রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

তাওবার সুফল

মুহাম্মদ গোলাম রহমান : [পূর্ব প্রকাশিতের পর]
বিশুদ্ধ তাওবার প্রতিফল :
এক. তাওবা করার পূর্বে অন্তরের সমস্ত পঙ্কিলতা ঝেড়ে ফেলে বিশুদ্ধ মনে তাওবা করলে মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন: ‘হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধচিত্তে তাওবা করো তাহলে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দকর্মসমূহ মিটিয়ে দিবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত। (সূরা আত-তাহরীম-৮)
দুই. মহান আল্লাহ তাওবাকারীর তাওবা কবুল করে তাকে শুধু পাপমুক্তই করেন না, বরং তার পাপকে পুণ্যে রূপান্তরিত করেন। মহান আল্লাহ বলেন : ‘তবে তারা নয়, যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তা’আলা তাদের পাপকে পুণ্যদ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আল ফুরকান-৭০)
তিন. মহান আল্লাহ তাওবাকারীর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে মহা পুরস্কারে ভূষিত করবেন এমন ঘোষণা দিয়েছেন :
‘কিন্তু যারা তাওবা করে নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করে নেয়, আল্লাহর রশি শক্তভাবে ধারণ করে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেদের দীনে একনিষ্ঠ থাকে তারা মু’মিনদের সাথে থাকবে। অচিরেই আল্লাহ মু’মিনদেরকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করবেন। (সূরা আন নিসা-১৪৬)
তাওবা না করার প্রতিফল : যারা পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার পরও তাওবা করে না, আল্লাহ তাদেরকে তিরস্কারের ভাষায় বলেন : ‘তবে কি তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না। (সূরা আল মায়িদা-৭৪)
এতদ্ব্যতীত তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন জাহান্নামের পীড়াদায়ক শাস্তি। মহান আল্লাহ বলেন : ‘যারা ঈমানদার নর-নারীর ওপর জুলুম-নির্যাতন করেছে অতঃপর তাওবা করেনি, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব ও দহনযন্ত্রণা।’ (সূরা আল বুরুজ-১০)
তাওবাকারীর বৈশিষ্ট্য : মহান আল্লাহ সম্যক অবগত যে, তারা তাওবা করে তারা শুধু স্বীয় পাপ মোচনের জন্যই তাওবা করে না বরং তাদের আরও কিছু গুণ বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আল্লাহ তা’আলার ভাষায় তারা হলেন, ‘তারা তাওবাকারী, ‘ইবাদাতকারী, আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা জ্ঞাপনকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকুকারী, সাজদাকারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী, অসৎ কাজ হতে নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমা সংরক্ষণকারী। সুতরাং তুমি মু’মিনদেরকে (সুখময়) জান্নাতের সুসংবাদ দাও।’ (সূরা আত তাওবা-১১২)
বিশুদ্ধ তাওবার একটি দৃষ্টান্ত : মানুষ তার কৃত পাপের জন্য বিশুদ্ধচিত্তে তাওবা করলে মহান আল্লাহ তাকে এমনভাবে ক্ষমা করেন, যা ৭০ জন পাপীকে পাপমুক্ত করার সমতুল্য। রাসূল (সা.)  বলেন :‘ইমরান ইবনু হুসাইন খুযায়ী (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, জুহায়না গোত্রের এক নারী আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর নিকট হাজির হলো, সে অবৈধ মিলনে গর্ভবতী ছিল, সে বললো : হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমি দণ্ডনীয় অপরাধ করে ফেলেছি, তাই আপনি আমাকে শাস্তি দিন। সুতরাং আল্লাহর নবী (সা.) তার আত্মীয়কে ডেকে বললেন, তুমি একে নিজের কাছে যত্নসহকারে রাখো এবং সন্তান প্রসবের পর একে আমার নিকট নিয়ে এসো, সুতরাং সে তাই করলো [অর্থাৎ-প্রসবের পর রাসূল (সা.)-এর কাছে নিয়ে এলো]। আল্লাহর নবী (সা.) তার কাপড় তার শরীরের ওপর মজবুত করে বেঁধে দেয়ার আদেশ দিলেন, অতঃপর তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার আদেশ দিলেন, এরপর তিনি তার জানাযার সালাত পড়লেন। ‘উমার (রাযি.) তাকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এই মেয়ের জানাযার সালাত পড়লেন অথচ সে ব্যভিচার করেছিল। তিনি (সা.) বললেন, (উমার তুমি জানো যে,) এই মহিলাটি এমন বিশুদ্ধ তাওবা করেছে, যদি তা মদীনার ৭০টি লোকের মধ্যে বণ্টন করা হতো তা তাদের জন্য যথেষ্ট হতো। এর চেয়ে কি তুমি কোনো উত্তম কাজ পেয়েছে যে, সে আল্লাহর জন্য নিজের প্রাণকে কুরবান করে দিল। (সহীহ মুসলিম : ২৪/১৬৯৬; তিরমিযী-১৪৩৫; নাসাঈ-১৯৫৭; আবু দাউদ-৪৪৪০; ইবনু মাজাহ-২৫৫৫।)
দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত : আবূ সা’ঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত; নবী (সা.) বলেছেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে নিরানব্বইটি মানুষ হত্যা করেছিল। অতঃপর সে (নিজের ভুল বুঝতে পেরে) একজন পাদরীকে জিজ্ঞেস করলো, (আমি যে মহাপাপ করেছি এ জন্য) আমার তাওবা কবুল হওয়ার কোন আশা আছে কী? পাদরী বললো, না। তখন সে (হতাশ হয়ে) পাদরীকেও হত্যা করলো। অতঃপর সে (ক্ষমাপ্রাপ্তির আশায় অন্যদেরকেও) পুনরায় জিজ্ঞেস করতে লাগলো; তখন এ ব্যক্তি তাকে (আশ্বস্ত করে) বললো, তুমি অমুক স্থানে যাও। সে (ক্ষমাপ্রাপ্তির তীব্র আকাক্সক্ষা নিয়ে) রওনা হলো এবং পথিমধ্যে তার মৃত্যু হলো। (মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে প্রাণপণ চেষ্টা করে) সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সেই (কাক্সিক্ষত) স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমত ও আযাবের ফেরেশতাম-লী তার রূহকে নিয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত হলেন। (সে ব্যক্তির পাপের অনুশোচনা ও ক্ষমাপ্রাপ্তির প্রাণপণ চেষ্টায় সন্তুষ্ট হয়ে) আল্লাহ সামনের ভূমিকে আদেশ করলেন, তুমি মৃতব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং পশ্চাতে ফেলে আসা স্থানকে  (যেখানে শেষ হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল) আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর ফেরেশতাদের উভয় দলকে নির্দেশ দিলেন তোমরা এখান থেকে উভয় দিকের দূরত্ব পরিমাপ করো। পরিমাপ করে দেখা গেল যে, মৃত ব্যক্তিটি সামনের দিকে একবিঘত পরিমাণ বেশি এগিয়ে আছে- কাজেই তাকে ক্ষমা করা হলো। (সহীহুল বুখারী-৩৪৭০; সহীহ মুসলিম-২৭৬৬)।
প্রাসঙ্গিক ভাবনা : উল্লিখিত হাদীসদ্বয়ে ক্ষমার দুই ধরনের দৃষ্টান্ত পেশ করা হলো। প্রথমত: মহিলাটি পরকালের ভয়াবহ শাস্তি উপলব্ধি করে স্থায়ী পরিত্রাণের আশায় তার কৃত অপরাধের জন্য দুনিয়ার শাস্তিকে সন্তুষ্টচিত্তে বরণ করে নিল। ফলে গফুরুর রাহীম আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে এমনভাবে পাপমুক্ত করলেন যে, সেই ক্ষমা ৭০ জন মদীনাবাসীর জন্য যথেষ্ট হবে। দ্বিতীয়ত: বনী ইসরাঈলের খুনি লোকটি যখন তার পাপের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ক্ষমাপ্রাপ্তির তীব্র বাসনা নিয়ে প্রাণপণ ছুটছিল ও পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করলো, তখন দয়াময় আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ঐশী মদদ দান করলেন; ফলে সে পাপমুক্ত হয়ে শান্তিময় জান্নাতে নিজের স্থান করে নিলো।
উল্লেখ যে, সামাজিক শৃঙ্খলা সংরক্ষণের জন্য সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ মহান আল্লাহ কতিপয় পাপের শাস্তি দুনিয়াতেই তাৎক্ষণিকভাবে প্রদানের দিয়েছেন। বিচারকগণ প্রত্যক্ষ সাক্ষী-প্রমাণের ভিত্তিতে সে সকল অপরাধের শাস্তি প্রয়োগ করবেন। এ ক্ষেত্রে বিচারকগণ কেবলমাত্র অপরাধীকে চিহ্নিত করে শাস্তি প্রয়োগ করবেন; কিন্তু কোন অপরাধের শাস্তি কি- তা আল্লাহ তা’আলা (আল কুরআনেই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন- চুরি করলে চোরের হাত কেটে দেয়া, জেনা করলে একশত বেত্রাঘাত করা, বিবাহিত জেনাকারীকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা, মদ্যপকে বেত্রাঘাত করা, হত্যাকারীকে হত্যা করা ইত্যাদি। এ সকল পাপের শাস্তি দুনিয়াতেই প্রদান করা না হলে তা মহামারীরূপ ধারণ করে সামাজিক অবকাঠামো ভেঙে খানখান হয়ে যাবে এবং অশান্তির কালো ধোঁয়ায় এ দুনিয়া নরকে পরিণত হবে।
উল্লিখিত অপরাধীগণ যখন পরকালের শাস্তির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে বিচারকের নিকট স্বীয় অপরাধের স্বীকৃতি দান করে শাস্তিকে বরণ করে নিবে তখন গফুরুর রাহীম আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে সম্পূর্ণভাবে নিষ্পাপ করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন ইনশা-আল্লাহ। আর অন্যদের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ্র এখতিয়ারের উপর নির্ভরশীল। তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমাও করতে পারেন এবং শাস্তিও দিতে পারেন।
যাদের তাওবা কবূল করা হয় :
এক. অজ্ঞতাবশত পাপকার্যে লিপ্ত হওয়ার পর যারা তাওবা করে। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘যারা আমার আয়াতে ঈমান আনে তারা যখন তোমার নিকট আসে তখন তাদেরকে তুমি বলো, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক’, তোমাদের প্রতিপালক দয়া করা তাঁর কর্তব্য বলে স্থির করেছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ অজ্ঞতাবশত: যদি মন্দ কার্য করে, অতঃপর তাওবা করে এবং সংশোধন করে নেয় তবে তো আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আল আন’আম-৫৪)
‘কেউ কোন মন্দ কার্য করে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করে পরে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ্কে সে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।’ (সূরা আন-নিসা-১১০)
দুই. যারা পাপকর্ম থেকে বিরত হয়ে যায়। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘যদি তারা বিরত হয় তবে আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আল বাকারা-১৯২)
তিন. যারা নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলো, হে কিতাবীগণ! তোমরা আল্লাহর নিদর্শনকে কেন প্রত্যাখ্যান করো? তোমরা যা করো আল্লাহ্ সেটার সাক্ষী।’ (সূরা আলে ইমরান-৯৮)
‘তবে যারা জুলুম করার পর মন্দকর্মের পরিবর্তে সৎকর্ম করে তাদের প্রতি আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আন নামল-১১)
চার. যারা ঈমান আনার পর সৎকর্ম সম্পাদন করে। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘এবং আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি, যে তাওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচলিত থাকে।’ (সূরা ত্ব-হা-৮২)
‘সুতরাং যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।’ (সূরা আল হাজ্জ-৫০)
পাঁচ. যারা না দেখেই মহান আল্লাহকে ভয় করে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তুমি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পারো যারা উপদেশ মেনেচলে এবং না দেখে দয়াময় আল্লাহ্কে ভয় করে। অতএব, তাদেরকে তুমি ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের সংবাদ দাও।’ (সূরা ইয়া-সীন-১১)
ছয়. যারা তাকওয়া অবলম্বন করে। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘হে মু’মিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো তবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দিবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন এবং আল্লাহ্ অতিশয় মঙ্গলময়।’ সূরা আল আনফাল-২৯)
সাত. যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে স্বীয় জানমাল উৎসর্গ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে কোন কর্মে নিষ্ঠ নর অতবা নারীর কর্ম বিফল করি না; তোমরা একে অপরের অংশ। সুতরাং যারা হিজরত করেছে, নিজ গৃহ হতে উৎখাত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে আমি তাদের মন্দ কার্যগুলো অবশ্যই দূরীভূত করব এবং অবশ্যই তাদেরকে দাখিল করব জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। এটা আল্লাহ্র নিকট হতে পুরস্কার; উত্তম পুরস্কার আল্লাহরই নিকট।’
আট. যারা আল্লাহ্র পথে দান-সাদাকা করে। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহ্কে উত্তম ঋণ দান করো তিনি তোমাদের জন্য সেটা বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, ধৈর্যশীল।’ (সূরা আত-তাগাবুন-১৭)
যারা রাসূলুল্লাহ’র যথাযথ অনুসরণ করে। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘বলো, ‘তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাসা তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আলে ইমরান-৩১)
যারা সর্বদা সত্য ও সঠিক কথা বলে। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহ্কে ভয় করে এবং সঠিক কথা বলো।’ (সূরা আল আহযাব-৭০)
নয়. যারা মানুষের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেয়। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্য্যরে অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহ্র রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে তাদেরকে কিছুই দিবে না।’ (উক্ত [ইফক] অপবাদ রটনার ব্যাপারে কিছু সরল মুসলিমও জড়িত হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে আবু বকর (রাঃ)-এর দরিদ্র আত্মীয় মিসতাহ্ (রাঃ)ও ছিলেন, যাঁকে আবু বকর (রাঃ) আর্থিক সাহায্য করতেন। এই ঘটনার পর আবু বকর তাঁকে সাহায্য দান বন্ধ করে দিলে আয়াতটি অবতীর্ণ হয়)।
তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাহ না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আন্্ নূর-২২)
দশ. যারা সকল প্রকার কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা গুরুতর তা হতে বিরত থাকলে তোমাদের লঘুতর পাপগুলো মোচন করব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে দাখিল করব।’ (সূরা আন্ নিসা-৩১)
যাদের তাওবা কবুলযোগ্য নয় :
এক. যারা শিরকে লিপ্ত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর শরীক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এটা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যে কেউ আল্লাহর শরীক করে সে এক মহাপাপ করে।’ (সূরা আন্ নিসা-৪৮)
দুই. যাদের মধ্যে মুনাফিকের দোষ বিদ্যমান। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো অথবা না করো, উভয়ই তাদের জন্য সমান। আল্লাহ তাদেরকে কখনও ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ (সূরা আল মুনাফিকুন-৬)
তিন. যারা সীমালঙ্ঘন করে। মহান আল্লাহ বলেন, যারা কুফরী করেছে ও সীমালঙ্ঘন করেছে আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না।’ (সূরা আন নিসা-১৬৮)
চার. ঈমান আনার পরও যারা পুনঃ পুনঃ কুফরী করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান আনে ও পরে কুফরী করে এবং আবার ঈমান আনে, আবার কুফরী করে।’ (অন্তরের ইয়াকীন বা দৃঢ় বিশ্বাসের নাম ঈমান, মুনাফিকগণ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ‘ঈমান এনেছে’ বলে মুখে প্রকাশ করত, আবার সুযোগ সুবিধা পেলে সেটা অস্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করত না, আলোচ্য আয়াতে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে।
অতঃপর তাদের কুফরী প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথে পরিচালিত করবেন না। (সূরা আন নিসা-১৩৭)
পাঁচ. যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা কুফরী করে ও আল্লাহর পথ হতে মানুষকে নিবৃত্ত করে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না।’ (সূরা মুহাম্মদ-৩৪)
তাওবার দরজা কখন বন্ধ হবে :
আবূ মুসা আশআরী (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা’আলা রাত্রিতে নিজ হাত প্রসারিত করেন যেন দিনে পাপকারী (রাতে) তাওবা করে; এবং দিনে তাঁর হাত সম্প্রসারিত করেন; যেন রাতে পাপকারী (দিনে) তাওবা করে। যে পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হবে সে পর্যন্ত এই রীতি চালু থাকবে।’ (সহীহ মুসলিম-৩১/২৭৫৯; আহমাদ-১৯০৩৫)
আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত; রাসূল (সা.) বলেছেন : পূর্ব দিক হতে সূর্যোদয় হওয়ার পূর্বে যে ব্যক্তি তাওবা করবে আল্লাহ তার তাওবা কবূল করবেন। (সহীহ মুসলিম-৪৩/২৭০৩; আহমাদ-৭৬৫৪)

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ