কবিতা
চিরন্তন
জাকির আবু জাফর
নতুন দিনের উত্থান যদি বোঝো
স্বাধীন জাতির মর্যাদা তবে খোঁজো।
মাটির গন্ধে বুকে লেখো তার নাম
রক্তের চেয়ে আরও বেশি তার দাম।
আরো বেশি তার গৌরব বুঝেছেন
ফাঁসির কাষ্ঠে দাড়িয়ে সূর্যসেন
কিছুতেই যারা মানেননি অধীনতা
সেই মেয়েটিই নাম তার প্রীতিলতা
সাহস জ্বালিয়ে স্মরণীয় কত বীর
ইতিহাস খ্যাত নেসার আলী তিতুমীর।
সংগ্রামী যারা চিনেছে অগ্নিপথ
বাহাদুর এক সেই হাজী শরীয়ত।
মানুষের পথ এখনও রক্তে লাল
কেনো নেই তবু তেমন শাহজালাল
দুঃখ যাতনা এতো অশ্রুর বান
কোথায় খালিদ কোথায় খান জাহান !
সব অচেতন সকলের চোখে ঘুম
আসবে না বুঝি আর শাহ্ মাখদুম।
লুট হয়ে গেছে মানুষের অধিকার
তবু কেনো আর আসে না বখতিয়ার!
হয় তো আঁধার দীর্ঘ একথা ঠিক
সকল আঁধার পৃথিবীতে সাময়িক।
তারেক মুসারা হয় না কখনো শেষ
ঘটবে নতুন সূর্যের উন্মেষ।
পাথর খন্ড
নাদিরা বেগম
হৃদয়ের রক্তনালীর শতভাগে
দুঃখ জমে জমে হয়ে গেছে একটি পাথর খন্ড
জীবনের দুঃখের পৃষ্ঠার পাতা উল্টাতে গেলে
ব্যথার তীব্রতা যায় বেড়ে।
চোখের নেত্রনালী দাবড়ে বেড়ায় সুযোগ পেয়ে
তৈরি করে চোখের জলের এক স্রোতস্বিনী নদী
জলতরঙ্গে ঢেউগুলি আছড়ে পড়ে বুকের মাঝে
প্লাবিত করে হৃদয়ের রাজপথ অলিগলি।
হৃদয় পোড়া রোদ্দুর হাতছানি দেয়
নতুন করে সুখের স্বপ্ন দেখায়
হৃদয়ের দোলাচলে ভ্রমরা সুখের পরশের
গুন গুনিয়ে গান গায়
দুঃখের নীল সমুদ্রে ডুবে যাওয়া হৃদয় নামক
এক খন্ড পাথরের আজ আর ফিরবার পথ নাই।
শ্যামপাখি
তাসনীম মাহমুদ
সভাসদগণ মস্ত বড়ো পানদানী নিয়ে
বসে আছেন আলিশান ডাইনিং টেবিলে
হুকুম করছেন
আমোদ, আহ্লাদ
আয়েশ করছেন।
আলভাঙা মৌমাছি সুড়সুড়িয়ে
সেবায় তাজিম করছে
ফরমায়েশ খাটছে।
তেলাপোকার দল
পানপরাগ, চমনবাহার, চেরীর লোভে
ঘুরঘুর করছে আর চটি চেটে চেটে জিহ্বা
তেলতেলে করে ফেলছে; কি এক দারুণ দৃশ্য
যেনো রৈরবমেলা...!
শার্দুল মনে করছে
শ্যামপাখিটি কতই না বোকা
তাই সামনে ঝুলিয়ে রেখেছে
আশ্বাসের মনোহারী মুলা! অথচ:
সভাসদগণ
আলভাঙা মৌমাছি
তেলাপোকা আর
শার্দুল জানে না
পাখি উড়তে জানে; গাইতে জানে
জানে প্রতিবাদ প্রতিরক্ষা প্রতিকারের
সুনিপুন কৌশল; চারুকারু কারবার।
শ্যামপাখি!
যার আচরণ গম্ভীর
যার কণ্ঠ স্পষ্ট
যার পালক মোলায়েম
যার উড়াল ক্ষুরধার
যার বিস্তীর্ণ বিচরণ
তোমাদের ভ্রু’কে কুঁচকে দেয় নাইনটি ডিগ্রি
যার আভিজাত্যের ঠোঁট দেখে মনে হয় আত্মগরিমা।
দ্বন্দ্বমালা
সোলেমান রাসেল
নিজের সাথে নিজের এখন দ্বন্দ্ব ভীষণ হয়
ভেতর থেকে আরেক পুরুষ ওজন মেপে লয়-
ভুলগুলোকে আলগা করে মূল্যহীনের দায়
বাতাস দিয়ে যেমন চিটা আলগা করেন মায়----
গুজব
এবি ছিদ্দিক
গুজব তো ছড়ায় জনস্রোতেই
বোধ বিচার ছাড়া গোগ্রাসে গিলেও
বলি, কানে হাত দাও; পরখ করো
বিশ্বাসকে যুক্তির ছাঁচে রেখে দাও
কেউ তোমাকে কিচ্ছু বলবে না
মিছামিছি কেনো বল - দারুণ মিষ্টি!
মিঠাইয়ের সাম্প্রতিক পাতিল আনো তো
ধরো, বিশ পঞ্চাশ বছরের পুরনো হলেও চলবে
তবে কিসের বড়াই কর?
তুমি না নিজেকে বিদ্যার ঢেঁকি প্রচার করো!
কারা আগে গেলো একবার দেখাও তো...
আচ্ছা, অপেক্ষা কর শীগগিরই খোলাসা হবে।
শূন্যতার গভীরে
ফজিলা খাতুন
আমি আকাশের নিচে খুঁজছি তোমাকে, খুঁজেছি শূন্যতার গভীরে।
আমি রোদের মধ্যে পাতালে খুঁজছি তোমার ছদ্মনামের পথে।
শূন্যতার দালানে ক্ষণের ধূসর স্পর্শ,
অপার আকাশের নিচে আছে কি গোপন বর্ণনা?
চিঠিপত্রের মুচড়ি আকাশের রঙে পাল্টে,
আমি অপার্থ লিখি শব্দগুলি এই কলমে।
শূন্যতার আবির্ভাবে দেখতে পাই তোমাকে,
এই কবিতার অতীন্দ্রিয় অনুভূতির আড়ালে।
আমি আকাশের নিচে খুঁজছি তোমাকে, খুঁজেছি শূন্যতার গভীরে।
আগামীর স্মৃতি
আরিফ হোসেন সবুজ
আজকের দিন শুধু আগামীর স্মৃতি
ঘটে যাবে বিচ্ছেদ ভেঙে সব প্রীতি,
সময়ের ব্যবধানে কে কোথায় রবো
জানি নাতো কে কোথায় পেশাজীবি হবো।
একসাথে চলাফেরা কত ভালোবাসা
রাগ অভিমান কিবা মুখ ভরে হাসা,
সবকিছু জীবনের কাছে যাবে হেরে
বাস্তবতার সাথে উঠবে না পেরে।
পত্র দিয়ো
মধুমঙ্গল সরকার
ভালোবাসার উষ্ণ অমিয় আবেশে নয়,
শুধু কেমন আছো তা জানিয়ে
একখানা পত্র দিয়ো আমায়।
সর্বসাধারণের মতো বহুলপ্রচলিত মিথ্যা
ভালো আছি কথাটি নয়,
ঠিক কেমন আছো তা জানিয়ে
একখানা পত্র দিয়ো আমায়।
খুব দাপটে বুকপকেটে
যে স্বপ্ন করেছিলে সঞ্চয়,
কতটুকু অবশিষ্ট তার কতখানি অপচয়
তা জানিয়ে একখানা পত্র দিয়ো আমায়।
শত ব্যথা কতো কথা অস্ফুট স্বরে
খুব গোপনে মরে যায় হৃদয়ের গহীন গহ্বরে
তোমার-ও কি এমন হয়! কোনো মানুষের তরে।
তুমিও কি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ো
ফেলে আসা সে দিনের মোহ মায়ায়,
তোমার-ও কি স্মৃতিরা পোড়ায়
আর চোখ ভিজে যায় কান্নায়
তা জানিয়ে একখানা পত্র দিয়ো আমায়।
এখন অনেক রাত
জাহিদ হাসান রনি
দরজা-জানালাকে জাপ্টে ধরেছে দেয়াল
অতঃপর ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
নির্লিপ্ত আকাশ একা, বড় একা!
গভীরতম নীরব কান্নায় বৃষ্টি না হয়ে
ঝরে শিশির।
ছাদের কার্নিশে দীর্ঘতর ছায়া ও দীর্ঘশ্বাস !
কপাট হীন আকাশ থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠের
এখানে এখন অনেক রাত!