ঢাকা, রোববার 10 December 2023, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

মেহমান 

নীলু হক

 

(১)

কাজ শেষ করে বেডরুমে আসতেই চোখে পড়ল তাকে। বিছানার ওপর ছোট দেহ নিয়ে চুপ করে বসে আছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখ দিয়ে একটা শব্দ করল কিন্তু উঠল না বিছানা‌ থেকে।আমি অবাক হয়ে ওর চেহারা দেখছি!আর মুগ্ধ হয়ে ভাবছি কিসের সাথে তুলনা করব?এত রূপ! অপরুপ সৌন্দর্য নিয়ে সে জন্মেছে!এই অসময়ে আমার ঘরে মেহমান হ‌ওয়ার কথা নয়। মাথা ঘুরাতেই আর একবার হোঁচট!খেলাম সৌন্দর্যের বাহার দেখে।যেমন তার ঠোঁটের রঙ টকটকে লাল যেন লাল বোম্বে এক মরিচ। পুরো দেহটায়‌ আংশিক কচি কলা পাতা রঙের শাড়ি জড়ানো ঠিক যেন, টিয়া আবার টিয়া নয়।উপরের অংশ গাঢ় হলুদ বর্ণের পোশাক উড়ার ভঙ্গিতে পাখা ঝাপটালো কিন্তু এক পা এগুলো না।

অপ্রত্যাশিত ভাবে তাকে দেখে আমি খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম।কাছে গিয়ে তাকে ধরতেই সে ওড়ল না কিংবা কোন প্রতিক্রিয়া দেখালোনা।মনে হলো মানবীয় হাতের স্পর্শে হয়তো আপন জনকে খুঁজে পেয়েছে।আহা!রে!কার পোষা পাখিটি খাঁচা থেকে পালিয়েছে। বলতেই সুবা দৌড়ে এলো কি বললেন আম্মু ?পাখি?শুরু হলো ওকে নিয়ে গবেষণা।থাক ওকে নিয়ে ভাবতে হবেনা। সন্ধ্যা হয়ে আসছে ওকে ছেড়ে দাও ও মুক্ত আকাশে উড়ে ঘরে ফেরা কোন দলে ঠিক সাথী খুঁজে নিবে বলে মিসেস তালুকদার পাখিটি ছেড়ে দিলেন। কিন্তু সে উড়তে পারল না একটু উড়ে বারান্দায় গ্রীলে বসে পড়ল।আম্মু আপনি বড় নিষ্ঠুর ওকে ছেড়ে দিলেন!দেখেন না ও উড়তে পারছেনা! ওকে খাঁচায় রেখে দিতাম বলে অভিমান করলো সুবা।

মন খারাপ করোনা আম্মু ওকে যেতে দাও। ও কিছুক্ষণের জন্য আমাদের মেহমান হয়েছে কারোর আদরের পোষা পাখি পালিয়েছে সুযোগ পেয়ে।হয়তো অনেক দিন বন্দী থেকে উড়তে ভুলে গেছে।দেখা যাক ও কি করে? মাগরিবের নামাজের আযান দিবে দিবে এমন সময় আওয়াজ দিয়ে মুক্ত আকাশে ডানা মেললেন মেহমান।দুজন এক প্রশান্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন ক্ষণিকের জন্য।মিসেস তালুকদার বললেন সুবা ওকি ওর গন্তব্যে যেতে পেরেছে?কি জানি আম্মু!বলে দু'জনে নীরবে ঘরে প্রবেশ করলেন অগণিত ভাবনা নিয়ে।

 (২)

মানুষের জীবনে এক‌ই ঘটনা পুনঃপুনৌনিক ভাবে ঘটে , একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। সেদিন তালুকদার সাহেব ঘরে এসে পাখির খাঁচাটি পরিস্কার করতে দেখে মিসেস তালুকদার জানতে চাইলো কি করবে এটি? তিনি বললেন,পাখি রাখবো।পাখি পেলে কোথায়? তুমি দেখনি ঘরে এক সুন্দরী মেহমান এসেছে বলে হাসতে লাগলেন!অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করতেই সুবা চিৎকার করে উঠল।আম্মু এদিকে আসেন,দেখুন হবুহু গত বছরের মেহমানের মত দেখতে।এটি ও মনে হয় পালিয়েছে!চুপ করে গ্রিলে বসে আছে উড়ছে না।আব্বু এটার কথাই বলছে। গতবার আপনি ছেড়ে দিয়েছিলেন,আব্বু বেশি রাগ করেছেন।তাই এটা এখন পোষ মানাবে। তো নিজে নিজে এসেছে থাকলে অসুবিধা কি? মিসেস তালুকদার কোন কথা বললেন না।তবে মনে মনে চাইলেন পাখিটি উড়ে যাক।

 অবশেষে তালুকদার সাহেব সফল হলেন পাখিটিকে খাঁচায় বন্দী করতে। সকালে বন্দী হয়েছেন তিনি। সারাদিন সেকি!যত্ন তার বাবা-মেয়ে মিলে। কখনো পানি, কখনো খাবার তার পছন্দের খাবার।নেট থেকে খোঁজ করা তার নাম পছন্দ,আদিবাস ইত্যাদি।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে তালুকদার সাহেব বিকাল বেলা ঘটালো এক অঘটন।আসরের নামাজ পড়ে এসে সবাইকে বারান্দায় মেতে বললেন, খাঁচাটা খুলে পাখিটিকে ছেড়ে দিলেন। আশ্চর্য!হয়ে প্রশ্ন করলাম ছেড়ে দিলে যে?আমাকে সেদিন নিজেই বেশি তিরস্কার করেছিলে।আজ কি হলো?থাক ওকে কে যত্ন করবে?ওর হক আদায় করতে পারবোনা। শুধু গুনাহ কামাই করে লাভ আছে? ইতিমধ্যে পাখিটি শব্দ করতে করতে দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে। দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ পানে চেয়ে মিসেস তালুকদার বললেন হে আল্লাহ! যেখানেই থাক ক্ষনিকের অতিথি ভালো থাক।বাকিরা আমীন বলে ঘরে প্রবেশ করল। সকলের হৃদয়ে এক অজানা প্রশান্ত!কিসের বোঝা গেলনা।মুক্তির নাকি আনন্দের!

 

না, নাহার

২৮/০৬/২৩ ইং।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ