মিশুর মিম

মোখতারুল ইসলাম মিলন
মিশু খুব চঞ্চল একটি মেয়ে। বয়স কেবল ১০ বছর। কিন্তু তার কাজকর্ম বড় মানুষের মতো। খুব পাকা বুদ্ধি। দুষ্টুমিতে যেমন পাকা পড়ালেখাতেও কম নয়।
মিশু শখ করে একটি বিড়াল পোষে। বিড়ালের সাথে বেশ জমে ওঠে তার আনন্দ ফুর্তি। মিশুর অসময়ের সাথী হিসেবে পাশে থাকে তার বিড়াল। বিড়ালের নাম দিয়েছে মিমি। সব মিলিয়ে দুইজনের সাথে বেশ মানিয়েছে। মিশু বিড়ালকে সব সময় পাশে নিয়ে থাকে। মিশু যা খেতো মিমিকেও একটু দেয়। মিশু পড়তে বসলে পাশে ঝুম মেরে বসে থাকে মিমি। ঘুমের সময় একসাথে ঘুমায়। মিশু সুন্দর করে রঙিন কাগজ দিয়ে মালা বানিয়ে মিমির গলায় পরিয়ে দেয়। মিমির গায়ের রং ধবধবে সাদা। মিশু মাঝে মাঝে তাকে রংতুলি দিয়ে সাজিয়ে দেয়।
একদিন মিশু আম পাড়তে যায়। মিমিকে নিচে রেখে মিশু গাছে উঠে আম পাড়তে থাকে। একটা ডাল ধরে জোরে ঝাঁকি দিতেই একটা ডাল ভেঙে মিমির শরীরের উপর পড়ে যায়। মিমি আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এই অবস্থা দেখে মিশু তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে মিমিকে নিয়ে বাড়িতে আসে। পানি খাওয়ায়, মাথায় পানি দিয়ে দেয়। এরপর কিছুটা ভালো মনে হয়। বেশি নড়াচড়া আর দেখা যায় না মিমির। দিন কেটে রাত পার হয়ে যায়। পরদিন মিমির শরীর খুব খারাপ দেখা যায়। ঝুম মেরে বসে থাকে। কিছু খায় না, নড়াচড়াও করে না। শরীর অনেক গরম দেখায়। এমন অবস্থা দেখে মিশু তার বাবাকে বলে; বাবা আমার মিমির শরীরটা অনেক খারাপ হয়েছে, হয়তো ডাক্তার দেখাতে হবে, তুমি একটু দেখো তো বাবা। মিশুর কথা শুনে তার বাবা মিমির কাছে গিয়ে দেখে মিমির শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি পশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় মিমিকে। ডাক্তার মিমিকে দেখে বলে; মিমির শরীরে এমন কিছু হয়েছে যার কারণে সে চুপচাপ হয়ে আছে। মিশুর বাবা বললো; এখন তাহলে কি করা যায়? ডাক্তার বললো; চিন্তা করবেন না, আমি ওষুধ আর একটা ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। পরে ওষুধ নিয়ে চলে আসে। রাতে ঘুমানোর সময় মিশু মিমিকে সাথে নিয়ে ঘুমিয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে মিমির নড়াচড়া একদম বন্ধ। একটু জোরে ধাক্কা দিয়ে দেখে মিমি মারা গেছে। মিশু কেঁদে উঠে। মিশু পরে বুঝতে পারে যে, মিমির শরীরে বড় ধরনের আঘাত পেয়েছিল যার কারণে সে আর বেঁচে থাকতে পারল না। মিশুর মনটাও খারাপ হয়ে গেল। মিশুর খেলার সাথী হারিয়ে ফেলে মিশু হাঁউমাউ করে কেঁদে ওঠে।