শুক্রবার ১৫ নবেম্বর ২০২৪
Online Edition

ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা অসংখ্য শিক্ষার্থী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি

 

মুহাম্মদ নূরে আলম : সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দেশের সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৬ বছরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নারকীয় নির্যাতন ও র‌্যাগিংয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা অসংখ্য শিক্ষার্থী এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা এই নির্যাতনের সংখ্যা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের শাসনকালে কয়েক লাখ হবে। বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের গেস্টরুম কালচার ছিল নির্যাতনের মূল টর্চার সেল। শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের আগে আদর করে কোকাকোলা পান করাতো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা, যাতে নির্যাতনের কারণে সুগার ফেল করে মারা না যায়। আর ছাত্রলীগের এতোসব নির্যাতন জায়েজ করতে শিক্ষার্থী শিবির ট্যাগ দিতো এমনিকি হিন্দু শিক্ষার্থীকেও শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করতো ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নির্যাতনের ফলে অনেক শিক্ষার্থী এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি, কেউ কেউ ঘুমের মধ্যে ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে। অনেকেই আবার শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেনি কারণ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের ভয়ে ক্যাম্পাসেই ফিরতে পারেনি তাই অনেক ছাত্র বিদেশে চলেযান। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নির্যাতন নিয়ে গত ১৬ বছরে সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় শিবির ট্যাগ দিয়ে ২০১৯ সালে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। তার খুনের দায়ে অভিযুক্তদের সংগঠনকে নিষিদ্ধ করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ।

গেস্টরুম কালচার ছাত্রলীগের টর্চার সেল: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গেস্টরুম কালচার হলো বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থী উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের টর্চার সেল। এইজন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের গেস্টরুম কালচারকে ভয় পেতো। সাধারণ শিক্ষার্থী ও সংবাদপত্রে মাধ্যমে জানা যায়, গেস্টরুম কালচার মূলত ছাত্রলীগের টর্চার সেল। তদন্ত মোতাবেক ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ছাত্রলীগের শারীরিক নির্যাতনে কমপক্ষে ১৫০০ জন গুরুতর আহত হয়েছে। স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট টর্চার নামক এক মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনে শুধুমাত্র ২০২২ সালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি ঘটনায় ২৭ জন সাধারণ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে। দৈনিক শিক্ষা পত্রিকার অনুসন্ধান মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩-২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৩টি আবাসিক হলে ৫৮টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫০+ শিক্ষার্থী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২০২২ সালের মধ্যে ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হয়েছে শতাধিক শিক্ষার্থী। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ২৩ জন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দিয়েছে। এসবের মধ্যে অন্তত ৪২টি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক ১৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে প্রশাসন কাউকেই শাস্তি দিতে পারেনি। বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে একটা ওয়েবসাইট খোলে। আড়াই বছরের মধ্যে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ১৬৬টি অভিযোগ পড়েছিলো। ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, ২০১৩-২০১৯ পর্যন্ত গেস্টরুমে ২৮২ জন শিক্ষার্থী নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এই র‌্যাগিং ও গেস্টরুম নির্যাতনের ফলে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বুয়েটের অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী বুয়েট ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শেখ আব্দুস সালাম গেস্টরুম নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে শাস্তির আশ্বাস প্রদান করেন। শিক্ষার্থীদের গেস্টরুম নির্যাতন, বুলিং র‌্যাগিং, হেনস্তা প্রতিহত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ আইন জারি করেন এবং গ্যাজেট আকারে প্রকাশ করেন। গেস্টরুম নির্যাতনের বিবরণ: 

ফুলপরী খাতুন নির্যাতন: ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কর্তৃক কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলপরী খাতুন নামক এক ছাত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এটিও ছাত্রলীগের গেস্টরুম কালচারের আরও একটি বড় উদাহরণ। ফুলপরীকে রাত ১১ টায় ডেকে নিয়ে রাত সাড়ে ৩ পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়। তাকে কিল, ঘুষি ও থাপ্পর ও অশ্লীল গালিগালাজ করা হয়। জোর করে ডাইনিংয়ের ময়লা গ্লাস চাটানো হয়, যৌন হয়রানি করা হয় এবং বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়।

ইডেন কলেজ কেলেঙ্কারি: ইডেন মহিলা কলেজের কেলেঙ্কারি ২০২২ এর ছাত্রলীগের একটি অপকর্ম ও ধারাবাহিক ঘটনা। ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের মেয়েদের রুমে ডেকে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি ও নির্যাতন করতো। ভিন্নমত পোষণকারী ছাত্রীরা যারা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দেয় না এবং ছাত্রাবাসের বাসিন্দারা যারা মাসিক ‘প্রটেকশন মানি’ দিতে ব্যর্থ হয় তাদের উপর নির্ধারিত রুমে নিয়ে নির্যাতন করা হতো।

সাদ ইবনে মমতাজ হত্যাকা-: ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ রাতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশরাফুল হক হলের ২০৫ নং কক্ষে সাদ ইবনে মমতাজকে ছাত্রলীগের কর্মীরা বেধড়ক পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। তাকে কয়েক ঘন্টা সময় ধরে কার্পেট দিয়ে মুড়িয়ে লোহার রড, লাঠি, হকিস্টিক ইত্যাদি দিয়ে পেটানো হয়। পরে তিনি ময়মনসিংহ শহরের একটি ক্লিনিকে মারা যান। সাদ নিজেও ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলেন। হত্যার ৭ম দিনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে সমাবেশ এবং পরে বিক্ষোভ মিছিল করে। 

হাফিজুর মোল্লার মৃত্যু: হাফিজুর দরিদ্র পরিবারের সন্তান, সে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রলীগ মাধ্যমে দোতলার দক্ষিণ পাশের বারান্দায় থাকতো। তবে শীতের মধ্যে বারান্দায় থাকা এবং রাতের বেলায় ছাত্রলীগের গেস্টরুম কর্মসূচিতে যাওয়ার কারণে ঠা-া রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। নিউমোনিয়া ও টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয়ে বাসায় চলে যায়। এই রোগেই ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে মারা যায়। তার মৃত্যুতে অন্তত ১০টি ছাত্রজোট একত্রে হত্যা বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার টিচিং এ্যাসিস্টেন খন্দকার রাকিবের বর্ণনায় গেস্টরুম কালচার: সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রলীগের নির্যাতন নিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার টিচিং এ্যাসিস্টেন খন্দকার রাকিব গত ২৯ সেপ্টেম্বর তার ফেইসবুক আইডিতে লিখেন, আজ ছোট একটা কাজে পুরান ঢাকা গেলাম। পথে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে দিয়ে গেলাম। এই জায়গাটা দেখে অদ্ভুত শিহরণ জেগে উঠে বুকে। ছ্যাত করে উঠা অনেকটা। এখানে দোতলায় ৮ নম্বর রুমের পেছনের একটা কোনায় দীর্ঘ দুই বছর নাৎসি কনসেনট্রেশান ক্যাম্পের মত (বন্দী) এবং ভয়াবহ এক জীবন কাটিয়েছিলাম। তিন চার মাস পর টের পেতে থাকি এখানকার প্রতিটা রাত অনেকটা নাইটমেয়ারের মত। কোন রাতে কার ডাক পড়ে। একদিন রাত সত্যি সত্যি ডাক পড়ে আমার। অপরাধ আমার? এক ছাত্র সিগারেট খেয়ে জ্বলন্ত সিগারেট জানালা দিয়ে ফেলে এবং আমার একটা পাঞ্জাবির একটা ছোট অংশ পুড়ে যায়। পাঞ্জাবিটা আমার ছোট মামা খুব শখ করে কিনে দিয়েছিলেন। আমি জাস্ট রুমে জিজ্ঞেস করি এই কাজটা কে করেছেন। সেটার জন্য রাত ঠিক ১২টার পর আমার ডাক আসে। এমন কোন অকথ্য ভাষা নেই (যে ভাষার সাথে কখনো অভ্যস্ত ছিলাম না) তারা করেনি। দুই হাত দিয়ে নিপীড়নের পর লোহার রড নিয়ে আসে। দুই তিনটা বাড়ি দেয়ার পর-ই আমার হাত পা সব অবশ হয়ে পড়ে। চোখের পানি ছাড়া সেদিন কিছু বলতেও পারিনি। গভীর রাত দুইটার দিকে সেইরুমে সমাজবিজ্ঞানের এক ছাত্র, নাম মাহবুব, আমাকে নিপীড়নের হাত থেকে উদ্ধার করেন। উনার বাড়ি সম্ভবত কেরানিগঞ্জ। উনার সাথে পরিচয়ের কারণে সেদিন নিপীড়ন থেকে কিছুটা বেঁচেছিলাম। উনি ছাড়া সে রুমের কাউকে চিনতাম না। আমি আজও জানিনা আমাকে নিপীড়ন কারীদের নাম কি, তারা কোন বিভাগে পড়েন। এস এম হলের নথিবদ্ধ খাতায় তাদের পরিচয় আছে কিনা তাও জানিনা। সেদিন থেকে আমি কখনো ঢাকা ইউনিভার্সিটির প্রতি কোন মোহ বা এটাচমেন্ট ফিল করি না। এই ভার্সিটিটার হলগুলা ছিল একেকটা টর্চার সেল।

বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নিন্দা: ২২ নবেম্বর ২০২৩ সালে গেস্টরুমে ছাত্র নির্যাতনের বিরোধিতা করে টিএসসিতে তিন ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এক শিক্ষার্থী। ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করার এই সংস্কৃতি দ্রুত বন্ধে প্রয়োজনে আইন করা উচিত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন গণরুম-গেস্টরুম কালচার বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ইবিতে ছাত্র উলঙ্গ করে নির্যাতনের ঘটনায় ইসলামী ছাত্রশিবির নিন্দা জানিয়েছে। ১৫ মার্চ ২০২২ সালে ছাত্র অধিকার পরিষদ গেস্টরুম নির্যাতনবিরোধী আইনের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন খান আমরণ অনশন কর্মসূচি করেছিলেন। ২০১৮ সাল এবং শিক্ষার্থীদের উপর অব্যাহত নির্যাতনের জন্য বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ঈযধহমব.ড়ৎম নামক ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি পিটিশন শুরু করেছিল। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অন্যতম পত্রিকা ঢাকা ট্রিবিউন সংগঠনটিকে ‘লজ্জার ব্র্যান্ড’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছে। ভিন্নমতাবলম্বী ছাত্রগোষ্ঠীর উপর ধারাবাহিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে, ২৬ মে ২০২২ সালে বাংলাদেশের আটটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে অভিহিত করে।

ছাত্রলীগের নির্যাতনের বিবরণ: ১৯ ডিসেম্বর ২০০৯, দিনাজপুর টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নূরুজ্জামান পাঠান টুকটুক নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীর দু’পায়ের রগ কেটে দেয় ছাত্রলীগের অপর প্রতিপক্ষ গ্রুপ। রক্তাক্ত অবস্থায় নূরুজ্জামানকে প্রথমে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও সংকটাপন্ন অবস্থায় পরে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে কলেজের চলতি পরীক্ষা বাতিল করে ইন্সটিটিউট বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সমকাল, ২০ ডিসেম্বর ২০০৯। 

১৭ জানুয়ারি ২০১১, যশোর শহরের ষষ্ঠীতলাপাড়া এলাকার ছাত্রলীগ ক্যাডার রেমনের নেতৃত্বে পাঁচ-ছয় সন্ত্রাসী যশোর সরকারি এমএম কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র সার্কিট হাউসপাড়ার অনিক হাসান ও খড়কি এলাকার তৌকির মোহাম্মদ তরুণের উপর হামলা চালায়। এর মধ্যে তরুণের হাতের রগ কেটে দিয়েছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। সমকাল, ১৮ জানুয়ারি ২০১১। 

৩ এপ্রিল ২০১১, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ দলের কর্মী জাহিদকে ছুরিকাঘাত করে ডান পায়ের রগ কেটে দেয় ফিরোজ নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী। গুরুতর আহত অবস্থায় জাহিদকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় জাহিদ মতিহার থানায় মামলা করতে চাইলে ফিরোজ তাকে মামলা না করার হুমকি দেয়। জিনিউজবিডিডটকম, ৩ এপ্রিল ২০১১। 

৮ এপ্রিল ২০১১, ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর সিটি কলেজ লাইব্রেরির সামনে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা ছাত্রদল নেতা আরজুকে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে পঙ্গু করে দেয়। পুলিশ জানায়, রাত ৮টার দিকে আরজু বাড়ি থেকে শহরে যাচ্ছিল। এ সময় ওত পেতে থাকা ছাত্রলীগ কর্মী রাশেদ, রাকিব, আরিফ, রাজু ও ইমরান আরজুকে কুপিয়ে তার বাম পায়ের রগ কেটে দেয়। সমকাল, ৯ এপ্রিল ২০১১। 

১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এস এম হল ছাত্রদলের কর্মী জামান নামের শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়ে হলছাড়া করে ছাত্রলীগ। সংগ্রাম, ৫ ডিসেম্বর ২০১৩। 

৩০ অক্টোবর ২০১৩, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদল সন্দেহে ৯ শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়ে বের করে দেয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। সংগ্রাম, ৫ ডিসেম্বর ২০১৩। 

১৭ জুলাই ২০১৩, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এস এম হল ছাত্রদলের কর্মী সন্দেহে শামীম নামের এক শিক্ষার্থীকে বেদম প্রহার করে হল থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। সংগ্রাম, ৫ ডিসেম্বর ২০১৩। 

১১ মার্চ ২০১৫, বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নুরুজ্জামান বাহিনীর সন্ত্রাসীরা যুবলীগ নেতা সাজু মিয়াকে ডেকে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে থেঁতলে দেয়। এ ঘটনায় সাজুর বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার বাদী হয়ে নুরুজ্জামানসহ ১১ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। এদের মধ্যে জনি নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নয়া দিগন্ত, ১১ মার্চ ২০১৫। 

৮ আগস্ট ২০১৭, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিবিরকর্মীকে হল থেকে পুলিশে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের বিভিন্ন কক্ষ থেকে শিবির নেতাকর্মীদের আটক করা হয়।এ সময় তাদের কাছ থেকে শিবিরের বিভিন্ন নথি, কম্পিউটার ও নগদ ১৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। আর মারধরের ঘটনায় গুরুতর আহত কয়েকজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডেইলি অবজারভার, ৯ আগস্ট ২০১৭। 

২৬ অক্টোবর ২০১৭, শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রশিবিরের দুই কর্মীকে পিটিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। ডামুড্যা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুই শিবির কর্মী লিফলেট বিতরণ করছিল। তখন তারা দুই শিবির কর্মীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। লাস্টনিউজবিডি, ২৭ অক্টোবর ২০১৭। 

৩০ অক্টোবর ২০১৭, ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সোহরাওয়ার্দী হল শাখা সেক্রেটারি আরিফুল ইসলামকে ক্যাম্পাস থেকে রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চঞ্চল কুমার অর্ক ও সাবরুন জামিল সুষ্ময়সহ ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তার উপর মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালানো হয়। তারা তার হাতের প্রতিটি আঙুল ভেঙে দিয়েছে। পায়ের হাড় পিটিয়ে থেতলে দিয়েছে। শরীরের অসংখ্য হাড় ভেঙে গেছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। প্রথম আলো, ১ নবেম্বর ২০১৭।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ

string(13) "34.204.176.71"