জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বিশ্বব্যাংক ঋণ ব্যবসা করছে -ড. ইফতেখারুজ্জামান
স্টাফ রিপোর্টার : জলবায়ু পরিবর্তনের নামে বিশ্বব্যাংক ঋণ ব্যবসা করছে বলে মন্তব্য করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দায়ী দেশগুলো ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কূটকৌশলে বিশ্বব্যাংকের মাধ্যেমে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে।
আগামী ৭-১৮ নবেম্বর মরক্কোর মারাকাশ শহরে অনুষ্ঠিতব্য ২২তম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২২) প্রাক্কালে গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি গোলটেবিল কক্ষে যৌথভাবে টিআইবি, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনা এবং উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোটের (ক্লিন) আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এতে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু ন্যায্যতা ঘোষণা’ পাঠ করেন ক্লিন-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। ক্লিন-টিআইবি-সনাক খুলনা ওয়ার্কিং গ্রুপের আহ্বায়ক এডভোকেট কুদরত-ই-খুদা’র সঞ্চালনায় সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে প্রান্তজনের নির্বাহী পরিচালক এস এম শাহজাদা, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফসহ বিভিন্ন সমমনা সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ৯টিসহ বাংলাদেশের ১৫টি জেলার শতাধিক বেসরকারি সংগঠন এবং দশ হাজারেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণ, ক্লিন, টিআইবি ও সনাক খুলনা এর উদ্যোগে ২২-২৮ অক্টোবর সাত দিনব্যাপী ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সপ্তাহ’এর বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করে এবং তারই অংশ হিসেবে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গত চার বছরে আমাদের ১৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উন্নত দেশের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। আর এ কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই দায়ী দেশগুলো বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশকে ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কূটকৌশলে বিশ্বব্যাংকের মাধ্যেমে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক সুদ ছাড়া ঋণ দেয় না। বাংলাদেশকে যে ২ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে তা ঋণ। ক্ষতিপূরণে সহয়তার নামে বিশ্বব্যাংক ঋণ ব্যবসা করছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তেনের ক্ষতিপূরণ চাই, ঋণ চাইনা।
তিনি আরো বলেন, জলবায়ু মোকাবিলার জন্য সরকার ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠন করেছে। এদিকে যেসব দেশের কারণে বাংলাদেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ১৩০ মিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যথেষ্ট সাহস দেখিয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিগত ৫ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে আমরা যেন এমন কিছু না করি যাতে নিজেরাই অভিযুক্ত হই। গঠিত তহবিলের অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় কম বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, সরকারের যে কূটনৈকিত দক্ষতা রয়েছে তাতে দায়ী দেশগুলো কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবে। আশা করছি আগামী জলবায়ূ সম্মেলনে দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়ে আসবে সরকার। পাশাপাশি দায়ীরা যাতে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দোষী করতে না পারে সে জন্যে পরিবেশ বান্ধব শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ গড়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকাসহ ১১ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। অন্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমের হার কমানো হচ্ছে কি না সেটি যাচাই বাচাই, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করার জন্য শক্তিশালী আইনি ব্যবস্থা ও পরিবীক্ষণ সংস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। যাতে কার্বন নির্গমন কমানোর বিপরীতে যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়। প্রতিশ্রুতি অনুসারে শিল্পোন্নত দেশ থেকে সবুজ জলবায়ু তহবিলের প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি ডলার প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সবুজ জলবায়ু তহবিলে ‘ছদ্মবেশী ঋণ’ ও ‘শর্তাধীন সহায়তা’ বন্ধ করার লক্ষ্যে সব অর্থ ইউএনএফসির অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমে প্রদান করতে হবে।