শুক্রবার ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

কবিতা

প্লিজ, একটু শোনো তো

নয়ন আহমেদ

 

একটা মুখর চ্যাপটা হাসি,

একটা গোলগাল আপাদমস্তক করুণা,

কিছু ভাঙা রোদ, দুটো ব্রাশ করা দুপুর,

একটা বেগুনিরঙা গোধূলিসহ নদীঘেঁষা অবকাশ,

আর চাররঙা একটা বাস্তবতা-

আমি এক ঝিমানো সন্ধ্যায় পড়ে পেয়েছি।

প্লিজ, একটু শোনো তো-!

এগুলো কি তোমার?

একটা পানপাতার মতো

অভিভূত কান্না,

সকালের রোদে গা এলিয়ে দেওয়া কয়েকটা 

সরব ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান,

আগুনের মতো লাল দুটো যৌথ বাসনা,

রিবনে মোড়ানো একটা রাত,

দুটো লাফ দেওয়া প্রশ্রয়,

আর একটা আলতা পরা মুহূর্ত, 

ঘুঙুর পরা কতকগুলো বিষাদ-

আমি পড়ে পেয়েছি।

প্লিজ, একটু শোনো তো ! 

এগুলো কি তোমার?

 

মশারি

এরশাদ জাহান

পাথর ভাঙার মেশিনটার দিকে তাকিয়ে 

তোমার বিশ্বাস ভাঙার ক্ষমতাকে ভাবছি

 

কী অবলীলায় বিশ্বাস ভাঙতে পারো!

হাসতে হাসতে পারো

কাঁদতে কাঁদতে পারো

এভাবে বিশ্বাস ভাঙতে ভাঙতে

বিশ্বাস ভাঙার মশকরায়

কখন যে তুমি মশারি হয়ে গেছ

নিজেই জানো না তা

 

এখন এ মশারিতে না আলো ঢেকে রাখা যায়

না অন্ধকার ঠেকানো যায়।

 

 

তোমাকে দেখার পর

সবুজ আহমেদ 

তোমাকে দেখে থেমে গেছে অববাহিকা নদী

বন বিহনে ছুটেনা চঞ্চল প্রজাপতি 

সাদা মেঘ অনায়সে করছে ছুটাছুটি 

আমি উদভ্রান্ত ঝাঁপ দিতে রাজি

মিষ্টি কোকিলকন্ঠি পাখি ভুলে গেছে সুর

লোকচক্ষুর অন্তরালে ফুটে দুষ্প্রাপ্য ফুল

বর্ণিল বিকালের গোধূলির ছবি

কাছে টানে না ঝর্ণার জল তোমাকে দেখার পর।

 

 

ঘর

সোলেমান রাসেল

বেঁচে থাকার মতো করে

মরে যাচ্ছি, 

একটা ঘর খুঁজে খুঁজে--

যে ঘরের ছায়া হেঁটে 

দীর্ঘ এক রাস্তার আগে আগে

পিছনে মানুষের জীবননদী পারাপারে

উৎসবমুখর লাইন--

চোখে চোখে এঁকে রেখে

ধ্যানগ্রস্ত হওয়া

একটা মানুষ থেকে

একটা সম্মুখ পৃথিবীর ভেতর--

তার ভেতর প্রতিচ্ছবি ফেলে আছে

সাড়ে তিনহাত কবর।

 

নির্বাসন 

সাগর আহমেদ

পরের স্টেশনেই আমি নেমে যাবো

এই যে ট্রেনের ইঞ্জিনের কম্পন

কু ঝিক ঝিক শব্দাবলি 

মাঝে মাঝে চড়া হুইসেল,

আমি নেমে গেলেই, ব্যাস

চোঙ দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়ার কু-লী

শঙ্খচূড় সাপের মতোই

অন্ধ আকাশে উড়াবে সাইকেল।

 

এই যে নেমে যাওয়া, এ এক নির্বাসন,

তোমার মৃৎপাত্রে ঝকঝকে ফ্লাট, নতুন আবাসন।

 

অরণ্যের কাছে পত্র 

রিতা ফারিয়া রিচি

যে জোছনা আলোকিত করে ঘর

তার সাথে মিতালী হবে আজ

অরণ্যের কাছে পত্র পাঠিয়েছি

সবুজ উপহার সামগ্রী 

প্রেরণ করবে কুরিয়ারে।

 

যদি সহস্র বছর ঘুমিয়ে থাকি

নির্জন জোনাকি উঠোনে,

তার ইশারায় নিদ্রাহীন হয়ে

আবার মেলে ধরবো পল্লবিত প্রত্যাশা।

 

এভাবেই ভাঁজ হয়ে মহাকালে

বিলিয়ে দেবো সমুদ্রের সবটুকু জল

নিরাশার পর্দাকে টুকরো টুকরো করে 

স্বমহিমায় হয়ে যাবো বৈভব।

 

বেলা শেষের গান

নকুল শর্ম্মা 

নিয়মের দোর ভেঙেছে দুরন্ত সময়, 

পাষাণ হৃদয়ে ভালোবাসা মরে গেছে সেই কবে--

কর্মযজ্ঞের শিরোচ্ছেদ 

নির্মম পৃথিবীর নাগপাশের অজেয় বন্ধনে।

শত ধিক্কারেও মুছা যায় না

বন্ধ মনের অতৃপ্ত বেদনার ক্ষত,

রক্তক্ষরণে জন্ম নেয় শুধু নতুন রক্তবীজ।

 

নিরাশার নিষ্ঠুর দানবের হাতছানি কেড়ে নিয়েছে সব

উপস্থিত সায়াহ্নে বাসনার ঘটে যবনিকাপাত, 

জীবন সমুদ্রে ঘনিয়ে এলো বেলা শেষের গান

কত বসন্ত কেঁদে হয়েছে বিফল শুধুই সংগোপনে

হিসেবের খাতায় লিখে রাখলে হয়তো হয়ে যেতো 

ছোট খাটো এক মহাকাব্য।

 

তোমার হতে দেয় না

সাইমুম হাবীব 

মুক্ত অধ্যায়ের পথ বন্ধের প্রতিযোগিতায় 

আমি শুকনো পাতার শ্লোগানে বিদীর্ণ,

তোমার হৃদয়ের খোঁজে হন্যে হতে থাকা তৃষ্ণার্ত কুকুরের মতো,

ঠিক তখন তুমি আমার হতে হতে পরের হয়ে গিয়েছিলে।

বেলা শেষে দুরন্ত দুঃস্বপ্নের সাথে তুলনা করে

অবিনাশী সূর্যের মতো বেঁচে আছি,

তাই আজও সেই দুরন্তপনার অনিল প্রবাহের মতো বলে যাচ্ছি-

সে আমাকে তোমার হতে দেয় না।

 

ভুল গন্তব্য

ফজিলা খাতুন

ভুল গন্তব্যে হাঁটছি

মনের গহীনে দুঃখ মাতানো আঁধারের যাত্রী।

গন্তব্যের শেষে অকৃত্রিম জ্যোতি দেখি।

দুর্বৃত্ত পথে অকারণে হেঁটে চলছি।

অন্ধকারে হাতড়িয়ে খুঁজছি সেই বসন্তের ফুলটি।

 

অন্ধকারে দেখছি আমার বিপ্লবের স্বপ্ন।

চোখের আগুনে বুঝি পথের কাঠামো।

ভুলের পাখি উড়ে গেছে মনের আকাশ হতে

আশার জ্বলন্ত প্রদীপ নিভে গেছে হৃদয়ে।

 

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ