কবিতা
নদীর কান্না
খুরশীদ আলম বাবু
নদী আমার হারিয়ে গেছে পাই না খুঁজে আর
নদীর পাশে বসেই শুনি নদীর হাহাকার-
পদ্মা বোটে রবি ঠাকুর দেখলো শতবার-
উধাও হলো মানিক বাবুর প্রিয় নদীর পাড়
নদীর কাছে বসেই পেলাম কান্না উপহার।
তুমি ভিজবে বলে
শামীম শাহাবুদ্দীন
তোমাকে ভেজাবে বলে
স্বয়ং আকাশ থাকে দীর্ঘ প্রতীক্ষায়
বাতাসে শুরু হয় কানাকানি
যেন কত কাঙ্খিত ছিল
তোমার বৃষ্টিতে ভেজা
তোমার তনু ছুঁয়ে বৃষ্টি মাটিতে মিশে যায়
তুমি ভিজবে বলে
প্রকৃতিও সাজে নতুন সাজে।
আমি বৃষ্টি হতে চাই
তবুও যদি তোমাকে ছোঁয়া যায়।
নীরবতা
মোহাম্মদ ইসমাইল
নীরবতাকে নীরবে সহ্য করার শক্তি আল্লাহ তুমি আমায় দিও;
মজলুমের আর্তনাদে যদিও....
বুক ফাটে আমার সেই প্রতিনিয়ত!
যদিও দূখী মানুষের দুঃখে আমি চিরকাল ধরে থাকি ব্যথিত;
তাই ছবর ধরার অদম্য এক শক্তি নিয়ে প্রভু
আমি তোমার কাছে উর্ধ্বে দুহাত পেতেছি!
নীরবতা মানে আসলেই কি ধৈর্য?
যাকে দুঃখের নদীর মতো এখনো নিজেকে সেই সাঁতরে চলেছি।
সীমানাহীন বৃত্ত
নাঈমুল হাসান তানযীম
এ কোন বৃত্তে বন্দী করলে আমায়
সীমানা নেই, নেই নির্দিষ্ট চৌহদ্দি
এ কোন মায়ার বাহুডোরে বলো
বেঁধে রেখেছো পাগলের মতো!
চতুর্দিকে পালাবার পথ খুঁজে খুঁজে
নিরাশ মনে ক্লান্ত দেহে
আবারও কেবল ফিরে ফিরে আসি
বৃত্ত-বন্দী সে ভালোবাসা আর
মায়ার চুম্বক আকর্ষণে!
বৃষ্টি উপাখ্যান
আবুল খায়ের বুলবুল
বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা জল যেন বিরহী চোখের কান্নার শব্দ
তার প্রতিটি ফোঁটায় ভেজে ওঠে প্রকৃতির মাটি বৃক্ষরাজি
বৃন্তে বৃন্তে ফোটা ফুলের পাপড়িগুলো ভিজে অবিরত
অশান্ত মনের শুকনো জমিন ভেজে ভেজে ভরে যায়
ক্লান্ততা ধুয়ে নেয় কিছু কিছু শান্ত স্নিগ্ধ হিমেল বাতাস
আঁকা বাঁকা মেঠো পথ হয়ে যায় কর্দমাক্ত
পিচ্ছিল পথ দিয়ে চলা হয় সাহসী পদযুগল
কখনও কখনও ওষ্ঠা খেয়ে লেপটে যায় সাজানো শরীর
তবু থামে না লক্ষ্যের পথ কোন ভারী বর্ষণে
সময় ক্লিষ্টতায় এগিয়ে চলে পথিক আমি ও পাখি
অনেক দিনের গুমোট থাকা মেঘ ভেঙে আকাশের কষ্ট ঝরে
বিরহ ব্যথা কিয়ৎক্ষণের জন্য হলেও স্তব্ধতায় ঢেকে দেয়
জয় পরাজয়ের বাণীময় শব্দরা কি যেন কয় একাকী
আমি নিমগ্নে সুখের খেই হারিয়ে অম্লান বদনে
শুয়ে পড়তে থাকি দীর্ঘ সময় প্রকাশিত তার অনিন্দ্য উপাখ্যান।
সমুদ্র দেখা
সুমন রায়হান
প্রথমবার যখন সমুদ্র দেখেছিলাম
প্রথম দেখা প্রেমিকা’র মতো জেগেছিল শিহরণ
একটুখানি ভয় অনেকখানি উচ্ছ্বাসে
সমুদ্রকে নিবিড়ভাবে করি আলিঙ্গন।
অতঃপর কিছুদিন সমুদ্রের কাছাকাছি থেকে
প্রেম হলো গাঢ় থেকে গাঢ়
বিরহের বীণা বাজে বিদায় বেলা
ফিরে এসে তাকে কাছে চাই আরো।
এভাবে আর কত দিন ভালবাসা দেব
না না এবার আমি সমুদ্র কিনেই নেব
সমুদ্র বলে, আকাশ কুসুম কল্পনা দাও বাদ
পারলে আমার বিশালতা করো অনুবাদ।
নক্ষত্র
শাহীন সুলতানা
আমি রোজ তোমাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখি
ঠিক তাজমহল দেখার মতো করে
তোমাকে দেখতে দেখতে
আমার চোখ পুড়ে ওঠে...
আমি নিরুদ্দেশ হই এক অজানা রাজ্যে
সিন্দাবাদের মতো আবিষ্কারের নেশায়।
অতঃপর একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে ‘চন্দ্র দর্শন'
তুমি-আমি, আমরা, পদ্মফুলের ঘ্রাণ
অরণ্য, পাহাড়, নীল সমুদ্র, খোলা আকাশ
তোমার চোখে চোখ পড়তেই আমি দেখি-
তোমার চোখ একটা শান্ত দিঘি
সে দিঘির অতল জলে
আমি হারাতে থাকি একটু একটু করে সমস্ত সত্তা।
তোমার মুখ এক অনন্ত সৌন্দর্যের পিরামিড
সে সৌন্দর্যের নিখুঁত চিত্রপটে
আমি হারিয়ে ফেলি দিশা
তোমাতে বিভোর হতে... হতে...
নিজেকে আবিষ্কার করি
এক অজানা দ্বীপে, অজানা গ্রহে।
আমি হারাই রোমাঞ্চকর দূর নক্ষত্রের দেশে
চাঁদ পাহাড়ের বুকে
একটি সুখের ধারাপাত আঁকতে গিয়ে
দুঃখের তরজমা নিয়ে ফিরি
চোখ হয়ে ওঠে জলের আটলান্টিক
তুমি দূর আকাশের নক্ষত্র জানি
তোমাকে ছোঁয়া যায় না
তবু জায়নামাজে তছবির মতো
তোমাকেই জপে যাই রোজ রোজ নিঃশব্দে।
আমার আমি
খালিদ বিন শাহিদ
কে যায় কোথায় কোন ভরসায়
দূর সুদূরে হারায় মনের চোখ?
এসব ভাবার সময় না পাই
আমি দারুণ খামখেয়ালি লোক।
ভাবছো আমায় খুব সহজে
চুক্তি কথায় সত্যি হেরে যাই?
একদমই না আমি বরং
যুদ্ধ করে নিজেকে সাজাই।
সুখ অসুখের দ্বন্দ্বে মেতে
দুঃখ দিয়ে রাঙাই মনের তীর
রাতবিরেতে হঠাৎ কভু
ফুঁপিয়ে কাঁদায় হাজার স্মৃতির ভিড়।
ভালো থাকার নিঠুর খেলায়
নিয়মিত জিততে গিয়েও হারি
তবু আমি খুব সাধারণ
অভিনয়ে বাঁচতে আমি পারি।
ভালো আছি থাকব ভালো
নাইবা পেলাম সুখের দেখা শেষে
আমি আমার মতন করে
জীবনটা পার করব অবশেষে।
ক্ষুধা
আবির হাসান
একবার অভাবের হাত ছিড়ে ফেললো
ব্যতিব্যস্ত সময়ের বুক
পৃথিবী রক্তাক্ত হয়ে উঠলো
বিক্ষিপ্ত বেদানার মতো
যেন সভ্যতার কাঁটাতারে ছেঁড়া পালকে
কাতরাচ্ছে একটি সাদা বক
পাড় ভাঙ্গা দুপুর ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ছে
দুরূহ বিষণœতায়!
প্রিয় মালতীর মতো রিক্ত যন্ত্রণায়
আমরাও মরে যাই প্রতিদিন কিবা
কেঁপে উঠি ক্ষুধায় নূপুরের মতো ছমছম।
এইসব বৃষ্টিমুখর দিনে
বিরহের তুমুল প্লাবনে থমকে যাই
হৃদয়ের নির্মম বাস্ততায়
তাই বিদীর্ণ দুপুরের তপ্ততা খেয়ে বেঁচে আছি।
পুড়ছে প্রবীণ বৃক্ষরাজি
সৌরভ দুর্জয়
উপেক্ষার খরায় পুড়ছে বহুদর্শী প্রবীণ বৃক্ষরাজি;
ছায়া দেয়া গাছগুলো আজ করছে হাহুতাশ
কোথায় তারা পাবে ছায়ার সামিয়ানা?
খুঁজছে এই সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর।
পড়ছে টেক্সট বই সাথে কতো রেফারেন্স বুক
বাদ যাচ্ছে না ফুটপাতের চটিবইও,
কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক এই অভীক্ষার উত্তর কই?
যাদের ছায়া দিতে পুড়ায়েছে
নিজের সবুজ পাতার ঘর
অম্লজান সব বিকিয়ে দিয়ে
হয়েছে দানবীর হাজী মুহম্মদ মহাসীন;
তারা এখন বিশাল বৃক্ষপর্বত
সুখে আছে নিজের শোভিত বাগান নিয়ে
ফুরসত কই প্রবীণ বৃক্ষরাজির খোঁজ নেবার?
মানবিক চোখ তোমরা তাকাও
উপেক্ষার খরায় পোড়া বৃক্ষগুলির দিকে।