সাফ-এর শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখলো বাংলাদেশের মেয়েরা
স্পোর্টস রিপোর্টার : স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশের মেয়েরা। বুধবার কাঠমান্ডুর দশরত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ২-১ গোলে জয় তুলে নিয়েছে সাবিনারা। এবারও বাংলাদেশের শিকার সেই নেপাল। ম্যাচের শুরুতে মনিকা চাকমার গোলে এগিয়ে গিয়েছিল লাল-সবুজের দলটি। এরপর সমতা ফেরায় নেপাল। তবে শেষ দিকে ঋতুপর্নার দারুণ এক গোলে শিরোপা নিশ্চিত করেন সাবিনারা।
কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে গ্যালারি ভর্তি দর্শকের সামনে বাংলাদেশকে সহজে জিততে দেয়নি স্বাগতিকরা। সাবিত্রা-আমিশারা আক্রমণে এসে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। পিটার বাটলারের দলকে এমন উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে জিততে বেশ গলদঘর্ম হতে হয়েছে। তবে শেষ হাসি হেসেছে সাবিনারা। ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে ক্রসবারের বাঁধায় প্রথামার্ধে এগিয়ে যাওয়া হলো না আসরের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের। শুরু থেকেই নেপালের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নদের মতই খেলতে থাকে বাংলাদেশ। প্রথম মিনিটেই আক্রমণ শানায় তারা। তহুরা খাতুনের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দ্বিতীয় মিনিটে গীতা রানার ভুলে গোল হজম করত বসেছিল নেপাল। গোলকিক নিতে এসে পিছলে পড়ে ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি তিনি। বক্সের বাইরে থাকা তহুরা খাতুন বল পেয়ে গোলে শট নেন। ক্রসবারে লেগে বল ফিরে আসে। ফিরতি বলে তহুরার হেড নেপালের গোলরক্ষ আঞ্জিলা সুব্বুরের গ্লাভসে জমা পড়ে।
ক্রসবারের বাঁধায় এগিয়ে যাওয়া হয়নি নেপালেরও। ম্যাচের দশম মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে সাবিত্রা ভান্ডারির উদ্দেশ্যে মাঝ মাঠ থেকে উচু পাস বাড়ান প্রীতি। বক্সের ভেতর ঢোকা বল ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক রূপনা চাকমা। ফিরতি বলে সাবিত্রার ক্রস বক্সের বাইরে পেয়ে যান আমিসা। তার জোড়ালো শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসলে এগিয়ে যাওয়া হয়নি স্বাগতিকদের। ফলে দুই দলই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেললেও প্রথমার্ধ শেষ হয়েছে গোলশূন্য ভাবেই। বিরতির পর খেলায় উত্তেজনা বাড়ে। আক্রমণ প্রতি আক্রমণে চলতে থাকে খেলা। গোলও আসে এই অর্ধে তিনটি। শুরুতে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। ৫২ মিনিটে আক্রমণ থেকে গোল আসে। সাবিনার পাসে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করতে গিয়ে ডান দিকে ঠেলে দেন, সেই দেওয়া বলে বক্সের ভেতরে মনিকা ডিফেন্ডারবেষ্টিত অবস্থায় আগুয়ান গোলকিপারের পাশ দিয়ে বল ঠেলে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাতেই উৎসবে মাতে লাল সবুজ দল।
চার মিনিট পর নেপাল সমতায় ফেরে। সাবিত্রা ভান্ডারির দারুণ এক পাসে আমিশা কির্কি বক্সে ঢুকে গোলকিপারের পাশ দিয়ে নিখুঁত শটে সমতা ফেরান। নিস্তব্ধ গ্যালারি জেগে ওঠে আনন্দে। এরপর আরও তিনটি আক্রমণ থেকে গোল ব্যবধান বাড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। ম্যাচের ৮১ মিনিটে বাংলাদেশ ব্যবধান বাড়ায়। শামসুন্নাহার সিনিয়রের থ্রো ইনে ঋতুপর্নার বাঁ পায়ের সরাসরি ভাসিয়ে দেওয়া বল গোলকিপারের হাত ছুঁঁয়ে দ্বিতীয় পোস্টের মাঝামাঝি ভেতরের অংশে লেগে জড়িয়ে যায় জালে। যোগ করা সময়ের ৫ মিনিটে কোনও দলই পারেনি গোল করতে। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই বাংলাদেশের শিবিরে বাঁধভাঙ্গা আনন্দ। হাজারো দর্শককে স্তব্ধ করে সাবিনা-তহুরাদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। গোলাম রব্বানী ছোটনের পর পিটার বাটলারও ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন!বাংলাদেশের একাদশ: রুপনা চাকমা, আফঈদা খন্দকার, মাসুরা পারভীন, শিউলী আজিম, সাবিনা খাতুন(স্বপ্না রানী), শামসুন্নাহার সিনিয়র, মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা, শামসুন্নাহার জুনিয়র ও তহুরা খাতুন।