কবিতা
ঢেউ কলকল
মেজু আহমেদ খান
একবার-
অন্তত একবার,
ফিরে এসে দেখে যেয়ো
কেমন আছে সেকালের হৃদয় তোমার।
কেমন আছে সিংহনাদ
কেমন আছে শেষ বিকেলের পাহাড়ি পড়ন্ত রোদ
একবার-
অন্তত একবার,
ফিরে এসে দেখে যেয়ো
কেমন আছে সেকালের হৃদয় তোমার।
মানা'পুটা কেমন আছে
কেমন আছে কবি
কতো দিন দেখোনিকো
বলো তার ছবি?
একবার-
অন্তত একবার,
ফিরে এসে দেখে যেয়ো
কেমন আছে সেকালের হৃদয় তোমার।
কেমন আছে নানাবাড়ি পুকুরের জল
তোমারে দেখিতে চাহিয়া
করে আজো প্রেমিক সেনানে ওঠা ঢেউ কলকল...
একবার-
অন্তত একবার,
ফিরে এসে দেখে যেয়ো
কেমন আছে সেকালের হৃদয় তোমার।
কোথায় কেমনে শুই
কী করি আহার,
অথবা তো
কেমন আছে প্রিয় মামা
আবুল বাহার।
একবার-
অন্তত একবার,
ফিরে এসে দেখে যেয়ো
কেমন আছে সেকালের হৃদয় তোমার।
হতে কী পারে না এমন
জহিরুল হক বিদ্যুৎ
হতে কী পারে না এমন
অসহ্য গরমে ঘামে ভেজা দুপুর
মেঘেরা পায়ে দিয়ে জলের নুপুর
বৃষ্টি হয়ে নামলো তখন।
হতে কী পারে না এমন
চারদিক নীরব, নিস্তব্ধ সুনসান
তুমিহীনা হৃদয় তৃষ্ণার্ত আনচান
সহসা তুমি এলে তখন।
হতে কী পারে না এমন
মিটে গেল পেটের ক্ষুধা, হতাশা
বেড়ে গেল তাই বাঁচার প্রত্যাশা
দ্রব্যমূল্যে অস্থির যখন।
হতে কী পারে না এমন
সব ধনীরা হলো নিঃস্বের দাতা
দরিদ্ররা যদি পায় যাকাত ভাতা
থেমে যাবে দুখীর রোদন।
হতে পারে কল্যাণ শুদ্ধি বহু কিছুই
যদি পরের দুঃখ সবাই আপনে লই।
পোষা পাখি
মাহবুব হাসান
ভোরের আলোয় জানালার পর্দা সরাতেই,
তুমি আসো একমুঠো রোদ্দুর হয়ে আলোকিত করে
দিয়ে যাও আমার আঁধারে সাঁতরানো শূন্য ভুবন।
তুমি স্নিগ্ধ সকাল হয়ে
আমার নিঃশ্বাস ছুঁয়ে ছুঁয়ে তুমি বেঁচে রবে।
কষ্টের অষ্টপ্রহরে ঘুমো ঘুমো চোখে
স্বপ্ন হয়ে তুমি আসো এক সমুদ্র সুখ বিলাতে,
স্বপ্নডিঙায় চড়িয়ে সুখের ঢেউয়ে ভাসিয়ে দাও জীবন।
চোখের পাতায় স্বপ্ন বিছিয়ে
আমার বুক পাঁজরে পোষা পাখি হয়ে তুমি বেঁচে রবে।
ক্লান্ত দুপুরে তোমার পায়ের নূপুরে
ফিরে পাই অন্তরে সুরের ঝংকার,
কাশফুল হয়ে বুকের জমি ছুঁয়ে প্রেম পরশে
রাঙিয়ে দিয়ে যাও আমার থমকে যাওয়া শূন্য জীবন।
সুখের আল্পনা এঁকে আমার নীরব কল্পনায়
দুঃখের মাঝে অম্লান সুখ হয়ে তুমি বেঁচে রবে।
শ্রাবণ মেঘের দিন
বিচিত্র কুমার
উড়ু উড়ু মেঘগুলো...
চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে বৃষ্টির দিকে;
হৃদয়ের ভিতরে বিজুলি চমকায়,
গুড় গুড় করে দেওয়া ডাকে।
কোথায় তুমি বৃষ্টি এসো না ফিরে?
আনমনা বৃষ্টি থাকে যেনো সে দূরে?
না জানি কী অভিমান শ্রাবণের উপরে?
কালো কালো মেঘগুলো জমে হৃদয়ের গভীরে।
নদী-নালা খাল-বিল ডাকে বিতৃষ্ণায়
ঝকমকে আকাশ বিরহের গান গায়।
ভরা বর্ষার মৌসুমে তোমাকে খুব মনে পড়ে;
শ্রাবণ মেঘের দিনে,
তুমি না হয় এক পশলা বৃষ্টি হয়ে ঝরো
এসে আমার হৃদয় গহীনে।
বৃক্ষ বৃত্তান্ত
সাহেব মাহমুদ
মানুষের ইতিহাস পান করে বেড়ে উঠছে
অনেকগুলো বিষাক্ত বৃক্ষ
যার কোন ছায়া নেই
জঠরে ঠাসা জোছনা ক্ষুধা
চারপাশে বিস্তৃত লোভি ডালপালা
যেখানে মায়ার কোন সম্ভাবনা নেই
ভগ্নস্তূপে ক্ষিপ্ত পদধ্বনি তুলে
ভক্ষণ করে আশা ভাষা
আর ভালোবাসা
বুনোজাত যাদের জন্মপরিচয় ও নেই।
মেঘবালিকা
বারী সুমন
ঘুমন্ত রাতের ভেতরে উঁকি দেয়
শব্দহীন মেঘ বালিকা
স্পর্শের অতল গহ্বরে লুকিয়ে থাকে
কিছু নীরব নিবিড় সম্পর্ক।
অমাবশ্যা খোঁজে ফেরে পূর্ণিমাকে
গুড়ু গুড়ু দেয়ার ডাকে বালির বাসায়
মুখ লুকায় কচ্ছপেরা,
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় ঘুমন্ত রাত।
যে রাতের ভেতর উঁকি দেয়
শব্দহীন মেঘবালিকা।
কেউ নেয়নি খোঁজ
মুহিতুল ইসলাম মুন্না
এই যে দেখো এই যে বুকের ভিতর
আগলে রাখা মায়া আছে কত,
কেউ কি দেখে মনের ভিতর দুখ
রাতদুপুরে বাড়ে হৃদয়ের ক্ষত।
আঁধার নেমে এলে হৃদয় কাঁপে জ্বরে
কেউ কি দেখে মনের ভিতর দুখ,
একলা পাখি উড়ছে দেখো গগনতলে
কেউ নেয়নি কারো একটুখানি খোঁজ।