শুক্রবার ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

কবিতা

অচেনা মানুষ

হাফিজুর রহমান

 

খুব মিথ্যে হলেও বলো ভালোবাসি

কথা-ও বলতে পারো বেশ হেসে-হেসে

বোকা-সোকা ভাবো, বুঝতে না-পারার ভান 

গায়ে মেখে নাও না -কখনও অপমান;

সম্মান - তোমাকে সকলেই করে-

এই ভেবে, উঁচু মাথায় বেঁচে থাকা তোমার! 

 

ক্লান্তি নেই, কষ্ট নেই, দায়বদ্ধতা নেই

ঘুমন্ত জেদের তোমাকে, কে পারে হারাতে?

হার মেনেছে লজ্জা, ব্যর্থ শালীনতার ক্রন্দনে

তুমি পাও; পৌষের উষ্ণতা;

ভালো মন্দের মিশ্রণে তৈরি করা চরিত্রের

ভীষণ জটিল, চেনা মুখের অচেনা মানুষ। 

 

দূরের টান 

সাজু কবীর

 

একটি রাতের বুকে হাজার দিনের পথ হেঁটে যায়-

একঠোঙা সোনাস্মৃতি খিড়কিতে অপলক চায়,

বিরহী ডাহুক কাঁদে, সময়ের চোখে জল বেড়ে যায়...

এতো জল কোথা থেকে আসে...

চোখের ভেতরে এক অন্তঃসলিলা নদী ‘ভালোবাসা’ ভাসে!

 

তুমি হয়তো এখন আগের মতন আর চাঁদ দেখো না,

শিমুলতলার টঙে দীঘির পারে আর বসো না

ঝর্নায় ভেসে যাওয়া পদাবলি আর আবৃত্তি করো না,

জলের জ্বালাতে তাই ডুবে যাওয়ার বড় ভয়,

অথচ ক্ষয়ের খেরোখাতা জুড়ে জয় আর জয়...

 

মনে করে দেখো যখন তোমার চোখ মুছে দিচ্ছিলাম বলেছিলে:

"কাঁদতেও বড় সুখ- কাঁদতেও ভালোবাসা লাগে"

তাহলে তুমিই বলো-

ডাহুকের চোখভাঙা জলের জোয়ার কোন উৎস থেকে, 

একবার বলো! জানি, জবাব পাবো না আর।

জেনে রেখো, পাওয়ার চাইতেও 

থাকার অনুভূতিতে বড় ভালোবাসা থাকে!

 

আসলে দূরের টান কিংবা বন্ধ্যাস্বপ্নগুলো

বাস্তবের চেয়েও অতি সুন্দর অতি সুমধুর!

 

আয়নাটা বদলে নাও

নাসরীন জামান

 

আড় চোখে আর তাকিয়ে দেখো না

দেখতে হলে চোখটা রাখো চোখের পরে।

চিৎকার করে ভালোবাসি বলো না,

ভালোবাসতে হলে আমাকে ছেড়ে দাও

আকাশের নীলের ঘরে।

 

পাখিরা কখনো আকাশে ঘর বাঁধে না।

ওখানে ওরা দিনের আলোয় ডানা মেলে

মুক্তির স্বাদ নেয়, জীবনের গন্ধ নাকে শুঁকে

বেঁচে থাকাকে প্রশস্ত করে,

ওরা সন্ধ্যায় ফিরে আসে বিশ্বাসের নীড়ে।

 

আমাকে দেখতে হলে নিজেকে সাজাও

বদলে নাও মনের দেয়ালের অস্বচ্ছ আয়নাটা,

ওখানে ছায়া পড়ে না আর আমার,

দ্যুতি চমকায় না ভালোবাসার,

অযথাই কেন আড় চোখে তাকাও তবে?

 

সেঁজুতি আমার বোন

মমতা মজুমদার 

 

কংক্রিটের শহর,

ধূপ পোড়া গন্ধে যেন নাক ছিটকে থাকে নাগর!

অথচ সুযোগের সদ্ব্যবহারে সেও গিয়েছে হিংস্র 

বাঘের মতন। নিষিদ্ধ পল্লীতে বিচরণ করেছে

কেউ জানে না হয়তো সে কথন।

জানে কেবল অন্তসত্তা এক নারীর মন!

ওরাও তো মানুষ ভুলে যায় কিছু হীন মস্তিষ্কের 

ভদ্রবেশী লোক। ভুলে যায় সেঁজুতিদের আছে

সুন্দর একটা জীবন। 

এভাবে বাঁচতে কেউ চায় না ইচ্ছে করে নিজের মতন।

নরপিশাচরা ওঁৎ পেতে থাকে প্রতিটি ক্ষণ;

কে নেবে দায় এক অনাগত জীবনের শেষ পদচারণ?

দেহ ছিঁড়ে দেখানো যায় না সে তিক্ত বেদন,

ভদ্রতার লেবাস পড়ে ভালো থাকে কী সত্যি 

ওই কলুষিত মন।

 

হৃদয়ের তুর

ওলি মুন্সী 

 

নীল নদীতে আমি

জলের উপত্যকায় প্রদীপ হয়ে ডেকেছো

তৃষ্ণার সিংহাসন থামিয়েছি ওহে বিলকিস

সূর্য প্রদিক্ষণের মতো চোখ তুলে একবার 

তোমাকে দেখেই ভস্ম হয়েছে হৃদয়ের তুর।

গুমোট স্বপ্নের আবাবিল উড়ে সমস্ত মরুভূমিই

উষ্ট্রির পিঠের উপর কবর খুড়িয়ে পুঁতে রেখেছি

সব টুকু ভয় তবুও যদি বিরহে পোড়াও

পানপাত্রে সাজিয়ে রেখেছি জয়নবের বিষ।

 

স্বপ্নময়ী লতা 

মান্নান নূর 

 

(উপঢৌকন: জাসরিয়াকে) 

লতাগুল্ম আকাশ ছুঁতে পারে না-

কী দারুণ সাগ্রহে গলা বাড়ায় আকাশ ছোঁবে 

স্বপ্নদেবীর পদ প্রান্তে লতা কতকাল ধরে স্বপ্নময়ী

আকাশের পথ ধরে আকাশ মাঠে নীলের বিছানায় নীলাঘাস হবে- 

 

এত উঁচু শূন্যতা! বিস্ময়ে হতভাগে একসময় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে মাটির বিছানায়।

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ