শুক্রবার ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

শেষ ট্রেনের যাত্রী

কনক কুমার প্রামানিক 

অল্পের জন্য সাড়ে দশটার ট্রেনটা মিস করেছে রাতুল। স্টেশনে পৌঁছার মিনিট দুয়েক আগেই ট্রেনটা ছেড়ে গেছে। মফস্বল শহরের এ স্টেশনে সব ট্রেন থামে না। চট্রগ্রামের আর একটা ট্রেন আছে সেই ভোর সাড়ে পাঁচটায়। সে অবধি নির্ঘুম মশার কামড় খেয়ে খটখটে কাঠের বেঞ্চিতে সারারাত জেগে বসে থাকতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে আসতেই তার খানিকটা দেরী হয়েছে। রাতুল ডাক্তার শাহেদ ও শরিফা দম্পতির একমাত্র সন্তান। সে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ভালো একটা চাকরি করছে। খুব ভালো ছেলে। বাবা মার অত্যন্ত বাধ্যানুগত। আজ ছিল রাতুলের বিয়ের দিন। বাবার বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে। বিয়েটা করবে না বলেই সে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। পাঁচ বছর ধরে রুপার সঙ্গে সম্পর্ক তার। দু’জন দু’জনকে পাগলের মতো ভালোবাসে। সোশ্যাল মিডিয়াতে ওদের পরিচয় তারপর মন দেয়া নেয়া। সেখানেই একটু আধটু ছবিতেই যা দেখা। সামনা সামনি কখনো দেখা হয়নি ওদের। রুপার এখানে আসার কথা। দু’জনে একসাথে পালিয়ে যাবে। গন্তব্য চট্রগ্রাম। রাতুলের বন্ধুর বাড়ি। সব কথা হয়েছে বন্ধুর সঙ্গে। ওরা ওখানে গিয়ে বিয়ে করবে। রাতুলের চিন্তা হচ্ছে, রুপা হয়তো অনেকক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছে। রেগে গেছে বোধহয় খুব। যদিও রুপা মেয়েটা খুব শান্ত স্বভাবের। রাগার কথা নয়। বড়জোর অভিমান করে কিছুক্ষণ কথা বলবে না। 

স্টেশনে এসে রাতুল চারিদিকটা ভালো করে দেখে নিলো। রুপাকে কোথাও দেখতে পেল না। স্টেশনটাও মোটামুটি ফাঁকা। দু’চার জন লোক এখানে সেখানে বসে আছে। চিন্তায় পড়ে গেল রাতুল। তবে কি মেয়েটা চলে গেল? বাড়ি থেকে বাবা ফোন করবে বলে মোবাইলটাও সুইচ অফ করে রেখেছে সে। চিন্তায় মাথাটা ঝিমঝিম করছে। বাড়িতে এখন যে কী হচ্ছে কে জানে। সব আয়োজন শেষ। আত্মীয় স্বজনরাও সব এসে পড়েছে। বাবাকে কিছু বলার সাহস নেই বলেই আজকে পালিয়ে এসেছে সে। প্রচন্ড গরম আর টেনশনে ঘেমে চুপসে গেছে। হাতঘড়িটা উঁচু করে একবার দেখে নিল সে। রাত পৌনে এগারোটা বাজে। পিপাসায় বুকের ছাতি ফেটে যাবার অবস্থা। দোকান থেকে একবোতল ঠান্ডা পানি কিনলো সে। কাঠের একটা বেঞ্চে বসে মন ভরে খানিকটা পানি খেয়ে নিল। হঠাৎ পেছন থেকে পিঠে একটা নরম হাতের স্পর্শ অনুভব করলো। পেছন ঘুরে তাকালো সে। পরীর মতো একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে। দেরী হওয়ার জন্য কান ধরে অনুনয় করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ছবিতে যেমন দেখেছে তার চেয়ে বহুগুণ সুন্দরী রুপা। ওরা দু’জনে পাশাপাশি বসল। সুনসান নীরব এক পরিবেশ। অপরূপ সুন্দর লাগছে দু’জনকে। পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে গেছে সমস্ত স্টেশন। 

খুশির ফোয়ারা ছুটে চলেছে দ্বৈত হৃদয়ে। রুপা বলল, আমরা ঢাকা তোমার বাসায় ফিরবো। অন্য কোথাও যাবো না। আমি তোমার বাড়িতে কথা বলে সবকিছু ঠিক করে নেব। আমতা আমতা করতে লাগলো রাতুল। দূর থেকে ট্রেনের হুইসেল শোনা গেল। ঢাকাগামী ট্রেন। শেষ ট্রেন এটা। এ স্টেশন থেকে শুধু ওরা দু’জনই উঠলো। ওরা যখন বাসায় ফিরল তখন রাত দু’টা। বাড়িতে তখনও সাজ সাজ রব আর উৎসব চলছে। কোন শোক নেই। গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় হঠাৎ পুষ্প বৃষ্টি বর্ষিত হলো ওদের ওপর। বেশ অবাক হলো রাতুল। হুড়মুড় করে বেরিয়ে এলো সবাই। মা রাতুলের কান ধরে বললেন, কোথায় পালিয়ে যাবি বাবা? রুপাই তো তোর শফিক আংকেলের মেয়ে। 

রুপা সব জানতো। আর ওর বুদ্ধিতে সব হয়েছে। রাতুল রুপার দিকে এক নজর তাকালো। রুপা লজ্জায় মুচকি হাসছে। আজ আর হলো না। কাল ওদের বিয়ে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ