কবিতা
ভবিতব্য
শ.ম. শহীদ
কার কথা বলবো? কে আছে সংগী আমার?
রসুনের কোয়াগুলো আলগা হয়ে যে যার-
আপন সত্তায় বিকশিত আজ তারা সবে
ভাবছে না কেউ এই দিন তাদেরও যে হবে!
তারাও তো নিঃসঙ্গ হবে ঠিক আমার মতো
তখন তো বুঝবে এ বুকের শূন্যতা- কত
দেখে যেতে পারবো না, তবু ইচ্ছেরা হাসে
ভবিতব্য স্বপ্নের ডানা মেলে- হুটহাট আসে।
চারপাশে অন্ধকার
মুহাম্মদ রেজাউল করিম
চারপাশে অন্ধকার জ¦লে
কীভাবে আর পথ হাঁটি বলো
জেগে ওঠে ঘুম
মানুষ ঘুমায়
সামনে হাজার বছরের পথ
মানুষতো পথ হাঁটে না
সামনে শুধু অন্ধকার
বিপন্ন সুখ
জ¦লে ওঠে কষ্টের শিখা
মানুষ তবু নীরব নিশ্চুপ
তবু জেগে ওঠে ডরভয়
হে মানুষ
ভয় পেয়ো না আর
সামনে চলো নির্ভীক
উড়ে যাবে অন্ধকার
সুখ নেমে আসবে পৃথিবীর পথে
হে মানুষ
থেমে যেয়ো না আর
তাঁর ডাকে সাড়া দাও।
নিজের কাছেই নিজে
এ কে আজাদ
একবিংশ শতাব্দীর আমি এক কবিতা-শ্রমিক।
শব্দের জাল বুনি, স্বপ্নের ফেরি করি,
মৎস শিকারীর মতন সারা রাত ধরে বসে থাকি আলোকের সন্ধানে।
আমি তো অন্ধকারের খোঁপায়
গুঁজে দিতে জানি জোনাকির ফুল,
অথচ বিরল অমাবস্যার এক সর্পিনী প্রতিনিয়ত দংশন করে আমাকে।
কালো ভ্রমেরর দল সারাক্ষণ আমার নরম শরীরে ফোঁটায় বিষাক্ত হুল।
আমি কি করে খুঁজে আনি জোনাকির ফুল?
আমার অসহায় বুকের ভেতরে আমি কেবল
খরস্রোতা একটা নদী বানাই, বিশাল এক নোনা সাগর বানাই;
আর চিরন্তনী আলোর উৎসমূলের কাছে
প্রতিদিন বারে বারে নত হই,
এভাবেই প্রতিদিন নিজের কাছেই নিজে কেবল গত হই।
দাসত্ব
আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন
মানুষের মর্যাদার সর্বনি¤œস্তরের নাম দাসত্ব
দাসত্ব মানুষের দেমাগ দুর্বল করে দেয়,
পরাধীনতা ও দাসত্বের বেদনা তীব্র,
দাসত্ব মানব দেহের অভ্যন্তরেই মৃত্যু বরণ করে,
নিজ আত্মাকেও তখন বোঝা মনে হয়।
দাসত্ব জাতিসত্তাকে বিচ্ছিন্ন করে,
দেহ ও মগজে পুরুষত্বহীনতা নির্মাণ করে
ফলে পরাধীন ব্যক্তি হয়ে থাকে জীবন্মৃত।
আমরা অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক
দাসত্বের অধীন।
আবার সর্বোচ্চ মর্যাদার নাম দাসত্ব,
সেই দাসত্ব শৃংখলতার, সেই দাসত্ব নিয়মের।
ঐতিহ্যের শৃংখলতা মানুষের জন্য হয়ে
সম্মান ও গৌরবের,
সেটি আত্মপরিচিতির জন্য দোজাহানে সম্মানিত।
সেই দাসত্ব মহান স্রষ্টা ও মহান রবের দাসত্ব।
সেখানে তৃপ্তি আছে, সেখানে আনন্দ আছে।
জোছনা জোছনা খেলা
সাহেব মাহমুদ
সামনে বর্বর অন্ধকার দাঁড়িয়ে আছে
দিগন্তের দুয়ার খুলে সব দেখে
মানুষের দর্পণে সূর্য ডুবে যায়
আমাদের ঘর অথচ মাকড়সার কালো জাল
দেয়ালের গায়ে গায়ে ফাটল
মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমায় রসসিক্ত জঠরে
দেশপ্রেমিক সব ডিগবাজি খেতে খেতে নিলামে উঠছে
মানুষ জলহীন সমুদ্রে জোছনা জোছনা খেলছে।
নক্ষত্রের ক্রন্দন
নকুল শর্ম্মা
হিসেবের ফর্দগুলো সর্বস্বান্ত;
বিষম পারাবারে দিকভ্রান্ত নাবিক,
কাকতাড়ুয়া দাঁড়িয়ে আছে গ-ি আঁকা ছকে।
বৃত্তের ব্যাস ব্যাসার্ধ পরিধির সীমানা ছাড়িয়ে
ছিটকে পড়া কোনো এক নষ্ট নক্ষত্রের ক্রন্দন,
ভ্রুক্ষেপে নিদারুণ পদাঘাত।
বেদম প্রহারে ক্ষতবিক্ষত
অযাচিত স্বপ্নরা মৃত্যু যন্ত্রণায় করছে ছটফট,
রক্ত প্রলেপে ঢাকা অন্তরের স্বপ্নপুরী।
অপেক্ষার প্রহর মিলিয়ে যায় কালের গহ্বরে।