কবিতা
চশমা চোখে ঘুমায় মজিদ
সায়ীদ আবুবকর
মজিদ মিয়া চোখে দেখতো অল্প,
ঝাপসা ঝাপসা লাগতো তাবৎ জিনিস;
শুনলো সে এক কবিরাজের গল্প
যার কাছে সব রোগ পলকে ফিনিশ,
একটা রোগের একটা ওষুধ দেয় সে,
বিনিময়ে ষোল আনা নেয় সে।
ছুটলো মজিদ কবিরাজের কাছে,
বললো, “আমি কম দেখি দুই নেত্রে;
এই অসুখের ওষুধ কোনো আছে?
বললো, “আছে। এই অসুখের ক্ষেত্রে
লাগবে, মিয়া, কেবল একটা জিনিস;
সেই জিনিসে সব ঝামেলা ফিনিশ!
“কোন সে জিনিস মূল্য কত আনা?
“ফেলুন ষোলআনা তাড়াতাড়ি।
এমন জিনিস দেবো, হলেও কানা,
দেখতে দেখতে ফিরে যাবেন বাড়ি।”
বললো মজিদ, “আনার অভাব নাই হে
এই সে জিনিস, এটাই আমার চাই হে।”
কবিরাজ তো ষোলআনা নিয়ে
দিলো একটা চশমা হাতে তুলে,
দেখলো মজিদ চোখে সেটা দিয়ে
লাউয়ের মাচায় লাউ রয়েছে ঝুলে,
সজনে গাছে একটা দোয়েল একা
ফকফকাফক যাচ্ছে সবই দেখা।
মজিদ মিয়া বোগল বাজায় সুখে,
কিছুই এখন ঝাপসা দ্যাখে না সে;
খুশিতে তার গান আসে রোজ মুখে,
হা-হা করে হাসে সে উল্লাসে।
ঘুছে গেছে মনের যত কষ্ট-
ছোট্ট পোকাও দ্যাখে সে স্পষ্ট।
কিন্তু সেদিন ঘুম থেকে সে উঠে
মুখটা যে তার করে রাখলো গোমড়া,
আসলো শুনে বন্ধুরা তার ছুটে,
বললো মজিদ, “যাও ফিরে আজ তোমরা;
কী হয় রাতে, দেখি আগে” বলে
শোয়ার ঘরে গেল মজিদ চলে।
বন্ধুরা তার ফিরে গেল বাড়ি,
কিন্তু কারো ঘুম হলো না রাতে;
সকালবেলা ছুটলো তাড়াতাড়ি
দেখা করতে মজিদ মিয়ার সাথে।
মজিদ মিয়া, দেখলো তারা গিয়ে,
ঘুমিয়ে আছে চোখে চশমা দিয়ে।
বললো তারা, চশমা কেন চোখে?
ঘুমের ভেতর চশমা কিসে লাগে?
পাগল কিন্তু বলবে তোমায় লোকে;
এমন কা- কেউ দ্যাখেনি আগে।
বললো মজিদ, সবাই তবে শোনো,
বলবো না, ভাই, মিথ্যে কথা কোনো,
স্বপ্ন দেখি শেষরাতে একখানা,
দারুণ স্বপ্ন, গেছি পরীর দেশে;
কিন্তু এ-কি! হলাম কি ফের কানা,
দেখতে কিছুই পাইনে হেথায় এসে!
শুনতে পাচ্ছি সবার কথা পষ্ট,
কিন্তু শুধু দেখতে হচ্ছে কষ্ট।
চশমা পরে ঘুমিয়ে তাই আছি,
ঝাপসা যেন দেখতে হয় না কিছু;
হোক সে পরী কিংবা মশা-মাছি
অথবা তা দিনাজপুরের লিচু,
ফকফকাফক দেখতে যেন পাই-
চশমা পরে শুয়ে আছি তাই।
বন্ধুরা তার উঠলো হেসে হা-হা
বললো হেসে, “এই ঘটনা তবে?
বললো মজিদ, “সত্য কথা যাহা,
বলতে কেন শরম পেতে হবে?