রূপগঞ্জে অবহেলিত ও জরাজীর্ণ মাদরাসার নাম গোবিন্দপুর দাখিল মাদরাসা
নাজমুল হুদা, রূপগঞ্জ থেকে : জরাজীর্ণ ও বিদ্যুৎবিহীন একটি মাদরাসার নাম গোবিন্দপুর দাখিল মাদরাসা। ১৯৮২ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিম মাস্টার এ মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করলেও এখন পর্যন্ত উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। বরং মাদরাসাটি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০১১ সালে পূর্বাচল উপ-শহরের কাজ শুরু হলে মাদরাসাটির বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। এখন পর্যন্ত সংযোগটি আর দেয়া হয়নি। মাদরাসায় ১ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় শ্রেণী কক্ষেই ক্লাস করতে হচ্ছে।
১৯৯৬ সালে মেজর জেনারেল (অব) কে. এম শফিউল্লাহ বীর উত্তম এর মাধ্যমে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ১টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল, যা ২০১১ সালের দিকে ভবনটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে আর সামান্য বৃষ্টিতেই দেয়াল ও ছাদ চুয়ে চুয়ে শ্রেণীকক্ষে পানি পড়ে। আর শিক্ষার্থীর তুলনায় মাদরাসাটিতে শ্রেণী কক্ষ্যের অভাব থাকায় পুরানো ও জরাজীর্ণ সেই শ্রেণী কক্ষেই প্রতিনিয়ত ক্লাস চুয়ে পানি পড়লেও এখন পর্যন্ত ভবনটি সংস্কার করা হয়নি। ভবনটির বর্তমান অবস্থা বিকট আকার ধারণ করেছে। ভবনের প্রতিটি শ্রেণী কক্ষের মেঝেই দেবে গেছে আর দেয়ালগুলোতেও বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে কংক্রিট ও বালি খসে খসে পড়ছে। যে কোন সময় ভবনটি ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। শ্রেণী কক্ষের অভাবে প্রতিনিয়তই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের এখানে ক্লাস করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মাদরাসাটিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে ভুগছেন। নেই কোন স্বাস্থ্যকর শৌচাগার। শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোন খেলার মাঠ, তথ্য প্রযুক্তিতে জ্ঞান অর্জনের জন্যও নেই কোন ব্যবস্থা। এক কথায় হাজারও সমস্যায় জর্জরিত এ মাদরাসাটি আজ হৃৎপি-হীন হয়ে পড়ছে। এ মাদরাসাটি থেকে প্রতি বছরই শতভাগ পাসসহ শিক্ষার্থীরা ভাল ফলাফল অর্জন করে আসলেও নানাবিধ সমস্যার কারণে মাদরাসাটি যে কোন সময়ই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বন্ধ হয়ে যেতে পাড়ে পূর্বাচল গোবিন্দপুর এলাকার দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষা গড়ার অন্যতম মাধ্যম এ মাদরাসাটি।
এ মাদরাসার শিক্ষার্থী আমীরুন, হাবিবা, মাওয়া, ঋতুবর্ণা, সজিব, মামুন, তুহিন, জহিরুল জানায়, পর্যাপ্ত শ্রেণী কক্ষের অভাবে জরাজীর্ণ ও পুরানো ভবনটিতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের ক্লাশ করতে হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় টিনসেটের শ্রেণীকক্ষগুলো প্রচ- রোদের তাপে ঝলসে যাওয়ার মত হয়ে পড়ে। আর সামান্য বৃষ্টিতেই ছাদ চুয়ে শ্রেণীকক্ষে পানি পড়ায় অনেক সময়ই বই-খাতা ভিজে যায়। আবার মাদরাসাতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় টিনশেডসহ পুরানো ভবনটিতে ক্লাস করার সময় প্রচ- গরমে অতিষ্ঠ হয়েও বছরের পর বছর এভাবেই ক্লাস করতে হচ্ছে তাদের। আর এখানে রয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব, রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের অভাব। নেই কোন খেলার মাঠ, তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জনের জন্য নেই কোন কমনরুমের ব্যবস্থা। সবারইতো ভাগ্যের পরিবর্তন হয়! শুধু পরিবর্তন হয়না এই মাদরাসাটির। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার জন্য অনেক কিছুই করছেন, যদি এই মাদরাসাটির জন্য একটু সদয় হন, তাহলে তারা পড়াশুনায় আরো ভাল ফলাফল করতে পারবে বলে জানান।
এ বিষয়ে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিম মাস্টার জানান, মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার্থীরা ভাল ফলাফলের মাধ্যমে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। কিন্তু আজ বিভিন্ন সমস্যার কারণে মাদরাসাটি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পরছে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মাদরাসাটির প্রতি একটু সদয় হন, তাহলে শিক্ষার্থীরা আরো ভাল ফলাফল অর্জন করতে পারবে বলে তার বিশ্বাস।
মাদরাসার প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ-হীল কাফি জানান, এত সমস্যা থাকার পরও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রতি বছরই ভাল ফলাফল করে আসছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন, মাদরাসার বিদ্যুৎ, শ্রেণী কক্ষ, বিশুদ্ধ পানি, খেলার মাঠসহ নানা সমস্যার সমাধানে যদি একটু সদয় হন, তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরা আর ভাল ফলাফল করতে পারবে বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূর আলম জানান, মাদরাসাটিতে আগে বিদ্যুৎ ছিল কিন্তু পূর্বাচল উপশহরের নির্মাণ কাজের স্বার্থে রাজউক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে সোলার প্যানেলের ব্যবস্থা করা হবে। আর ভবনটি সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানান নেই। যদি কেউ আবেদন করে ,তবে অবশ্যই বিষয়টি দেখবো।