা, ক্ষোভ-
পাওয়া যায় লোভ থেকে উচ্চ ক্ষমতার দাবানল।
হাসিমাখা জনদরদী মুখ আমার প্রকাশ্যে
সত্তা আমায় দেখে যে হাসি হাসে
সে হাসি বন্দি করে রাখে মুখোশ
আমার পায়ের ছায়ায় হাজার সত্তা খুন হয়
মুখোশের সাহায্যে গুড়িয়ে দিই অতশত।
নিদ্রায় গেলে ঘুম আমার স্বপ্নে ঢেলে দেয়
যত মনুষ্যত্বের জল
ঘুম ভাঙতেই সে সব জল চুষে নেয় মুখোশ।
বৃষ্টি
তাসনীম মাহমুদ
সৈনিকের জীবন হলে প্রতিটি বারুদের
গন্ধকে আমি আলাদা করে চিনে নিতে পারতাম
স্মোকার হলে পুড়ে যাওয়া ছাই দেখে
বলে দিতাম ব্রা- নেইম। যদি ঘাস ফড়িং হতাম
শিশিরে জানিয়ে দিতাম কুয়াশার ভালোবাসা।
জোনাই হলে বলতে পারতাম অমাবস্যায়
অন্ধকারে রঙিন দ্যুতির রোমাঞ্চকর প্রেমের গল্প।
যদি হতাম পাফিনের ঠোঁট বাতাসের হৃদয় ঠুকরে
বলে দিতাম শূন্যের সীমানা আর রাজনীতিবিদ
হলে বলতাম: ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কেমন হয়’!
আমি তো ফুল নই যে সৌরভের রহস্য বলে দেবো
আমি তো মৌমাছি নই যে চাকের ঘর বুনে দেবো।
আমি বৃষ্টি বিলাস প্রেমিক; বলে দিতে পারি
ঝরে পড়া প্রতিটি ফোঁটার টুপটাপ শব্দের
আকুলিবিকুলি আর চিনে নিতে পারি প্রতিটি ফোঁটায়
প্রতিটি ফোঁটার মিলে যাওয়া জীবনের বিবিধ গান!
একটি নাম
সাহেব মাহমুদ
নান্দীপাঠ কখনো হয়ে যায় কবিতার ডাকে,
কে জানে মনের খাস নদীর কোন বাঁকে।
মহাকাশ ডুব দিয়ে যায় নৈবেদ্য মায়ায়,
আঁধারে বসে রোদের ফুল হাসে
হাজিরা খাতায় সকলেই কবি নয় কেউ কেউ হয়ে যায়।
রহস্যময় সুন্দরী দ্বীপ
যেমন বৃষ্টি ঝরছে তেমন শব্দ শিকারী ছিপ,
কালের কলসে উথলে ওঠে নীলমণি বুদবুদ,
সোনালি কাবিনে লেখা পড়ে একটি নাম আল মাহমুদ।