ঢাকা, রোববার 10 December 2023, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

বছরে ২৪ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়, মায়ের দুধে ঝুঁকি কমে ১৫ ভাগ

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক: নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যু হার সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে বেশি। প্রতি বছর দেশে ২৪ হাজার শিশু শুধু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই এমন মৃত্যু হচ্ছে। শিশুদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে, শিশুর জন্মের প্রথম ছয়মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো একটি বড় ভূমিকা পালন করে। এর ফলে নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা ১৫ ভাগ কমে যায়। গত চার বছরে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যু কমাতে পারেনি বাংলাদেশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষ্যে আর্ন্তজাতিক উদারাময় গবেষণাকেন্দ্র-আইসিডিডিআর,বি'র উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটির ট্রাকসন কসফারেন্স রুমে আয়োজিত ‘শিশুদের নিউমোনিয়ায় আমরা কি যথেষ্ট করছি?’—আলোচনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষকরা এসব তথ্য জানান। 

অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর’বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী বলেন, নিউমোনিয়া এখনো বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যুর প্রধান সংক্রামক কারণ। এই রোগের ফলে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়, যা পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুর ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশের পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ। প্রতি ঘণ্টায় আনুমানিক দুই থেকে তিন জন শিশু মারা যায় নিউমোনিয়ায় এবং বছরে প্রায় ২৪ হাজার শিশু মৃত্যুবরণ করে।

এই পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে ২৪ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী, যা বিশ্বব্যাপী গড় থেকে বেশি।

আইসিডিডিআর’বিতে নিউমোনিয়া নিয়ে ড. চিশতী ও ড. নূর হক আলম, ড. কে জামান এবং ড. আহমেদ এহসানুর রহমানের কয়েকটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। গবেষণাগুলো সফলভাবে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং পরীক্ষামূলকভাবে এর ব্যবহারও করা হয়েছে।

গবেষণার ফলাফলে থেকে ড. চিশতী আরো জানান, বাংলাদেশে শিশুদের নিউমোনিয়ার কারণগুলো বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে কিছুটা অলাদা। ড. চিশতী বাংলাদেশের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের নিউমোনিয়ার পেছনে বিশেষ কারণ তুলে ধরেন। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালে আইসিডিডিআরবি’র গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী, গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিষয়টি উঠে আসে। এই ফলাফলগুলো দেখায় যে, বিরল গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া শৈশবকালীন নিউমোনিয়ার নতুন কারণ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, নিউমোনিয়া ফুসফুসের রোগ। শুরুতে কাশি হয়, যা সাধারণত ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর থেকে শ্বাসকষ্ট, এমনকি মৃত্যু হতে পারে। তিনি বলেন, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, অল্প বয়সি, প্রবীণ এবং যাদের হূদিপণ্ড ও ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে, তাদের গুরুত্বর নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, আইসিডিডিআর’বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ইতিপূর্বে ডায়রিয়া শিশুমৃত্যুর প্রধান ঘাতক হলেও, বর্তমানে নিউমোনিয়া শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ। নিউমোনিয়ায় প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী অনেক শিশু মারা যায়। আক্রান্ত হন প্রাপ্তবয়স্করাও এবং তাদেরও মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। আইসিডিডিআর’বিতে নিউমোনিয়া নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, যা সফলভাবে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং পরীক্ষামূলকভাবে এর ব্যবহারও করা হয়েছে। এই ফলাফল এবং পদ্ধতি মানুষের কাছে আরো সহজে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ