নীতির সংকটে যুক্তরাষ্ট্র
নীতি, নৈতিকতা-এই শব্দগুলো এখনো অভিধানে আছে। তবে সমাজে, রাষ্ট্রে এবং ব্যক্তিজীবনে শব্দগুলোর চর্চা তেমন হয় না। সদর্থে চর্চা না হলেও নানা ভঙ্গিতে, নানা স্বার্থে এই শব্দগুলোর কিছু ব্যতিক্রমী চর্চা হয় বৈকি! তারাও ‘নীতির’ কথা বলেন। তবে মন্দ-নীতিকে কোনো বিবেকবান মানুষ কি ‘নীতি’ হিসেবে মেনে নিবেন? প্রসঙ্গত যুক্তরাষ্ট্রের ‘মধ্যপ্রাচ্য নীতি’ সম্পর্কে কী বলা যায়? যুক্তরাষ্ট্রে ‘ইসরাইল নীতির’ ব্যাখ্যা কেমন হবে? গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসন প্রসঙ্গে আল-জাজিরার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ৪ জুলাই। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসনকে সমর্থন দেওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ১২ কর্মকর্তার এক খোলা চিঠিতে একথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘গাজা নীতির’ প্রতিবাদে গত ৯ মাসে এসব কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। এই কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরাইলের প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সমর্থনের মানে হলো, গাজায় ফিলিস্তিনীদের হত্যা এবং অনাহারে রাখার ঘটনায় ওয়াশিংটনের ‘এমন সম্পৃক্ততা রয়েছে, যা অস্বীকার করার মতো নয়।’ গাজা উপত্যকার যুদ্ধের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের নীতিকে ‘ব্যর্থ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি’ হিসেবেও চিহ্নিত করেন তারা।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তার প্রশাসন ইসরাইলকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানোর মাধ্যমে লোক দেখানো প্রচেষ্টা জারি রেখেছে বলে মনে করেন অনেকে। লক্ষণীয় বিষয় হলো; একই সময়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং তার জোট সরকারকে সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে বাইডেন প্রশাসন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে। আরো প্রশ্ন জেগেছে, অভিনয়ের মাধ্যমে কি কোনো সংকটের সমাধান সম্ভব? গাজায় গণহত্যার কারণে ইসরাইল একটি যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত। অথচ এমন একটি রাষ্ট্রকে সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে চলেছে বাইডেন প্রশাসন। এমন নীতিভ্রষ্টতার কারণে বিশে^ যুক্তরাষ্ট্রের ইমেজ বিনষ্ট হচ্ছে। দেশটির মানবিক ও গণতান্ত্রিক বয়ান এখন বিশ^বাসীর কাছে প্রহসনের মতো মনে হচ্ছে। বাইডেন প্রশাসনের ভ্রান্ত নীতির বিরুদ্ধে দেশটির জনগণ এবং ছাত্র সমাজ রাজপথে নেমে এসেছে। তবুও তাদের বোধোদয় ঘটছে না।
নীতির কারণে, নৈতিক উপলব্ধির কারণে মানুষ মর্যাদাবান। এমন বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্যুত হলে পশু থেকে মানুষকে আলাদা করার কোনো অর্থ হয় না। শঠতা, অভিনয় এগুলো কোনো মহৎ গুণ নয়। এগুলোর মাধ্যমে মানুষকে ঠকানো যায়, বঞ্চিত করা যায়, কিন্তু কোনো সংকটের সমাধান করা যায় না। এই বিষয়গুলো বাইডেন প্রশাসনের না বোঝার কথা নয়। কিন্তু বোঝার আলামতও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তাহলে ভুল রোডম্যাপেই কি চলছে বাইডেন প্রশাসন? তাহলে তো সামনে দুঃসময়।