কবিতা
অনুকরণে অনুসরণে
আকিব শিকদার
রাতের নির্জনে তুমি করাত হাতে নামো রাস্তায়।
গোপনে অন্যের বাগানে চারাগাছ কেটে আসো।
সকালে দেখো, একি! তোমার বাগান
কেটে গেছে অন্য করাত চালক, গোপনে।
গলির মোড়ে ভাতিজা বয়সি ছেলেটা সিগারেট ফোকে।
দেখেও না দেখার ভান করো। অন্যের ছেলে
নষ্ট হচ্ছে, তোমার কী!
এদিকে তোমার মেয়েটা দশজন মুরব্বিকে সাক্ষী রেখেই
ছেলেদের সাথে ডলাডলিতে মাতে।
তারা কেন ফেরাবে! তোমার মেয়ে তো তাদের কেউ না...
অথচ, তুমি করাত চালানো স্বরযন্ত্র থামালে
কমে যাবে পৃথিবীর একজন গোপন বৃক্ষনিধক।
সিগারেটখোর ছেলেটাকে ফেরালে
অবক্ষয় থেকে বাঁচবে একটি সন্তান। আর ঠিক তখনই
অনুকরণে অনুসরণে বদলে যাবে সমস্ত পৃথিবী।
হে কবিতা
হাসান নাজমুল
মনের নিগূঢ় কথাগুলো তোমাকে বলতে পারি নির্দ্বিধায়
যখনই হই নিরুপায়
তুমিই উপায় খুঁজে দাও, থাকো আমার নিকটে
জীবনে যা কিছু ঘটে
তুমি জানো সব,
তুমি আমার বেদনা, তুমিই উৎসব;
তুমি আমার পৃথিবী, হে কবিতা;
তুমিই তিমিরবিদারী সবিতা,
যদি আমাকে সবাই করে প্রত্যাখ্যান
জানি, তুমিই দেখাবে হৃদয়ের টান,
বৃষ্টির মতন যদি নেমে আসে অন্ধকার রাত
তুমিই দেখাবে প্রশান্ত প্রভাত,
বিতাড়িত হলে তুমি দেবে ঠাঁই
তুমি ছাড়া একা একা হতাশায় তড়পাই,
প্রণয়পেয়ালা তুমি; তুমি আলোঘর তুমি মন-ঘর বঞ্চিতের ব্যথাঘর,
হে কবিতা, তুমিই আমার কণ্ঠস্বর।
জীবনঘড়ি
খান মেহেদী মিজান
ক্রয়কৃত ঘড়ির কাটার শব্দ সময় মেপে
ঘুম যাই, জেগে উঠি কর্মালস্য চেপে
ভিতরের ঘড়ির কাটার শব্দে মাপিনি সময় কত?
ধমনি ধ্বনিতে সে ঘড়ির সময় কম হয়নি গত!
তবুও জীবন যাচ্ছে চলে কর্মচ্ছ্লে অবিরাম,
এ ঘড়ির কাটা থেমে গেলে হবে চিরতরে বিশ্রাম।
পুনরায়
হারুন আল রাশিদ
পথ চলা থামে যদি বেদনার ভারে
আশাগুলো নিরাশার বাধা খেয়ে হারে
হতাশায় পৃথিবীটা হয়ে যায় ছোট
বলে না তো কেউ এসে ঘুম থেকে ওঠো
'সাহসীরা করে শুধু তারকার খোঁজ
কাপুরষ ভীরু মনে পিছে থাকে রোজ।'
তবে তুমি থেমে যাবে? নেমে যাবে নিচে?
পড়ে রবে স্যাঁতস্যাতে আঁধারের বিচে?
এটা হলো পরাজিত মানুষের কাজ
যার মাঝে সাহসের নেই কোনো ঝাঁজ।
হে যুবক তুমি কেনো তার মতো হবে?
আজীবন আশাহত বালুচরে রবে?
পুনরায় জেগে ওঠে দুনিয়াকে বলো,
এই দেখো পথ চলা আজ শুরু হলো।
স্রোতাল
মজনু মিয়া
সাঁতরাইস না ¯্রােতাল নদী ভরা যৌবনে
কোন দিন যেন ভেসে যাবি নিঠুর প্লাবনে॥
ষড়ঋপুর ধোঁকায় পরে আন্দাজে ঢিল ছুঁড়িস না
নিজের ঢিলে নিজে মরবি তুই কী তা বুঝিস না
রূপের মায়াজাল আছে
নানান কথার ছল আছে
স্বপ্ন দিয়ে মজা করবে দিবা স্বপনে॥
যত পারিস সংযত থাক, লোভের ফাঁদে পড়িস না
স্রোতনদী তোর চরায় ফেলবে কুজন তুই ধরিস না
ইশারাতে ডাকবে কাছে
বলবে কতকিছু আছে
ডুবাইয়া তার মায়া রসে জ্বালাবে গোপনে॥
স্মৃতি
প্রিয়তু শ্যামা
সময়ের খাম খুলে বসলে
আজকাল স্মৃতি খোলে না,
স্মৃতি যেন ধোঁয়াশা আবছায়া!
সময়ের ভারে স্মৃতিরা বড়োবেশি বয়স্ক!
বিসর্জন, বলিদান, উদ্বাসন সময়ের তরেই প্রকট!
নৈঃশব্দের আড়ালে পড়ে যাচ্ছে
কচিকাঁচা সবক'টা স্মৃতি!
বয়স্ক স্মৃতি আশ্রয় পাচ্ছে রাত্রির কাছে!
স্মৃতির অরুণোদয় যেন অরুণাস্তের কাছেই আটকা!
এই তো মুক্তি!
এখানেই শান্তি!
বয়স্ক স্মৃতি অস্তমিত নব স্মৃতির উদয়নে।