শুক্রবার ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

পরীর সাথে কিছুক্ষণ 

মাহমুদা সিদ্দিকা 

আব্বা আব্বা আমি মিষ্টি খেয়েছি। কে দিল মিষ্টি তোমাকে আম্মু?  পরী দিয়েছে আব্বা। তাহমিনার কথা শুনে আব্বা তো অবাক। পরী কোথায় পেলে মামণি?

ঐ তো বাড়ীর পিছনে। আমার ছোট বোন তাহমিনা আব্বার সাথে কথা বলছে। 

তাহমিনাকে পরীরা প্রতিদিন মিষ্টি খাওয়ায়। এই ঘটনা নিয়ে বিরাট আলোচনা চলছে। পরী কোথায়, কিভাবে ওকে মিষ্টি খাওয়ায় আল্লাহই ভালো জানেন। বিশ্বাস করতে পারছি না আবার অবিশ্বাস ও করতে পারছি না। প্রশ্ন করলে শুধু হাসে। মিষ্টি খেয়ে মুখ মুছতে মুছতে বাড়ি আসে। 

আমাদের বাড়ির পিছনে বাঁশবাগান আছে। হঠাৎ হঠাৎ তাহমিনাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করলে বাঁশবাগানের এদিক থেকে দৌড়ে এসে হাজির হয়।

সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। পড়াশোনায় বেশ মেধাবী। হাতের লেখা মনে হয় টাইপ করা এতো সুন্দর। 

এমন একটা মেয়েকে নাকি জীন-পরী ধরেছে।

সে যখন তখন হাসে। পান খায়। লক্ষণ অস্বাভাবিক। একদিন দুপুর বেলা তাহমিনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার উপর দায়িত্ব পড়ল খুঁজে আনার। এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে পাড়ার শেষ মাথার বাড়িতে ঢুকেছি। এমনি দেখি মুখ মুছতে মুছতে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। বললাম ওদিকে কোথায় ছিলি? ও রেগে গেলো কোথাও না। ঐ যে ঐখানে। তা কি করছিলি ওখানে? অনেকক্ষণ হলো তোকে খুঁজে পাচ্ছি না। সারা পাড়া খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে শেষে এখানে এসেছি। বল কি করছিলি ওখানে? বললাম তো কিছু করিনি আমি। ওরা আমাকে মিষ্টি খাওয়াবে বলে ডেকে নিয়ে গেল। ওরা কারা? তাহমিনা : আমার পরী বান্ধবী। আচ্ছা ভালো কথা কই মিষ্টি দেখি? নাই খেয়ে ফেলেছি শেষ।  আচ্ছা বাড়ি চল। আব্বা আম্মা তোর জন্য বসে আছে। আব্বাঃ মা তোমাকে কে মিষ্টি খাওয়ায় আমাকে বলো। তাহমিনা : আব্বা ওরা আমার বান্ধবী। তিন পরী। অনেক সুন্দর জামা পরে আসে। আমাকে এমন জামা কিনে দিতে হবে।  আব্বা : আচ্ছা দিব।

সামনে পরীক্ষা। তাহমিনা বায়না ধরেছে পরীর মতো পরী জামা কিনে দিতে হবে। না হলে কিছুতেই পরীক্ষা দিবে না। আব্বা মার্কেট থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে পরী জামা এনে দিয়েছে। কিন্তু ওর পছন্দ হয়নি। রেগে আগুন। পরী বান্ধবীদের সাথে এই জামার কোনো মিল নাই। ওর পরীদের মতো জামা চাই। শহরের বড় মার্কেট থেকে আবার আনা হলো জামা।

সেদিন মাগরিবের সময় তাহমিনা পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে পাটি বিছিয়ে বসল। বসে তার সামনে তিনটি পান সাজিয়ে রাখল। আম্মা বললেন, এই তিনটি পান কার জন্য তাহমিনা? 

তাহমিনা :  আমার পরী বান্ধবীদের জন্য। ওরা এখনি আসবে। এসে পান খাবে।

তাহমিনা দরজার মাঝখানে বসে আছে। আমাদের কাউকে এদিকে আসতে দিচ্ছে না। ওর বান্ধবীদের গায়ে যদি পা পড়ে এই জন্য। 

একটু পরে দেখি ওর চোখ মুখ অন্যরকম হয়ে গেছে। আমাদের সাথে কথা বলে না। অনেকটা সময় এভাবেই কেটে যায়। পরিবেশন করা পানগুলোও নাই। তারপর ঘুমিয়ে পড়ে। এভাবেই দিনের পর দিন পার হচ্ছে। ঠিকমতো খায় না। পড়াশোনায় মনোযোগ নাই। এসব দেখে আব্বা আম্মা চিন্তিত হয়ে পড়লেন কি করা যায়। তারপর পরামর্শ করে কবিরাজ আনা হলো বাড়িতে।

কবিরাজের নাম লতু মুন্সি। আসল নাম লুতফর মুন্সি। লোকে ডাকে লতু মুন্সি বলে। সবাই এই নামেই তাকে চেনে। কবিরাজ জবা ফুল আনতে বললেন। তারপর ওকে কবিরাজের সামনে আসন করে বসানো হলো। জবা ফুলটা তাহমিনার দুই হাত জড়ো করে তার উপর রাখলেন। তারপর উনি বিড়বিড় করে কি কি যেনো পড়লেন! কবিরাজ তাহমিনার কনিষ্ঠ আংগুল বেঁধে ফেললেন। আঙ্গুল বেঁধে ফেলার সাথে সাথেই পরীরা এসে ভর করল ওর উপর। ওর চোখের চাহনি মুখের ভাব পাল্টে গেলো। 

কবিরাজ প্রশ্ন করা শুরু করলেন। বল রোগীকে কোথা থেকে ধরেছিস?

পরী : তালগাছের নিচ থেকে। 

কবিরাজ : কেনো ধরেছিস?

পরী : আমাদের চলার পথে ও বসেছিলো, তাই ধরেছি।

এক্ষণি চলে যা।

পরী : রোগীকে নিয়ে যাবো।

কবিরাজ : না। রোগীকে ছেড়ে দিতে হবে। বল ছেড়ে দিবি?

বলেই কবিরাজ তাহমিনার দুইপাশে বিছানায় আঘাত করতে থাকল।

কেঁদে উঠলো পরী।

আর মেরো না। উহ!ব্যথা পাচ্ছি! আর মেরো না। দয়া করো।

সপাং সপাং আঘাত করছেন কবিরাজ তাহমিনার দুই পাশে বিছানার উপর। 

এবার চিৎকার করে কেঁদে উঠলো পরী।

আর মেরো না! সহ্য করতে পারছি না! কষ্ট হচ্ছে!উহ! বাঁচাও! সমানে কান্নাকাটি শুরু করছে।

কষ্ট হলে রোগীকে ছেড়ে চলে যা বললেন কবিরাজ। 

যাবো বলছি।

কবিরাজ : আর ফিরে আসবি না তো?

না আর আসব না!

এবার বেত্রাঘাত থামালেন। 

কবিরাজ : তোরা যে চলে যাবি তার কি প্রমাণ দিবি?

পরী : ওই পেয়ারা গাছের ডাল ভেঙ্গে দিয়ে যাবো। বাঁধন খুলে দাও।

কবিরাজ : তাহমিনার কনিষ্ঠা আঙ্গুলের বাঁধন খুলে দিলেন। ওমনি পেয়ারা গাছের একটা ডাল মট মট করে ভেঙ্গে পড়লো।

এদিকে তাহমিনার জ্ঞানহীন দেহটা লুটিয়ে 

পড়লো বিছানায়। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ