শুক্রবার ১৫ নবেম্বর ২০২৪
Online Edition

একদলীয় ফ্যাসিবাদের উত্থান রোধে দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে

ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের  মানবতাবিরোধী গণহত্যা শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। গোটা বিশ্বের মানুষ আওয়ামী লীগের এ মানবতাবিরোধী গণহত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলো। এ ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক চরম হিংসাত্মক, অনৈতিক ও বর্বরোচিত অধ্যায়। এ রকম হিংসাত্মক ও মানবতাবিরোধী গণহত্যার কোন নজির এ দেশে নেই। তিনি বলেন, এ ধরনের ফ্যাসিবাদী দল ও জোট গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও মানবাধিকারের প্রতি এক মারাত্মক হুমকি। ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ধারার বিলুপ্তি ঘটাতে না পারলে কখনো দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার কায়েম এবং জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করা যাবে না। একদলীয় ফ্যাসিবাদের উত্থান রোধ করার জন্য দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। এককভাবে কারো পক্ষেই ফ্যাসিবাদী তাণ্ডব মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। 

দৈনিক সংগ্রামের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাতকার নিয়েছেন 

সামছুল আরেফীন। 

দৈনিক সংগ্রাম : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিগত চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন রাজপথে লগি বৈঠায় তা-ব ও পৈশাচিক হত্যাকা- চালানো হয়। এ ঘটনার ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?

ডা. শফিকুর রহমান : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে আয়োজিত জামায়াতে ইসলামীর শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট লগি বৈঠার নামে নানা ধরনের অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালিয়ে মানবতাবিরোধী গণহত্যা করে যে পৈশাচিক সন্ত্রাসী তা-ব চালিয়েছিলো, তা এদেশে ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। তারা জামায়াতে ইসলামীর শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালিয়ে জামায়াত ও শিবিরের ৬ জন নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে ঘটনাস্থলেই হত্যা করে তাদের লাশের উপর নৃত্য করেছিলো। তারা মানবতাবিরোধী গণহত্যা চালিয়ে যে পৈশাচিক তা-ব সৃষ্টি করেছিলো তা নজিরবিহীন। ঘটনার দিন তারা সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মোট ১৪ জন নেতা-কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলো। এক হাজারের অধিক লোককে আহত করেছিলো। তাদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে গিয়েছেন। ঐদিন সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪ দলীয় জোটের সন্ত্রাসীরা খুঁজে খুঁজে জামায়াত-শিবিরে নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছিলো। সেদিন তারা প্রকৃতপক্ষে পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালিয়েছিলো।

দৈনিক সংগ্রাম : বলা হয়, ২৮ অক্টোবর ও ১/১১ পূর্ব পরিকল্পিত। এ দেশকে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য এগুলো ঘটানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?

ডা. শফিকুর রহমান : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত। বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছিলো। শেখ হাসিনা ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠা নিয়ে ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলো। 

একদলীয় ফ্যাসিবাদের উত্থান রোধে দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে 

দাঁড়াতে হবে তার উদ্দেশ ছিলো ঢাকায় ব্যাপক সন্ত্রাসী তা-ব চালিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করে দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ঘটিয়ে তারা নির্বাচন বানচাল করার জন্যই ১/১১ তে সেনাবাহিনীকে দিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করিয়েছিলো। ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় গাজীপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা রুহুল আমীনকে হত্যা করার মধ্য দিয়েই তারা তা-ব শুরু করেছিলো। ঐ দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সারাদেশে বহু স্থানে ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা জামায়াতের নেতা-কর্মীদের উপর হামল চালিয়েছিলো। এ সব ঘটনার দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, ২৮ অক্টোবর ও ১/১১-এর ঘটনা ছিলো সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিত।

দৈনিক সংগ্রাম : এ ঘটনা নিয়ে মামলা হয়েছিলো। পুনঃতদন্তের নামে বারবার সময় পিছিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় মামলাটি অবৈধভাবে প্রত্যাহার করা হয়। এ বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?

ডা. শফিকুর রহমান : ২৮ অক্টোবরের ঘটনার বিচারের জন্য আমরা হত্যাকারীদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে মামলা করেছিলাম। কিন্তু সেই ঘটনার কোন তদন্ত ও বিচার তৎকালীন সরকার করেনি। আজ পর্যন্ত সেই ঘটনার কোন তদন্ত ও বিচার হয়নি। বরং শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে ঐ মামলা প্রত্যাহার করে বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়েছিলো। ঐ মামলা প্রত্যাহার করার মাধ্যমে শেখ হাসিনা বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিলো। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে তার ফ্যাসিবাদী চরিত্রই অতান্ত নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে ঐ ঘটনার বিচার চাই। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালে আমরা ঐ ঘটনার বিচার চাইবো। শেখ হাসিনাসহ ঐ ঘটনার সাথে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। 

দৈনিক সংগ্রাম : ২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি চরম হিংসাত্মক, অনৈতিক ও বর্বরচিত অধ্যায়। একটি উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতিবিদদের ২৮ অক্টোবরের ঘটনা থেকে কি শিক্ষা নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

ডা. শফিকুর রহমান : ২৮ অক্টোবরের ঐ মানবতাবিরোধী গণহত্যা শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। গোটা বিশ্বের মানুষ আওয়ামী লীগের এ মানবতাবিরোধী গণহত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলো। এ ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক চরম হিংসাত্মক, অনৈতিক ও বর্বরোচিত অধ্যায়। ঐ ধরনের হিংসাত্মক ও মানবতাবিরোধী গণহত্যার কোন নজির এ দেশে নেই। 

ঐ ঘটনা থেকে উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নেয়া উচিত যে, একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন কারো জন্যই কল্যাণকর নয়। ফ্যাসিবাদী দল গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি এক মারাত্মক হুমকি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল একটি ফ্যাসিবাদী জোট। এ ধরনের ফ্যাসিবাদী দল ও জোট গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও মানবাধিকারের প্রতি এক মারাত্মক হুমকি। এ ধরনের ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ধারার বিলুপ্তি ঘটাতে না পারলে কখনো দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার কায়েম এবং জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করা যাবে না। একদলীয় ফ্যাসিবাদের উত্থান রোধ করার জন্য দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। এককভাবে কারো পক্ষেই ফ্যাসিবাদী তা-ব মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। 

দৈনিক সংগ্রাম : রাজনীতিতে পরমত সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাবোধ কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন? বিগত সরকারের সময় এ ধরনের পরিবেশ ছিল কী?

ডা. শফিকুর রহমান : রাজনীতিতে পরমত সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাবোধ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য। পরমত সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছাড়া কখনোই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে সবাইকে ঐকমত্য পোষণ করতে হবে। কিন্তু প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকেই একে অপরের নীতি- আদর্শ, কর্মপন্থা ও মতামতের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

বিগত সাড়ে ১৫ বছরে দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, জনগণের ভোটাধিকার ও ন্যায় বিচার বলতে কোন কিছুই ছিল না। আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ছাড়া এ দেশে আর কারো রাজনীতি করার অধিকার ছিলো না। দেশের জনগণের ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার ছিলো না। দেশে কোন নির্বাচন হতে পারেনি। সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তারা ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার কথাই ছিলো শেষ কথা। তার কথার উপর আর কারো কোন কথা ছিল না। তিনি মোগল সম্রাট আকবারের চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী ছিলেন। তার ক্ষমতার সাথে হিটলার, মুসোলেনীর সাথে তুলনা করা যায়। 

দৈনিক সংগ্রাম : সুস্থ রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টিতে আপনার পরামর্শ কী?

ডা. শফিকুর রহমান : বাংলাদেশে একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সুস্থ রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টির জন্য আমরা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের যে প্রস্তাবনা দিয়েছি, তার মধ্যেই নিহিত আছেন মৌলিক সমাধান। সুস্থ রাজনৈতিক ধারা তৈরির জন্য আমাদের ঐ প্রস্তাবনার মধ্যে আমরা পরামর্শ দিয়েছি। সেই পরামর্শ সরকারের গ্রহণ করা উচিত। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী যদি সরকার দেশের রাজনৈতিক, সাংবিধানিক আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, শিক্ষা, সংস্কৃতি, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে তাহলেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে। সরকার যদি সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, সকল নৃশংস হত্যাকা-, গুম ও অপরাধের জন্য ফ্যাসাবাদী শক্তিকে আইনের আওতায় এনে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বহুদলীয় সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টি হবে, ইনশাআল্লাহ। 

তার উদ্দেশ ছিলো ঢাকায় ব্যাপক সন্ত্রাসী তা-ব চালিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করে দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ঘটিয়ে তারা নির্বাচন বানচাল করার জন্যই ১/১১ তে সেনাবাহিনীকে দিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করিয়েছিলো। ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় গাজীপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা রুহুল আমীনকে হত্যা করার মধ্য দিয়েই তারা তা-ব শুরু করেছিলো। ঐ দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সারাদেশে বহু স্থানে ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা জামায়াতের নেতা-কর্মীদের উপর হামল চালিয়েছিলো। এ সব ঘটনার দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, ২৮ অক্টোবর ও ১/১১-এর ঘটনা ছিলো সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিত।

দৈনিক সংগ্রাম : এ ঘটনা নিয়ে মামলা হয়েছিলো। পুনঃতদন্তের নামে বারবার সময় পিছিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় মামলাটি অবৈধভাবে প্রত্যাহার করা হয়। এ বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?

ডা. শফিকুর রহমান : ২৮ অক্টোবরের ঘটনার বিচারের জন্য আমরা হত্যাকারীদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে মামলা করেছিলাম। কিন্তু সেই ঘটনার কোন তদন্ত ও বিচার তৎকালীন সরকার করেনি। আজ পর্যন্ত সেই ঘটনার কোন তদন্ত ও বিচার হয়নি। বরং শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে ঐ মামলা প্রত্যাহার করে বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়েছিলো। ঐ মামলা প্রত্যাহার করার মাধ্যমে শেখ হাসিনা বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিলো। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে তার ফ্যাসিবাদী চরিত্রই অতান্ত নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে ঐ ঘটনার বিচার চাই। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালে আমরা ঐ ঘটনার বিচার চাইবো। শেখ হাসিনাসহ ঐ ঘটনার সাথে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। 

দৈনিক সংগ্রাম : ২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি চরম হিংসাত্মক, অনৈতিক ও বর্বরচিত অধ্যায়। একটি উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতিবিদদের ২৮ অক্টোবরের ঘটনা থেকে কি শিক্ষা নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

ডা. শফিকুর রহমান : ২৮ অক্টোবরের ঐ মানবতাবিরোধী গণহত্যা শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। গোটা বিশ্বের মানুষ আওয়ামী লীগের এ মানবতাবিরোধী গণহত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলো। এ ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক চরম হিংসাত্মক, অনৈতিক ও বর্বরোচিত অধ্যায়। ঐ ধরনের হিংসাত্মক ও মানবতাবিরোধী গণহত্যার কোন নজির এ দেশে নেই। 

ঐ ঘটনা থেকে উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নেয়া উচিত যে, একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন কারো জন্যই কল্যাণকর নয়। ফ্যাসিবাদী দল গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি এক মারাত্মক হুমকি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল একটি ফ্যাসিবাদী জোট। এ ধরনের ফ্যাসিবাদী দল ও জোট গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও মানবাধিকারের প্রতি এক মারাত্মক হুমকি। এ ধরনের ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ধারার বিলুপ্তি ঘটাতে না পারলে কখনো দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার কায়েম এবং জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করা যাবে না। একদলীয় ফ্যাসিবাদের উত্থান রোধ করার জন্য দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। এককভাবে কারো পক্ষেই ফ্যাসিবাদী তা-ব মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। 

দৈনিক সংগ্রাম : রাজনীতিতে পরমত সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাবোধ কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন? বিগত সরকারের সময় এ ধরনের পরিবেশ ছিল কী?

ডা. শফিকুর রহমান : রাজনীতিতে পরমত সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাবোধ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য। পরমত সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছাড়া কখনোই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে সবাইকে ঐকমত্য পোষণ করতে হবে। কিন্তু প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকেই একে অপরের নীতি- আদর্শ, কর্মপন্থা ও মতামতের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

বিগত সাড়ে ১৫ বছরে দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, জনগণের ভোটাধিকার ও ন্যায় বিচার বলতে কোন কিছুই ছিল না। আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ছাড়া এ দেশে আর কারো রাজনীতি করার অধিকার ছিলো না। দেশের জনগণের ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার ছিলো না। দেশে কোন নির্বাচন হতে পারেনি। সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তারা ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার কথাই ছিলো শেষ কথা। তার কথার উপর আর কারো কোন কথা ছিল না। তিনি মোগল সম্রাট আকবারের চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী ছিলেন। তার ক্ষমতার সাথে হিটলার, মুসোলেনীর সাথে তুলনা করা যায়। 

দৈনিক সংগ্রাম : সুস্থ রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টিতে আপনার পরামর্শ কী?

ডা. শফিকুর রহমান : বাংলাদেশে একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সুস্থ রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টির জন্য আমরা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের যে প্রস্তাবনা দিয়েছি, তার মধ্যেই নিহিত আছেন মৌলিক সমাধান। সুস্থ রাজনৈতিক ধারা তৈরির জন্য আমাদের ঐ প্রস্তাবনার মধ্যে আমরা পরামর্শ দিয়েছি। সেই পরামর্শ সরকারের গ্রহণ করা উচিত। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী যদি সরকার দেশের রাজনৈতিক, সাংবিধানিক আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, শিক্ষা, সংস্কৃতি, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে তাহলেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে। সরকার যদি সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, সকল নৃশংস হত্যাকাণ্ড, গুম ও অপরাধের জন্য ফ্যাসাবাদী শক্তিকে আইনের আওতায় এনে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বহুদলীয় সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টি হবে, ইনশাআল্লাহ। 

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ

string(13) "34.204.176.71"