শনিবার ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

‘হরি’ নামে উদ্ধারিল

ইবনে নূরুল হুদা

সাড়ে চার দশক আগে আব্বার হাত ধরে গিয়েছিলাম স্থানীয় জেলা শহরে। আমার মরহুম পিতা বরাবরই তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু দীনবন্ধু কাকার দোকানে ওষুধ কিনতেন। সেদিনও অন্যথা হলো না। সে দোকান থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনলেন। আমার নজর পড়লো দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি চিত্রের দিকে। ছবিতে দেখতে ঋষির মত একজন ব্যক্তির কাছে হাতজোড় করা দু’জন ভক্ত আমার চোখে পড়লো। আমি অপলকে ছবিটির দিকে চেয়ে রইলাম। ছবির নীচে ক্যাপশনের মত করে লেখা, ‘জগাই-মাধাই পাপ করিল, ‘হরি’ নামে উদ্ধারিল’। বিষয়টি আমার কাছে বেশ চমকপ্রদ মনে হয়েছিল সেদিন।

এটি কোন ধর্মীয় গ্রন্থের উদ্ধৃতি কি না অথবা কোন আপ্তবাক্য কি না তা আমার জানা ছিল না বা এখনো নেই। তবে এর নির্যাসটা আমার বুঝতে কোন সমস্যা হয়নি সে শৈশবেই। আমি বুঝতে পেরেছিলাম ‘হরি’ এমন মহান সত্ত্বা যার নামে পাপীর পাপমোচন হয় ও পরিত্রাণ লাভ করেন বিপদাপন্নরা। যার মাধ্যমে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় অবলীলায়। কথাটা আমার শিশুমনেও বেশ রেখাপাত করেছিল। জীবনের এই পর্যায়ে এসে তা আমি বিস্মৃত হইনি; হবার নয়।

বিষয়টির সাথে ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িত থাকায় তা নিয়ে আলোচনা না করাই শ্রেয়তর মনে করছি। কারণ, স্বীয় ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর সৌধ নির্মাণ করতে পারলেই প্রকৃত ধার্মিক হওয়া যায়। এটাই বাস্তব। তবে কোন ঋষির নামে পাপমোচন সম্ভব কি না তা ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের জানার বিষয় হলেও আমাদের দেশের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজনীতির পাত্রমিত্র ও কথিত রাজনৈতিক ঋষিদের নামে যে পাপমোচন ও শাপমোচন হচ্ছে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। এরা আধ্যাত্মিক ‘হরি’ না হলেও এখন জাগতিক হরিতে পরিণত হয়েছেন রীতিমত। এদের মাধ্যমেই এখন মহাকর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হচ্ছে। এরাই কাউকে অকারণে পাপী বানাচ্ছে; নিরাপরাধকে অপরাধী। আবার নিজেদের ইচ্ছামত পাপমোচনের সনদও দেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যা আমাদের সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রাচারের মধ্যে ভাইরাসের মত অনুপ্রবেশ করেছে। ফলে ক্রমেই হীনবল হয়ে পড়ছে আমাদের জাতিসত্ত্বার ভিত্তি।

অতীতে আমাদের দেশের দুর্নীতির রথী-মহারথীদের ধরার জন্য দুর্নীতি দমন ব্যুরো কার্যকর থাকলেও তা এখন কমিশনে রূপ নিয়েছে। শুরু থেকেই রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন অন্ত ছিল না; এখনো নেই। কেউ কেউ দুর্নীতি দমন কমিশনকে ‘দুর্নীতি লালন কমিশন’ বলে আখ্যা দিয়ে বেশ পুলকবোধ করেন। কারণ, এই কমিশন যাদের দুর্নীতি করার সুযোগ বেশি তাদের দুর্নীতি চোখে দেখতে পাচ্ছে না বরং চোখে দেখে বিরোধী দলীয় অতি জনপ্রিয় নেতাদের ছোটখাট পাপকর্ম। এদের অনেককে আবার শাস্তি পেতেও দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি অনেকটা একচোখা হরিণের মতই হয়ে গেছে। কালেভদ্রে কোন বিশেষ ব্যক্তির নাম দেখা গেলেও তাদেরকে তদন্তের মাধ্যমে পুরোপুরি দায়মুক্তি দিয়ে হরিকর্ম সম্পাদন করার অভিযোগও বেশ জোরালো। তাই এই কমিশনকে কেউ কেউ দায়মুক্তি কমিশনও বলে থাকেন। যা একেবারে উপেক্ষা করার মত নয়।

সে ধারাবাহিকতায় দণ্ডিতদের দণ্ড মওকুফ এবং দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তদের দায়মুক্তি যেন আমাদের রাষ্ট্রাচারের সাথে একাকার হয়ে গেছে। ফলে অপরাধীরা অপরাধ করতে একেবারেই দ্বিধাহীন। লাগামহীন দুর্নীতি করতেও তাদের বুক কাঁপছে না। আমাদের দেশের দায়মুক্তির অপসংস্কৃতিই এখন তাদেরকে এই কাজে অতিমাত্রায় উৎসাহিত করছে। কারণ, তাদের পাপমোচন করতে হরি নামের এক বা একাধিক সংস্থা বেশ তৎপর রয়েছে। সে অশুভ বৃত্তেই আমাদের দেশের সুশাসন আটকা পড়ার অভিযোগ উঠেছে। যা আইন ও সাংবিধানিক শাসনকে রীতিমত পদদলিত করছে। ফলে রাষ্ট্রের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

খুব সঙ্গত কারণেই আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সন্দেহভাজন দুর্নীতির বরপুত্ররা রীতিমত হরি নাম জপ করতে শুরু করেছেন। জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধান জালে আটকা পড়া বেশ কয়েকজন সংসদ-সদস্য নিজেদের রক্ষায় দৌড়ঝাঁপ ও তদবির শুরু করেছেন ইতোমধ্যেই। তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অনিয়ম ও দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আর এই তদবিরে অনেকেই সফলতা পেয়েছেন বলে জানা গেছে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের দায়মুক্তির সনদ বা নির্দোষ হিসাবে অভিযোগ পরিসমাপ্তির চিঠি দিয়েছে। যা জাগতিক হরি নামের তেলেসমাতি বলে মনে করা হচ্ছে অভিজ্ঞমহলের পক্ষ থেকে।

মূলত, হরি নামের বর পেয়েই একশ্রেণির অভিযুক্ত এখন দল ও নিজ অনুসারীদের কাছে ক্লিন ইমেজের নেতা হিসাবে প্রচার চালাচ্ছেন। এখনো যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান, তাদের মধ্যে রয়েছেন ৬ জন বর্তমান ও ৮ জন সাবেক সংসদ-সদস্য। এই তালিকার অন্তত তিনজন সংসদ-সদস্য দায়মুক্তির সনদ পেতে প্রভাবশালীদের দিয়ে দুদকের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন- এমন অভিযোগ গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়েছে। এক সংসদ-সদস্য ক্লিন সার্টিফিকেট পেতে প্রয়োজনে কোটি টাকা ঢালতেও রাজি-দুদকের ভেতরে-বাইরে এমন গুঞ্জনও বাজারে রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি দুদকের কার্যকারিতাকে বেশ প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সুশাসন নিয়েও নতুন করে কথা উঠেছে। যা কোন সভ্য সমাজের জন্য মোটেই ইতিবাচক নয়। 

জানা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান তাদের কেউ কেউ সরাসরি দুদকে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সরাসরি ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলাপ করে বোঝাতে চেষ্টা করছেন তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন অভিযোগ করেছে। আবার কেউ অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নাম ভাঙিয়েও কেউ কেউ জোরালো তদবির শুরু করেছেন।

গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত খবর থেকে জ্ঞাত হওয়া গেছে যে, দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায় মুক্তি পেতে দৌড়ঝাঁপের তালিকায় রয়েছেন ভোলা-৩ আসনের সংসদ-সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ-সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও বরিশাল-৪ আসনের সংসদ-সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ। এদের মধ্যে নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধে প্রথম অনুসন্ধান চলমান থাকা অবস্থায় জমা হওয়া আরেকটি অভিযোগ আমলে নিয়ে আগের নথির সঙ্গে সংযুক্ত করে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় কমিশন। ২০ ফেব্রুয়ারি নতুন করে এই অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর থেকেই শাওন নিজেকে রক্ষার চেষ্টা তদবির চালাচ্ছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে আরো জানা গেছে, রাজশাহী-১ আসনের সংসদ-সদস্য ও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী, মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ-সদস্য আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ ও মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বিকল্পধারার সংসদ-সদস্য মাহী বি চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান। তারাও অভিযোগ থেকে দায়মুক্তির জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। অভিযোগ অনুসন্ধানের এই তালিকায় সাবেক ৮ সংসদ সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন-বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু, শহিদুজ্জামান বেল্টু, জাতীয় পার্টির এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, আওয়ামী লীগের কামরুল আশরাফ খান পোটন, শামসুল হক ভূঁইয়া, মো. শাহজাহান ও আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা।

জানা গেছে, গত দেড় বছরে দুদক থেকে দায়মুক্তি পেয়েছেন ৮ জন সংসদ-সদস্য। সবশেষ ১২ জুন দায়মুক্তি সনদ পান নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ-সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু। তার বিরুদ্ধে দু’দফা দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান হয়েছে। দু’বারই তাকে ‘দায়মুক্তি’ দেয় দুদক। এর আগে বিভিন্ন সময়ে দায়মুক্তির সনদ পেয়েছেন, জাতীয় সংসদের হুইপ, চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ-সদস্য শামসুল হক চৌধুরী, ভোলা-৪ আসনের সংসদ-সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ-সদস্য আফজাল হোসেন, শেরপুর-১ আসনের সংসদ-সদস্য আতিউর রহমান আতিক ও চট্টগ্রাম-৩ আসনের সংসদ-সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা, সাবেক সংসদ-সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও বিএম মোজাম্মেল হক।

এ বিষয়ে দায়মুক্তি প্রাপ্ত একজন সংসদ সদস্যের বক্তব্য হলো, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সুনাম ক্ষতুœ করতে একাধিকবার আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। যে ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে দুদক তাদের তদন্তে কোন তথ্য-প্রমাণ না পেয়ে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে দুর্নীতি দমন কমিশন সরকার সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের অনৈতিকভাবে দায়মুক্তি দিতে শুরু করেছে। অবশ্য এ বিষয়ে দুদক সচিব বলছেন ভিন্নকথা। তার ভাষায়, ‘জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কাউকে বিশেষ খাতির বা আলাদা করে সুবিধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযুক্ত কোনো এমপিকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য কোনো চাপ নেই, অনৈতিক সুবিধা নেয়ারও কোনো সুযোগ নেই।’ যাদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে-এমন প্রশ্নের উত্তরে তার বক্তব্য হলো, ‘কোনো গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বা প্রতিবেদন আমাদের কাছে আসে না। কিন্তু এই বক্তব্যকে দায়সারা ও হাস্যকর বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুদক সূত্র দাবি করছে, রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব আইন ও বিধি অনুসরণ করে কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। অভিযোগের বিষয়ে আমলযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া না গেলে, অনুসন্ধান কর্মকর্তারা সেই অভিযোগ পরিসমাপ্তির জন্য প্রতিবেদন জমা দেন। সব অভিযোগের ক্ষেত্রেই এই আইন বা বিধি অনুসরণ করে অনুসন্ধান ও তদন্ত চালানো হয়।’ সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ঠিকাদারি কাজের কমিশন বাণিজ্য, সরকারি সম্পত্তি দখল, ঘুষ নিয়ে চাকরি দেয়া, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা ধরনের দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ আসে দুদকে। সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু হয়। এরপর থেকে শুরু হয় প্রভাবশালীদের চাপ।

জানা গেছে, যেসব সংসদ-সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান বা যারা দায়মুক্তি পেয়েছেন তাদের দুর্নীতির খতিয়ান রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও রয়েছে। অভিযোগ থেকে তারা কিভাবে অব্যাহতি পাচ্ছেন সে ব্যাপারে নজর রাখছে ওই গোয়েন্দা সংস্থা। কোনো সংসদ-সদস্য কোন প্রক্রিয়ায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন তা প্রতিবেদন আকারে ওপর মহলকে অবহিত করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর বক্তব্য হলো, ‘দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়বস্তটাই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ব্যক্তি বা রাজনৈতিক প্রেক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ নয়। ব্যক্তির পরিচয় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় কাজ করলে দুদকের প্রতি মানুষের আস্থার সঙ্কট তৈরি হবে। দুদক রাজনৈতিক বিবেচনায় একের পর এক এমপিদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতে থাকলে দুদকের কাজ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠবে এবং আস্থার সংকট আরও ঘনীভূত হবে।

মূলত, দুর্নীতি দমন কমিশন তথা দুদক একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হলো দলমত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল দুর্নীতিবাজকে অতিস্বচ্ছতার সাথে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুুখি করা। এক্ষেত্রে কোন ভাবেই দলবাজির সুযোগ নেই। কিন্তু সাম্প্রতি সময়ে দুদক তাদের কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে বিরোধী দলীয় নেতাদের অহেতুক হয়রানি করার। প্রশ্ন উঠেছে নোবেল বিজেতা প্রফেসর ইউনূসের বিচার কার্যক্রম নিয়ে। আন্তর্জাতিক এই ব্যক্তিত্বের বিচার কার্যক্রম থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে দুদকের আইনজীবী সে প্রশ্নকে আরো জোরালো ভিত্তি দিয়েছেন। আর ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এই বিচার নিয়ে অতি চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করে জ¦ালানো আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন। যা দুর্নীতি দমনে দুদকের ভূমিকাকেই পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

দুদকের অনেক মামলায় যখন বিরোধী দলীয় নেতা বা ভিন্নমতের লোকেরা একের পর এক বিচার বা শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন তখন দুদকের বিরুদ্ধে লাগামহীনভাবে সরকারি দলের অন্যদের দায়মুক্তি দেয়ার অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির নিরপেক্ষতা নিয়ে। একদিকে দুদক একশ্রেণির লোকজনকে দেদারসে অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিচ্ছে, অপরদিকে বিরোধী দলীয় লোকদের নানা ছলছুতায় বিচারের মুখোমুখি করার অভিযোগ উঠছে। মূলত, রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠান আইন প্রয়োগে সমান্তরাল ও নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করতে পারছে না। একই কাজ কারো ক্ষেত্রে অপরাধ বিবেচনা করা হচ্ছে, আবার কারো ক্ষেত্রে তা মোটেই আমলে নেয়া হচ্ছে না। বিষয়টি ‘দেবতা কললে লীলাখেলা, আর পাপ হয় মোদের বেলা’ এমনটিই শোনাচ্ছে।

মূলত, দুর্নীতি দমন কমিশন এখন কারো জন্য পাপ সংহারী ‘হরি’ আবার কারো জন্য অসুর বিনাশী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সঙ্গত কারণেই হরি নাম জপের মাধ্যমে সরকার জগাই-মাধাইদের অবলীলায় পাপ মোচন ঘটাছে। ব্যতিক্রম ঘটছে অন্যদের ক্ষেত্রে। যা কোন গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজে মোটেই কাক্সিক্ষত নয়। এতে দুদকের গ্রহণযোগ্যতাও একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। যা অনভিপ্রেত।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ