শুক্রবার ১৫ নবেম্বর ২০২৪
Online Edition

শতাধিক মামলায় আ’লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ ৩৫ জন গ্রেফতার

 

স্টাফ রিপোর্টার: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলা ও হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপি এবং সরকার ঘনিষ্ঠ ৩৪ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা শতাধিক মামলায় নতুন করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক ৪ মন্ত্রীসহ ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিকে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল তাকে ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। 

পুলিশ  আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার সকালে আসামীদের উপস্থিতিতে শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরীফুর রহমান ও মো. ইমরান আহম্মেদের পৃথক দুটি আদালত শুনানি শেষে এসব আদেশ দেন। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা এসব মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা আসামীদের গ্রেফতার দেখানো ও রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। এদিন সকালে সেনাবাহিনী ও পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যদিয়ে আদালতে নেওয়া হয় আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এসব উপদেষ্টা, মন্ত্রী, এমপি ও ঘনিষ্ঠজনদের। এরপর একে একে তাদের আদালতে নেয়া হয়। পরে শুনানি শেষে শতাধিক মামলায় তাদেরকে নতুন করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর মধ্যে সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ডিএনসিসির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণিজ্য উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক কাউন্সিলির হাসিবুর রহমান মানিক, ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক ডিসি মশিউর রহমান এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ হিল কাফীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এছাড়া, রাজধানীর পৃথক দুই মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর মধ্যে হাইকোর্টে জাল ভোটের ঘটনায় শাহবাগ থানায় করা মামলায় পাঁচদিন ও বাড্ডা থানার হত্যা মামলায় তিনদিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদপুর থানার মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্রের তিনদিন ও যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের তিনদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ধানমন্ডি থানার মামলায় তিনদিন ও বংশাল থানার মামলায় চারদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়া নিউমার্কেট থানার মামলায় বহিষ্কৃত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল, চকবাজার থানার মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিম, ধানমন্ডির থানার হত্যা মামলায় সাবেক তথ্যমন্ত্রী ইনু ও চকবাজার থানার মামলায় ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈকতের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

অন্যদিকে সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. আবদুস শহীদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার আজমপুরে রাইদা পরিবহনের চালক আলমগীর হোসেনকে (৩৪) হত্যার অভিযোগে করা মামলায় এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গতকাল বুধবার ড. আবদুস শহীদকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই আব্দুল হালিম ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অন্যদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুর রহমান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এরআগে মঙ্গলবার আবদুস শহীদের উত্তরার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে বিজয়ী হওয়ার পর কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টানা ছয়বারসহ মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ড. আবদুস শহীদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার আজমপুরে রাইদা পরিবহনের চালক আলমগীর হোসেন গুলীতে নিহত হন। এ ঘটনায় তার মা আলেয়া বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় গত ৬ অক্টোবর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৮ জনকে আসামি করা হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ

string(13) "34.204.176.71"