রবিবার ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ

 যুদ্ধবিগ্রহে আজকের বিশ্ব যেভাবে ধুঁকছে, তার প্রেক্ষিতে বলতে হয়, কোথায় গিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটবে এ সংকটের? দেড় বছরের বেশি সময় পার হয়েছে, যুদ্ধ চলছে সার্বভৌম ইউক্রেনের মাটিতে। দুঃখজনকভাবে এ সংঘাত কেবল নতুন নতুন বাঁকই নিচ্ছে না। সংঘর্ষ শেষ হবার কোনও আলামত নেই! অতীতে এমন বহু যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। কোনও কোনও সংঘাত শত বছর পর্যন্ত চলেছে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি দেখা যায়নি আগে। বর্তমান বিশ্বের জটিল সমীকরণে বাঁধা পড়ে যুদ্ধ যেন হয়ে উঠছে খেলা। আর দিনশেষে এ খেলায় অবধারিতভাবে পরাজিত হচ্ছে বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের সাধারণ মানুষ। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের বড় ভুক্তভোগী দরিদ্র দেশগুলো। কী দেখায়নি এ যুদ্ধ আমাদের? উন্নয়নশীল বিশ্ব তো বটেই। ভূরাজনীতির বলি হয়ে ইতোমধ্যে জ্বলছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও।

ইউক্রেন যুদ্ধকে যেন জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এক পক্ষ চাইছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিজয়মাল্য গলায় পরতে। অন্য পক্ষও পড়ে আছে মাটি কামড়ে। দুই পক্ষকেই আবার নেপথ্যে থেকে রসদ জোগাচ্ছে নিজ নিজ মিত্রশক্তি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøলাদিমির পুতিন যুদ্ধ শুরুর মাস কয়েক পর থেকেই হুংকার ছেড়ে আসছেন, পারমাণবিক বোমা পড়লো বলে। পাল্টা হুঁশিয়ারি আসছে বিপরীত পক্ষ থেকেও। তবে পশ্চিমা বিশ্ব চাইছে, এ যুদ্ধ যেন কোনওক্রমেই পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত না হয়। এভাবেই নিকষ অন্ধকারে ঢাকা পড়ছে ইউক্রেনসংকট। আর এ সংকটের অভিঘাত আছড়ে পড়ছে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে। এতে কী ঘটছে? বিশ্ব অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে। সর্বত্র যেন নেই নেই অবস্থা। দরিদ্র দেশগুলোকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে কৃষ্ণসাগরের দিকে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়ার অবরোধের কারণে সাগরে আটকা পড়ছে শস্যভর্তি জাহাজ। শস্যভা-ার খ্যাত ইউক্রেনের গুদামে যখন খাদ্যপণ্য পচে নষ্ট হচ্ছে, ঠিক তখনই জ্বালানি সরবরাহের পাইপলাইনে রাশিয়ার চাবি মারবার কারণে ইউরোপীয় অঞ্চলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিল্পকারখানা। সাপ্লাই চেইন বিঘিœত হয়ে একদিকে খাদ্যাভাব তীব্র আকার ধারণ করছে। অন্যদিকে জ্বালানিসংকটে মুখ থুবড়ে পড়ছে উৎপাদন-বিপণন। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বব্যবস্থার চাকা আর কতদিন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারবে, তা নিয়েই বড় দুশ্চিন্তা।

করোনা পেন্ডামিকের ধকল কাটিয়ে উঠে দেশগুলো যখন একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ঠিক তখনই শুরু হলো এ যুদ্ধ। ইউক্রেনযুদ্ধে জয়-পরাজয়ের পাল্লা আজ হেলছে আর দুলছে শুধু অস্ত্র-সক্ষমতা নিয়ে। মিত্রশক্তির সরবরাহ করা অস্ত্র, গোলাবারুদে যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে যখন বিজয় লাভের স্বপ্ন দেখছে যুদ্ধকবলিত ইউক্রেন, তখন পারমাণবিক শক্তিধর রাশিয়াকে একটি নির্ধারিত গ-ির মধ্যে আটকাতে চায় ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলো। ইউক্রেনের হাতে এমন কোনও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র তুলে দেয়া হচ্ছে না, যাতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পথে হাঁটতে বাধ্য হয় রাশিয়া। আবার এ যুদ্ধ যে শেষ করতে হবে, এমন কোনও কার্যকর উদ্যোগগ্রহণের পথেও হাঁটতে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও স্থবির। নির্বিকার।

শুধু ইউক্রেনযুদ্ধ নয়, পৃথিবীর বহু প্রান্তে আজ বিরাজ করছে যুদ্ধাবস্থা। খ- খ- যুদ্ধ চলছে যেন। অবস্থা এমন, অতীতে দীর্ঘ সময় ধরে চলা যুদ্ধের যবনিকা পতন ঘটানো গেলেও একুশ শতকের সংঘাত যেন লাগামছাড়া হয়ে উঠছে। সংঘাত-হানাহানি ও যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতাকে যেভাবে সংকটের ঘেরাটোপে ক্রমাগত নিক্ষেপ করা হচ্ছে, তা যে বিশ্বকে বেশ ভোগাবে, সেটা প্রায় শতভাগ নিশ্চিত। বিজ্ঞানী হারবার্ট জর্জ ওয়েলসের কথাই আজ বেশি করে মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন, “আমরা এ যুদ্ধ শেষ না করলে, যুদ্ধই আমাদের শেষ করে দেবে।” জর্জ ওয়েলসের কথামতো যুদ্ধ আমাদের শেষ করুক। সভ্যতা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক। বিশ্ব নেতারা কি এমনটাই প্রত্যাশা করছেন?

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ