রবিবার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Online Edition

ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে -মির্জা ফখরুল

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সুবর্ণজয়ন্তীর মিলন মেলায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

# ভেদাভেদ ভুলে রাজপথে নামার বিকল্প নাই ---এডভোকেট হেলাল

স্টাফ রিপোর্টার : কে কোন দল করে সেটি দেখার সময় এখন নয় মন্তব্য করে ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সূবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা এক ঘোর অন্ধকারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। রাষ্ট্র এখন আর রাষ্ট্র নেই। রাষ্ট্র এখন পুরোপুরিভাবে যন্ত্রণা, অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নের কারখানা হয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণে ঘরে বসে থাকার সময় নেই। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বর্তমান সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সাবেক সভাপতি আবদুল হাই শিকাদার, কাদের গনি চৌধুরী, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সাংবাদিক নেতা বাকের হোসাইন, ইলিয়াস খান, মুরসালিন নোমানী, রাশেদুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া কল্যাণ পার্টি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, পেশাজীবী নেতা ফরহাদ হালিম ডোনার, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, লুৎফুর রহমান, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, মোর্শেদ হাসান খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন। 

অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জমান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইন, কর্মপরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, আব্দুস সালাম, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের পরিচালক আশরাফুল আলম ইমন, ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ডাঃ ফখরুদ্দিন মানিক, কর্মপরিষদ সদস্য আতাউর রহমান সরকার, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ ও পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রকে যন্ত্রণা-নির্যাতনের কারাখানায় পরিণত করেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা রাষ্ট্র তখনই গণন্ত্রতান্ত্রিক রাষ্ট্র সফল হতে পারে যখন তার তিনটা স্তম্ভই কাজ করে। যেখানে একটা স্তম্ভ পুরোটাই তারা দখল করে নিয়েছে। আমি সোজা কথায় বলি বাংলাদেশের আত্মাটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা যে আত্মাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি, কাজ করেছি, লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি সেই আত্ম বিনষ্ট করে দিয়েছে। আমরা সবাই ঘোর অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি মন্তব্য করে মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতার সময় যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, তখনও কল্পনা করিনি এমন একটি সময় আমরা দেখবো। আজ গণমাধ্যমও ভাগ হয়েছে। একদিকে রয়েছে ভয়াবহ সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী, আরেক দিকে রয়েছে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার সংগ্রাম। যারা সংগ্রামে আছেন, তারা আজ নিগৃহীত। তাদের অনেকের আজ চাকরি নেই, সত্য বলার অপরাধে অনেক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকে বলছে আজকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করে ফেলা হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই। আমি তো বলি যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে কিনা আমি তো জানি না। যারা বিচারক এই সমাজের, এই দেশের, তাদের স্বাধীনতাটাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।  

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন, তারা জানেন, তাদের সহকর্মী, বড় বড় পত্রিকার এডিটর, বড় বড় চ্যানেলের এডিটর তারা আজকে উর্দির ভুমিকা পালন করছেন। আমাদের চেয়ে তারাও কম যান না। আমি লজ্জা পাই, যখন টেলিভিশনে দেখি তাদের কয়েকজন প্রথিতযশা সম্পাদক এবং বিভিন্ন সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তারা যখন এই ভয়াবহ অত্যাচার-নির্যাতন, গণতন্ত্র হত্যার যে কর্মযজ্ঞ তাকে সমর্থন করছে। এটাই এখন হয়েছে। আবার আরেকটি অংশ রয়েছে, যারা এই সরকারের দুর্নীতি, দমনপীড়নসহ অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে। তাদের উপর এই সরকারের নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। এখন তাদের অনেকের চাকরি নেই। অনেক সম্পাদক নির্বাসিত। অনেকেই কারাভোগ করেছেন। 

তিনি বলেন, আমাদের কথা বাদ দেন। আমরা রাস্তার কর্মী, মাঠের কর্মী, মাঠের মধ্যে লড়াই করি, জেলে যাই, অনেকের ফাঁসিও হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে আমাদের ঈশ্বর্দীর প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী ৩০ বছর আগে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরের নাকি কে বা কারা ঢিলটিল মেরেছিলো। ত্রিশ বছর পরে বিচারকরা শাস্তি দিয়েছেন। ৯ জনকে মৃত্যুদন্ড, ১৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন। আমাদের হাবিবুল ইসলাম হাবিব তাকে ৭০ বছর কারাদন্ড দিয়েছে, এটা ইতিহাস। আমাদের নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করে দিয়েছে। এরকম ৬৪৮ জনকে গুম করেছে। সহ¯্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করেছে, আমাদের সম্পাদক শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমানকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। দেশে আছেন এমন অনেক সম্পাদক সাংবাদিকদের নিগৃত হতে হয়েছে, কারাগারে যেতে হয়েছে। এই একটু আগে একজন আমার সাথে দেখা করলেন যে, মাস খানেক আগে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিলো, একমাস জেলে থেকে বেরিয়েছেন। কত বলব, কার কথা বলব? অত্যাচার-নির্যাতন এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে এখান থেকে মুক্তি পেতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল বলেন, আজ গোটা জাতি অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছ্,ে কোথাও কেউ স্বস্তিতে নেই। এ অবস্থায় নিপীড়িত মানুষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম প্রয়োজন উল্লেখপূর্বক একটি কুরআনের আয়াত উদ্বৃত করে বলেন, তোমাদের কি হয়েছে কেন তোমরা আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করছো না? অথচ দুর্বল নির্যাতিত নারী-পুরুষ রা চি’কার করে  আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছে হে আল্লাহ আমাদের জন্য এই জালিমের এলাকায় বন্ধু এবং সাহায্যকারী পাঠাও। 

জামায়াতের এ নেতা সবাইকে এক প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের মানুষ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন আর দেখতে চায় না। তবে সেজন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে। একটি সফল আন্দোলনের মাধ্যমে চলমান আন্দোলনকে একটি পরিণতির দিকে নিয়ে আসতে হবে। দেশবাসীকে বাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে আন্দোলনকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, এখন এই সমস্যা ওই সমস্যা নিয়ে থাকলে হবে না। সব সমস্যা মিটিয়ে রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে নামতে হবে। কারণ আমরা নিজেরা ভাগ হয়ে থাকলে আজ আমার উপর আক্রমণ হচ্ছে বলে এটা ভাবার কোনো উপায় নেই যে কাল আপনার উপর নির্যাতন হবে না। তখন কেউ কারো পাশে থাকবে না। তাই সব ভেদাভেদ ভুলে আমাদের এক হতে হবে। 

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে কেউ চায়না মন্তব্য করে এডভোকেট হেলাল বলেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ অবরুদ্ধ। জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান, একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাকে এই সরকার আটকিয়ে রেখেছে। জামিন পেলেও তা আবার স্থগিত করা হচ্ছে। এই সরকার শীর্ষ নেতাদের আটক রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা আদালত কিভাবে বিরোধী শীর্ষ নেতাদের আটক করে রাখা যায় সেজন্যই যেন বসে আছে। তিনি বলেন, এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। পরিস্থিতি উত্তোরণে রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিকল্প নেই। দেশের বাইরে থেকেও বলছে, এরা স্বৈরাচার। এরা ভোটাধিকার হরণ করেছে। আমরা এক এর সাথে এক যোগ করে দুই নয়, আমরা এগার, একশ এগারো দেখতে চাই। দেশের জনগণও সেটা দেখতে চায়। ইন শা আল্লাহ এই সরকারের পতন ঘটিয়ে কেযারটেকারের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবেই। 

সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, দেশের বর্তমান যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তাতে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পরিবর্তন করতেই হবে। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি করবো। আমরা কি পেছাবো নাকি শক্তি প্রদর্শন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। তিনি বলেন, সময় এসেছে, সবাইকে এক মঞ্চে আসার। 

রুহুল আমিন গাজী বলেন, আজ সাংবাদিকতার স্বাধীনতার লেশমাত্র নেই। মানবাধিকার আজ ভুলন্ঠিত। যারাই এ সরকারের দুর্নীতি অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তাদের উপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসছে। তিনি বলেন, এই সরকার এতটাই ফ্যাসিস্ট যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা পর্যন্ত করতে দিচ্ছেনা। এসব নিয়ে আদালতে নালিম করেও লাভ হচ্ছে না। সবই এখন দলীয়করণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব করে শেষ রক্ষা হবে না। এদেশের জনগণ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে। আবারো রক্ত দিয়ে গনতন্ত্র মানবাধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনবে। 

জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশে এখন যেটা দাঁড়িয়েছে যে সরকার একটা নির্দিষ্ট বয়ান হাজির করছে, তার বিরুদ্ধে গেলে সেটা আইনিভাবে একটা অপরাধ। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা এখন আইনিভাবে অপরাধ, সেটা কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যম পরিস্থিতির মুখোমুখি। তিনি আরও বলেন, আমরা যখন লড়ছি, তখন আমাদের ন্যায্যতার ভিত্তিটা কী? আমাদের ন্যায্যতার ভিত্তি হচ্ছে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করতে পারছি না। সেখানে বিচার বিভাগকে তার সর্বোচ্চ স্বাধীনতার জায়গায় এবং গণমাধ্যমকে তার সর্বোচ্চ স্বাধীনতার জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। আমরা যত বেশি এই কর্মসূচিকে মানুষের সামনে হাজির রাখতে পারবো, যত বেশি এই কর্মসূচির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবো, তত মানুষের ওই স্বপ্ন তৈরি হবে যে স্বপ্নকে আদায় করতে মানুষ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ