রবিবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

কবিতা

কাক্সিক্ষত প্রার্থনা

জাকির আজাদ

 

আমার পক্ষে দুর্নামে তুমি এতটা সবাক,

সত্যি আমাকে করেছে শতভাগ অবাক

তবে বিগত সময়ের যত মৌতাতে ছিলো কী ফাঁক

এখন অনির্ভরতায় আমি নির্বাক।

 

তাহলে আমার থাকুক সমস্ত দায়ভার,

বিশেষায়িত প্রেম ধাবিত না হোক আর

কাক্সিক্ষত বলয় হোক ল-ভ- ছারখার

নিঃস্ব রিক্তে আয়ুর জীবন হয়ে যাক পার।

 

আমার নিবেদনে আসুক বিষাদের গান,

প্রাণের উপর ঝড়–ক সব অভিমাণ

মেরুদ-ে পড়–ক অপবাদের সজোরে টান

ভেঙে হোক খান খান যে স্বপ্ন নির্মিত চলমান।

 

বেদনা অবগুণ্ঠন তুলে নিগ্রহ করুক বেসামাল,

আমার পৃথিবী লাঞ্ছিত, বঞ্চিত হয়ে হোক করুন হাল

লালায়িত দুঃখের তাপে হৃদয় শোকে লাল

নিদারুণ কষ্ট আবেগ উৎসাহের হলো কাল।

 

আমি মেনেছি হোক পরিণতি কিংবা অভিশাপ,

নষ্ট সময়ের নির্ধারিত চাপ

যাপিত জীবনের অগ্রগামী ধাপ

আমি বয়ে সয়ে গেলাম এই জীবনের হার সব উত্তাপ।

 

অচল গান

আহমেদ খায়ের

দুনিয়া তোমায় যতটুকু আমি চিনেছি 

ততটুকু ভার নিতেই আমি নুহ্য,

খেয়ালে হেয়ালে যতটুকু প্রেম কিনেছি

ভাবিনিতো তায় ছলনা এত উহ্য।

 

শরীরে তোমার যতটাই সবুজতা

গভীরে ততই ধুসর রুক্ষতায়,

বুকেতে তোমার যতটাই শীতলতা

উদরে ক্রমেই দহন তীব্র হায়!

 

ভেবেছি যতই প্রেমের করবো চাষ

হৃদয়ের দামে হবে তার লেন-দেন,

পেয়েছি ততই আশাহত বসবাস

পৃথিবী দিয়েছে দাম তার যেন-তেন।

 

আমি বলি প্রেম, এইতো আসল পণ্য 

হৃদয়ের দামে কিনে নাও ঠিক ঠিক

ধরা বলে ছাই, সেইতো অচল গণ্য 

কথা শুনে তোর হাসি পায় ফিক ফিক।

 

তবুও আমি গাই সে অচল গান

তবুও মনে ধরে রাখি বিশ্বাস'

তবুও যদি জেগে ওঠে কোন প্রাণ

তবুও আশায় আজো নিই নিঃশ্বাস। 

 

 

প্রশ্নের খোঁজে 

গাজী গিয়াস উদ্দিন 

নিজেকে যদি প্রশ্ন করো

তবে আর কোনো প্রশ্নই থাকে না,

প্রশ্নবাণে প্রতিনিয়ত জর্জরিত করো নিজেকে 

নিজেকে দোষারোপ করার সাহস রাখো।

 

সমুদ্রের কাছে আজীবনের ঋণ-অজ¯্র কৃতজ্ঞতা 

জমা পড়ে আছে মেঘের, 

অর্ণবের ভূ-গ্রাসী বপুর প্রশ্নজালে

বিধ্বস্ত বলে বর্ষা নামে, 

বসন্তকে যতোই অসহ্য লাগুক 

শীতের লেজ গুটানো যামে

আমরা স্বস্তি খুঁজি- প্রশ্ন করি না।

 

প্রশ্নোত্তরের খোঁজে জীবন কেটে যায় 

এরপর হায় কে খোঁজে প্রশ্ন নতুন? 

 

টুকরো টুকরো ইচ্ছে

রবিউল রতন 

ভালোবাসার দীপশিখা নিভে 

ঘোরলাগা অমানিশায় জন্মান্ধ বাউল! 

পা হারিয়েছে পথ,

চোখ হারিয়েছে রহস্যময় আঙুল!

টুকরো টুকরো ইচ্ছেগুলো,

দীর্ঘশ্বাসের নোঙর ভেঙে একান্ত গোপন।

 

তোমাকে বলার ইচ্ছে ছিল

ভালোবাসি... ভালোবাসি,

গতকাল রাতে- তোমার অঝোর দাহগল্পে

মৃত্যু হয়েছে তার; আ-কী দুর্ভাগ্য!

চিৎকার করে বলতে চেয়েছে,

আজ অফুরন্ত বৃষ্টি হোক-ভিজে যাক গহীন প্রান্তর 

বৃষ্টিস্নাত ভালোবাসায় কদমে হোক উতরোল। 

 

কিন্তু কী গভীর আফসোস,

আজ তার কবরে-ঘাসে কী করুণ বৃষ্টি! 

মৃত্তিকাগর্ভে নিথর দেহ পাথর চোখ! 

অন্ধকারে ভালোবাসার আমৃত্যু দহনের গান।

 

 

কালসাপ

সোলায়মান জয়

ফলাফল মিললেও সব অংকের সমাধান হয় না

প্রেম আপন করে পেলেও সবাই সুখী হয় না

দুধকলা খেয়ে খেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে কালসাপ 

আর ক্লান্তিলগ্নের ঘুমে স্বপ্ন দেখে সূর্য গিলছে।

 

স্বপ্ন দেখায় নিষেধাজ্ঞা থাকা চোখ গালে হাত দিয়ে বসা

কপাল ঢেকে গেছে চুলে এখানে ভাগ্যের কী দোষ?

জন্মদাগে যার অশুভ চিহ্ন

তাকে প্রাচীন সমাজ ধিক্কার ছাড়া কী দেবে?

সূর্য ঘুমালে জেগে উঠে ডোরাকাটা বেদনা 

প্রত্যেকটা বেদনা মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ

যেখানে মায়ার মুখশ্রীর পাহারায় প্রথা নামের কালসাপ।

 

 

শ্রাবণগাথা

আর. কে. শাব্বীর আহমদ 

নীল আকাশে রুপোর সাজে দেখি মেঘের ভেলা 

মন ওড়ে যায় বৃষ্টি কণায় ভিজতে শ্রাবণ বেলা

ভিজবে তুমি এসো।

 

ঝর ঝর বৃষ্টি ঝরে চাঁপাকানন সিক্ত করে

স্বপ্ন আঁকি নতুন দিনের একলা নীরব ঘরে

গল্প হবে এসো।

 

কিষাণ বধূ বৃষ্টি ছোঁয়ায় তৃপ্তি  মাখে বুকে

সোনার ফসল ফলবে মাঠে ভরবে হৃদয় সুখে

দেখবে তুমি এসো।

 

শ্রাবণ ধারায় বন-বনানী সবুজ ডানা মেলে

সুখের নদী যায় বয়ে যায় রুপোর সুধা ঢেলে

আনবে সুধা এসো।

 

শ্রাবণ জলে ডুবে ডুবে আনবো হীরার মালা

তোমার প্রেমের শুদ্ধ ছোঁয়ায় ঘুচবে দুঃখ জ্বালা। 

 

 

শ্রাবণ মেঘের দিন

বিচিত্র কুমার 

উড়ু উড়ু মেঘগুলো..

চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে বৃষ্টির দিকে;

হৃদয়ের ভিতরে বিজুলি চমকায়, 

গুড় গুড় করে দেওয়া ডাকে।

কোথায় তুমি বৃষ্টি এসো না ফিরে? 

আনমনা বৃষ্টি থাকে যেনো সে দূরে?

 

না জানি কী অভিমান শ্রাবণের উপরে?

কালো কালো মেঘগুলো জমে হৃদয়ের গভীরে।  

নদী-নালা খাল-বিল ডাকে বিতৃষ্ণায়

ঝকমকে আকাশ বিরহের গান গায়।

 

ভরা বর্ষার মৌসুমে তোমাকে খুব মনে পড়ে;

শ্রাবণ মেঘের দিনে,

তুমি না হয় এক পশলা বৃষ্টি হয়ে ঝরো

এসে আমার হৃদয় গহীনে। 

 

 

কবরের কাছে

মুহাম্মদ নূর ইসলাম

কবরের কাছে এলেই থমকে দাঁড়াই

সাহস করে ভয়ে দু'পা বাড়াই!

কেউ যেন টের না পায় 

কারো ঘুম ভেঙে না যায়;

আমি নিরবে কাঁদি! অশ্রু ঝরাই

এখানে এলেই মিশে সকল বড়াই।

 

এখানে ঘুমিয়ে আছে শিশু

জান্নাত বাগিচার ফুল,

এখানে আমাকেও আসতে হবে

হাজির হলে মালাকুল।

 

এখানে এলেই রোজ শিউরে উঠি

ক্ষমার আশায় তাঁর কদমে লুটি!

এখানে ভেদাভেদ নাই

নিতে হবে সবার ঠাঁই!

এখানে এলেই ভিজে নয়ন দুটি

হলেও তো হতে পারে এখন ছুটি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ