শুক্রবার ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

জীবনঘুড়ির আকাশ দেখা

সাজজাদ হোসাইন খান

ঘুমাতে চাইলেও ঘুম আসি আসি করে আসে না। কেবলই পালাই পালাই। ঘুরেফিরে আবার বইয়ের পৃষ্ঠায়। এসব বই পাঠ্যবই না। তাহলে কি অপাঠ্য বই ? তাও না। পরীক্ষা টরিক্ষায় এসব থাকে অনেক তফাতে। ডাইনে বাঁয়ে নজর ফেলে তারপরই চোখ রাখতে হয়। এ অভ্যাসটা যে কোত্থেকে এলো। তাই মাঝেমধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়তো আব্বার বকাঝকা। পরীক্ষা এই তো এলো বলে। সাথে আম্মাও যোগ দেন। বলেন আসল বইয়ে চোখ রাখো। এই তুফানে মাথা নিচু করে বসে থাকি। দস্যু বাহারাম, দস্যু মোহন এসব কি নকল বই ? মগজের অলিগলিতে এমন চিন্তা হাঁটতে থাকে। গলির মাথায় মাথায় দেয়াল। এ দেয়াল ভঙবো কি করে? টক্কর খাই। চক্কর খাই। তারপর কপালে গোলআলু। নাটের গুরু মিজান। সেই এ পথে নামিয়েছে আমাকে। মিজান থাকে বেচারাম দেউরিতে। এক ক্লাসেই পড়ি আমরা। সেই বইয়ের জোগান দেয়। পড়তে পড়তে ধরতে গেলেই চিৎপটাং। চাকু-বন্দুকের ঝনঝন আওয়াজ। বড় বড় চোখ, লাল। মাঝ বরাবর আসতে না আসতেই বুক ধরফর। ধরফরতো হবেই। দস্যু-ডাকুর কায়কারবার। আব্বা জানালেন তোমার বইগুলো দেখেছি। মোটেও ভালো না। এসব বই পড়লে কেবল সময় পার। জানার কি আছে? ভাবনারইবা কি থাকে। ডাকাতি করা কি ভালো কাজ। মোটেও না। সামনে পরীক্ষা পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠায় বসিয়ে রাখো মন-চিন্তা। আম্মাও আব্বার পিছন পিছন। কি আর করা। দস্যু বাহারাম আর দস্যু মোহনকে মিজানের বাড়ির ঠিকানা বলে দিলাম। বেচারাম দেউরির গলিতে পা রাখলেই দেখবে দাঁড়িয়ে আছে । তোমাদের সাথে নাই আমি আর। দস্যু ডাকুরা আবার ভালো মানুষ হয় না কি! বুদ্ধু বুরবুকরাই এমন ভাবনায় পাখ মেলে। না হয় মতলববাজ। লুটের পয়সায় গরীব পালা। যতসব কুচিন্তা।

ভাবনরা থলিতে উথাল পাতাল। ঝিমুনি আসে চোখ, বুকেও। বসে আছিতো আছিই। টেবিলে বইয়ের পৃষ্ঠা পলটি খাচ্ছে। আম্মার ডাকে হুঁশে এলাম। সূর্য উঠে যাচ্ছে উপরে। তরতর করে। স্কুলের সময় দাঁড়িয়ে আছে চেয়ার ঘেঁষে।তখনি দস্যু মোহনরা মেঝেতে উপুর। ক্লাসে মন বসে না। চোখের মণিতে ছাই, ওড়াউড়ি। দস্যু ডাকুদের আখড়ায় মগজ-চিন্তা। হালীমরা জিজ্ঞেস করে ব্যাপার কি! আমার ঠোঁটে আঙুল। মিজান আজ আসেনি। থাকলে কথা বলতাম। কথা বলার কি আছে ? দস্যু-ডাকাতরা তো খারাপ, বেয়াদব বেতমিজ। এটিই শেষ কথা। সত্য বয়ান। রাতে মাহতাব চাচা বাহারাম- মোহনদের গাঁও-গেরামে নিয়ে যান। সেখানে ঝড়ঝাপটা। লাল লাল চোখ  ঘুরাফেরা করে।  গরম বাতাসের তুফান। উলট পালট গাছ-ডাল-পাতা। দৌড়ে আসে ভয়। কিছুক্ষণ বাদে ভয়েরা দলছুট।  অন্ধকারে হৈ হাঙ্গমা লুটপাট। দিন দুপুরে দয়াল ফকির। ভন্ডামি আর কাকে বলে। এসব নিয়ে যারা বই করে পাতা ভরে তারাও বা কতটা সাদা। আমিতো বলি গাধা। মাহতাব চাচা এতদূর আসতেই থামিয়ে দিলেন। বললেন এখন ঘুমাও। কাল কথা হবে আরো। তুমি খুব রেগে আছ। রাগটা বাগে আনো। লেখকরা তো কত বিষয় নিয়ে কলম ধরেন। গালগপ্প শোনান। এটিও একটা বিষয়। ভালো মন্দতো আছেই। কেউ ভাবে সূর্য, কেউ ভাবে চাঁদ। ঝলমল তারা কারো কারো কলমের আগায়। আমি কিন্তু মোটেও ইজ্জত দেই না ফালতু বিষয়কে। লেখককেও। সময় যায় কিন্তু যায় না অন্ধকার। জানালাম চাচাকে। মাহতাব চাচা চুপ মেরে গেলেন। বাইরে নিঝুম, শব্দহীন। পরে জানলাম তার নাম আবুল কাশেম। দস্যু বাহারাম যে লেখকের মগজের জেবে বসে থাকে চুপচাপ। তারপর কলমের আগায় এসে দেখে এদিক সেদিক। সুযোগ বুঝে লাফিয়ে পড়ে খাতায়, কাগজে। দস্যু মোহনেরও ঠিকানা শশধর দত্তের আখড়ায়। এমন দস্যু মার্কা বই অনেক আছে আরো। বললাম না এসব ডাকু ফাকুর নাম মুখে আনতে চাই না। মাহাতাব চাচা হাসতে হাসতে জানালেন জ্ঞানের এটি পড়ার রাজ্য, জ্ঞানের বাগান। এ বাগানে চান্দি ঠান্ডা রাখতে হয়। ফুলের সুবাস নজরে মাখো। বদবু রাখো তফাতে। বাইরে তারার বৃষ্টি। লাফাচ্ছে জোনাকি অন্ধকারের কাঁধে। উঠানে। মাহতাব চাচা চুপ মেরে আছেন। ঘুম ঘুম চোখে হয়তো। আমার চোখেও ঘুমপরীদের উঠ-বস। জানালার শিক ফাঁক করে বাতাস হু-হু।

যাচ্ছে সময়। যাচ্ছে দিন, যাচ্ছে রাত। আমিই কেবল বেদিসা। ক্লাসে ক্লাসে ভয়ের বাতাস দাঁড়িয়ে থাকে।  স্যারদের গলাও কাহিল কাহিল। এখন শুধু পড়া বাতলে দেন। পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় আঙুল রাখেন। বুঝাই যাচ্ছে এসব পরীক্ষার  আলামত। কানের ধার ঘেঁষে হাঁটছে। কেবল তারিখ ঘোষণার বাকি। টিপটিপ মাথা-মগজ। অনেক দিন পর। এমন তো হবার কথা নয়। অন্য সময়তো আনন্দ এসে জাবরে ধরতো। কিরে ভাবছিস কি! পরীক্ষাটা তাড়াতাড়ি হয়ে গেলেই তো ভালো। এক লাফে দশম ক্লাসে। কি মজা। কি মজা। মুহিবুর লিনুও যোগ দিলো হালীমের চিন্তার পাড় ঘেঁষে। আমার মন মেজাজ না ভালো না খারাপ। দস্যু বাহারাম আর দস্যু মোহনরা এই দশা করেছে। বইয়ের পাতাগুলো যেনো ঝরাপাতা। উড়ছে বাতাসে। এখন উপায়?  (চলবে)

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ