রবিবার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Online Edition

বিদায়ী টেস্টে ইংল্যান্ডকে জয় উপহার দিতে চান এন্ডারসন

 স্পোর্টস রিপোর্টার: আজ লর্ডসে শুরু হচ্ছে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজ। লর্ডসে বিকেল ৪টায় শুরু হবে সিরিজের প্রথম টেস্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুরু হওয়া তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে যাচ্ছেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি পেসার জেমস এন্ডারসন। জয় দিয়ে বিদায়কে রাঙাতে চান এন্ডারসন। টেস্ট ফরম্যাটে পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭শ’ উইকেটের মালিক হলেও ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে এসেও জয়কে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন ৪১ বছর বয়সী এন্ডারসন। তিনি বলেন, শেষ ম্যাচে উইকেট শিকার করতে পারি বা না পারি, তাতে কোন আক্ষেপ থাকবে না। পুরো ক্যারিয়ারে যেমন দলের জয়ই বড় লক্ষ্য ছিলো, শেষ ম্যাচেও অন্য কিছু ভাবছি না। এন্ডারসনের শেষ ম্যাচ নিয়ে শিহরিত ওয়েস্ট ইন্ডিজও। তবে অভিজ্ঞ এই পেসারের ‘অবসর-পার্টি’ পন্ড করার লক্ষ্য ক্যারিবীয়দের। ইংল্যান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রব কি, টেস্ট দলের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও টেস্ট অধিনায়ক বেন স্টোকসের সাথে আলোচনার পর গত এপ্রিলে অবসরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছিলো এন্ডারসনের। ২০২৫-২৬ মৌসুমের অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হতে যাওয়া অ্যাশেজকে সামনে রেখে ইংল্যান্ড দলকে নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনার কথা এন্ডারসনকে জানান কি-ম্যাককালাম ও স্টোকস। এরপরই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্বান্ত নেন এন্ডারসন। এজন্য বেছে নেন ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচকে। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের বড় তিন কর্তার দেয়া অবসরের ইঙ্গিতে অবাক হননি এন্ডারসন। এমন কিছু হতে যাচ্ছে, সেটি আগের থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন তিনি, ‘আমি বলবো না, অবাক হওয়ার মতো কোন ঘটনা ছিল এটি। বড় তিন কর্তা যখন আমাকে ম্যানচেস্টারের এক হোটেলে কথা বলতে ডাকে, তখন আমি মনে করিনি কোন সাধারণ বিষয় হতে যাচ্ছে। এমন কিছু হবে, তেমন ধারণা করেছিলাম। আমার মনে হয়, আমাকে শান্ত দেখে তারা নিজেরাই বেশ অবাক হয়েছিল। আমি কিভাবে এতটা শান্ত ছিলাম, আমি নিজেও নিজেকে নিয়ে অবাক হয়েছিলাম। আমি আবেগাপ্লুত হইনি বা রেগে যাইনি বা অন্য কিছুই করিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানার পর আমাকে নিয়ে তাদের পরিকল্পনার প্রশংসা করি। আমি তাদের বিষয়টি মেনে নিয়েছি ও এজন্য আমার কোন কষ্টও নেই।’ ২০০২ সালের ডিসেম্বরে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় এন্ডারসনের। পরের বছর মে’তে লর্ডসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় এই ডান-হাতি পেসারের। এরপর টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮৭ ম্যাচ খেলে ফেলেন তিনি। ২শ টেস্ট খেলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার বিশ্ব রেকর্ডের মালিক ভারতের শচীন টেন্ডুলকার। ২২ বছরের বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বিশ্বসেরা দুই স্পিনার অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন এবং শ্রীলংকার মুত্তিয়া মুরালিধরনের পর তৃতীয় বোলার ও প্রথম পেসার হিসেবে গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ৭শ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন এন্ডারসন। ২৬ দশমিক ৫২ গড় ও ২ দশমিক ৭৯ ইকোনমি রেটে ৭০০ উইকেট নিয়ে বহু রেকর্ডের মালিক তিনি। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রার ৫৬৩ উইকেট টপকে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী পেসার হন এন্ডারসন। ইংল্যান্ডের হয়ে ১৯৪ ওয়ানডেতে ২৬৯ উইকেট এবং ১৯টি টি-টোয়েন্টিতে ১৮ উইকেটও শিকার করেছেন এন্ডারসন। ২০১৫ সালে সর্বশেষ সাদা বলের ক্রিকেটে খেলেছেন তিনি। এমন দুর্দান্ত পরিসংখ্যান নিয়ে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচেও দলের জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছেন না এন্ডারসন, ‘আমি পুরো ক্যারিয়ারে যেভাবে বোলিং করেছি, এখনও সেভাবেই বোলিং করছি। আমি জানতাম আজ বা দুই বছর পর হলেও একদিন থামতেই হবে। এই সপ্তাহে কিছুটা অবদান রাখতে পারলেই খুশি হবো। ১ উইকেট নিতে পারি বা যাই পারি, আমি অল্প অবদান রাখতে চাই এবং ম্যাচটি জিততে চাই।’ ২২ বছর আগে অভিষেক হওয়া লর্ডসে ইতি টানার টেস্টে আবেগ সামলানোর কথা জানান এন্ডারসন, ‘আমি নিশ্চিত এই সপ্তাহে আমি আবেগম তাড়িত হবোই। কিন্তু এই মুহূর্তে কান্না থামানো দিকেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি।’ দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ারে এন্ডারসনকে সবচেয়ে বেশি কি আনন্দিত করেছে, এমন কথা জানতে চাওয়া হলে এন্ডারসন বলেন, ‘মাত্র ৪২ বছর বয়সে ১৮৮ টেস্ট খেলা আমাকে সবচেয়ে গর্বিত করে এবং আমি এখনও আমার সম্ভাব্য সেরাটা দেওয়ার জন্য নিজেকে চাপ দিচ্ছি।’ জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়ার পর ইংল্যান্ডের পেস বোলিং মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এন্ডারসন। প্রতিপক্ষ হলেও এন্ডারসনের প্রশংসা করতে ভুল করেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, এখনও এন্ডারসনের অনেক কিছু দেওয়ার আছে এবং প্রমাণ করার মতো অনেক বিষয় আছে। আমি সবসময় দুর্দান্ত খেলোয়াড়দের বিপক্ষে খেলতে পছন্দ করি এবং নিঃসন্দেহে এই খেলার সেরা খেলোয়াড়দের একজন সে। তার সাতে শেষবারের মতো খেলার অপেক্ষায় আছি।’ এন্ডারসনের বিদায় টেস্টে জয় পেতে চায় ওয়েস্ট ইন্ডিজও। কিন্তু ইংল্যান্ডের মাটিতে অতীত পারফরমেন্স বড় চিন্তার কারন ক্যারিবীয়দের। ১৯৮৮ সালে সর্বশেষ ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর নয় সিরিজের মধ্যে ৭টিতে পরাজিত হয়েছে, ২টিতে ড্র করেছে ক্যারিবীয়রা। তারপরও এই সিরিজে ভালো খেলার ব্যাপারে আশাবাদি হোল্ডার, ‘দল হিসেবে আমরা আত্মবিশ্বাসী। এন্ডারসনের শেষ ম্যাচে জিততে চাই আমরা। এমনকি সিরিজও জিততে মরিয়া পুরো দল। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জিততে পারিনি। এবার জয়ের লক্ষ্য নিয়েই আমরা মাঠে নামতে চাই।’ এদিকে, এন্ডারসনের বিদায়ী টেস্টের একাদশ ঘোষণা করেছে ইংল্যান্ড। টেস্ট অভিষেক হবে উইকেটরক্ষক ব্যাটার জেমি স্মিথ ও পেসার গাস অ্যাটকিনসনের। এন্ডারসন ও ক্রিস ওকসের সাথে পেস বিভাগ সামলাবেন অ্যাটকিনসন। একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে আছেন শোয়েব বশির। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট সিরিজটি বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। এখন পর্যন্ত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ ম্যাচ খেলে ৩ জয়, ৬ হার ও ১ ম্যাচ ড্রতে ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে নয় দলের টেবিলের তলানিতে আছে ইংল্যান্ড। অপরদিকে, ৪ ম্যাচ খেলে ১ জয়, ২ হার ও ১ ম্যাচ ড্রতে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থানে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ