গণমাধ্যম বর্জনের সিদ্ধান্ত
বিজ্ঞান-প্রযুক্তির এই যুগে গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়ার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমরা অবগত। তবে ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়ার নানা প্রকরণ ও বৈচিত্র্য সম্পর্কে বোধহয় শেষ কথা বলা যাবে না। এর নিত্যনতুন সংস্করণ আমাদের সেই বার্তাই দেয়। গণমাধ্যমের প্রসার তো ঘটছে, কিন্তু এর বিশ^াসযোগ্যতা ও মর্যাদা এখন কোন পর্যায়ে? গণমাধ্যম তো কালোকে কালো ও সাদাকে সাদা বলার কথা। কিন্তু গণমাধ্যম যদি বস্তুনিষ্ঠ না হয়ে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যায়, বিশেষ স্বার্থের হাতিয়ার হয়ে ওঠেÑ তখন জনমনে গণমাধ্যমের ভাবমর্যাদা অক্ষুণœ থাকবে কী? গণমাধ্যমে এখন সরকার ও সরকারি দলের প্রভাব স্পষ্ট। বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং মিডিয়া মালিকদের প্রভাবও বলার মতো বিষয়। মাঝে মাঝে আবার তথ্য-সন্ত্রাসের কথাও শোনা যায়। ফলে বলা যায়, গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রসারের এই যুগে গণমাধ্যমের ইমেজও সংকটের মুখে। এমন অবস্থায় দেশে-বিদেশে মিডিয়া তথা গণমাধ্যম কর্মীদের করণীয় আছে। এ ক্ষেত্রে এডিটোরিয়াল পলিসি বা সম্পাদকীয় নীতিমালাকে সমুন্নত রাখার গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। গণমাধ্যমের মালিক, গণমাধ্যম কর্মী এবং সাংবাদিক তথা পেশাজীবীদের ইউনিয়ন যদি গণমাধ্যমের মর্যাদা রক্ষায় সম্পাদকীয় নীতিমালাকে সমুন্নত রাখার সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়, তাহলে গণমাধ্যমের সংকট কেটে যেতে পারে।
ভারতের মতো বিশাল গণতান্ত্রিক দেশেও গণমাধ্যম এখন সংকটের মুখে। ভারতের শাসক দল বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি ‘অনুগত ও অনুরক্ত’ গণমাধ্যম বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। গত বুধবার জোটের সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোদির ‘অনুগত’ গণমাধ্যম ও টেলিভিশন উপস্থাপকদের তালিকাও গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া জোটের গণমাধ্যম উপকমিটি। গণমাধ্যম উপকমিটি জানায়, হিন্দি ও ইংরেজি চ্যানেলের ১৪ জন উপস্থাপকের অনুষ্ঠানে ইন্ডিয়া জোটের কোনো নেতা যাবেন না। এদের মধ্যে রয়েছেন রিপাবলিক টিভির অর্নব গোস্বামী, ইন্ডিয়া টুডের গৌরব সাওয়ান্ত ও টাইমসনাও-এর নভিকা কুমার। এই বর্জন কার্যকর হলে ভারতে এটি হবে এমন প্রথম ঘটনা।
উল্লেখ্য যে, নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ সাংবাদিকতার নামে ‘অন্ধ্র মোদি বন্দনা’ শুরু করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিরোধিরা এ ধরনের গণমাধ্যমকে বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের একটা বড় অংশকে ‘গোদি মিডিয়া’ (গোদি অর্থ কোল) বলে চিহ্নিত করেছে। অভিযোগ, সেখানে শাসকদলের বন্দনা ছাড়াও বিরোধীদের নানাভাবে অসম্মান করা হয়। বিরোধীদের খবর তেমন প্রকাশ করা হয় না, আবার করলেও বিকৃত করা হয়। বলা হয়, কোনো কোনো সংবাদ উপস্থাপক এমন ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করেন, যা দেশে আগুন জ¦ালায়। তাই ইন্ডিয়া জোট ওই ধরনের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশেও সম্প্রতি এমন উদাহরণ লক্ষ্য করা গেছে। ফলে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হওয়ার এখনই সময়।