হলুদ ব্যাঙের রাজধানী

আরিফুর রহমান সেলিম
পরী আব্বু আম্মুর একমাত্র মেয়ে। তার কোন ভাই বোন না থাকায় আব্বু আম্মুর সাথেই খেলা করে দিন কাটে। আম্মুকে সারা সপ্তাহে কাছে পেলেও আব্বুকে পায় সপ্তাহে একদিন। আব্বু ঢাকায় সোনালী ব্যাংকে চাকরি করে। বৃহস্পতিবার রাতেই ট্রেনে চড়ে বাবা বাড়ি চলে আসে। সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলে পরী দেখে বাবা তাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। তখন পরী ঘুমন্ত বাবাকেই আদর করে একটা চুমু দেয়।
পরী এবার প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের নাম হাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নরসিংদী শহরের খুব কাছেই এই বিদ্যালয়টি অবস্থিত। স্কুলে পরীর অনেক বন্ধু। শাকিব, তাথৈ,অঙ্কিতা তার প্রিয় বন্ধু। তাদের স্কুলের আছে একটা সুন্দর মাঠ। মাঠে সবুজ ঘাস। পরী মাঠে গোল্লাছুট খেলতে ভালোবাসে।
ছুটির দিনে বিকেলে বাবার সাথে পরী ঘুরতে যায়। হাজীপুরের কাছেই মেঘনা নদী। নদীর উপর স্টিলের ব্রীজ। ব্রীজ পার হলেই বীরপুর মিনি চিড়িয়াখানা। এখানে কতো কতো প্রাণী। পরী বাবার হাত ধরে এসব দেখে আর অবাক হয়। বানরের দুষ্টুমি দেখে সে খিল খিল হাসে। বাঘের খাঁচায় এসে সে ভয় পেয়ে যায়। পাখির খাঁচায় কত্ত পাখি। কিচির মিচির ডাকে । হরিণের বাচ্চাগুলো কত্ত সুন্দর। খরগোশের বাচ্চা দেখে পরীর আদর করতে ইচ্ছে করে।
নদীর পাড়ে বিকেল জুড়ে অনেক মানুষ। সেখানে দেখে এক বেলুন বিক্রেতা বেলুন বিক্রি করছে। আব্বুর কাছে পরী বায়না ধরে বেলুন কিনতে। আব্বু অনেকগুলো বেলুন কিনে দিলে পরীর মুখে হাসি ফোটে। এক হাতে বেলুন আর অন্য হাতে আব্বুকে ধরে সে বাড়ি ফিরে।
আব্বু বাড়ি নেই তাই পরীর ভীষণ মন খারাপ। সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছে। টুপটাপ শব্দ। টিনের চালে গাছের ডালে বৃষ্টির রিনিঝিনি। আব্বু বাড়ি থাকলে পায়ে নূপুর পরে পরী বৃষ্টিতে ভিজতে পারতো আব্বুর সাথে। কিন্তু আম্মু পরীকে একাও ভিজতে দিচ্ছে না । বলে কিনা ঠান্ডা লাগবে, সর্দি হবে, জ্বর আসবে। ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর হবে বলে কি বৃষ্টিতে ভিজা যাবে না? কি পচা কথা। আম্মু কতো বোকা। পরী মনে মনে ভাবে। সে আরো ভাবে কই আব্বু তো কখনো এসব বলে না। আব্বুটা কতো ভালো।
স্কুলে ফার্স্ট হতে হবে এটা পরীর বাবার কথা। তাই পড়াশোনাতেও পরী সেরা। সে কখনো স্কুল বন্ধ করে না। স্কুলের এটেনডেন্সের জন্য যে পুরস্কারটা আছে সেটাও পরী পেতে চায়। তাই রোদ, বৃষ্টি, ঝড়েও পরী কখনো স্কুল বন্ধ করে না।
সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি। আম্মু বলেছে আজকে স্কুলে যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু এটেনডেন্সের পুরস্কারটা যদি সে না পায় স্কুল বন্ধের জন্য তখন কি হবে? আম্মুকে তাই সে রাজি করালো। পরী এই বর্ষার ঝুম বৃষ্টিতেও স্কুলে রওয়ানা দিলো। আম্মু তাকে একটি ছাতা দিয়ে দিলো। স্কুল ব্যাগটি কাঁধে নিয়ে সে ছুটলো স্কুলের দিকে।
স্কুলে গিয়ে তো পরী ভীষণ অবাক হয়ে গেলো। তার চোখের সামনে যেন হলুদ ব্যাঙের বাগান। সারি সারি হলুদ ব্যাঙ। এটা যেন একটা হলুদ ব্যাঙের রাজধানী। তাদের স্কুলের মাঠ জুড়ে শত শত ব্যাঙ। গাল ফুলিয়ে গান ধরেছে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ, ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।
পরীর সহপাঠী রাজু, সিয়াম, অর্ণবরা মাঠে ফুটবল খেলছে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে। তবু ব্যাঙগুলো ভয় পাচ্ছে না। তারা তাদের সঙ্গীত ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ, ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ গেয়েই চললো। এতো এতো ব্যাঙ দেখে পরী তো অবাক! সে ব্যাঙগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো।