রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

সাইবার নিরাপত্তায় নেই সমন্বিত ব্যবস্থা ॥কাটছে না উদ্বেগ উৎকন্ঠা

* রাকেশ আস্তানার নিয়োগ বাতিল
এইচ এম আকতার: রিজার্ভ চুরির নয় মাস অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকগুলোর সাইবার নিরাপত্তায় জোরদারে নেয়া হয়নি সমন্বিত ব্যবস্থা। এ নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা এখনও কাটছে না। দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আবারও বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। আর এসব কারণেই এখনও নিরাপত্তাহীনতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার। তবে  বিভিন্ন ব্যাংক শাখার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নতুন করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত বছরের ৫ জুলাই জারি করা বিআরপিডি সার্কুলার নং ০৭-এর কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ঝুঁকি এড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যপদ্ধতি পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি।পাশাপাশি প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন কর্মকর্তাকে আইটি বিভাগের প্রধান করা, একজন আইটি বিশেষজ্ঞকে ডিজি করা ও কর্মকর্তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন গবেষকরা।
এব্যাপরে প্রযুক্তিবিদ আহমেদ খুরশিদ বলেন,বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তত্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা। গত কয়েক বছরে সারা বিশ্বে যে কয়টি হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটেছে তার বিশ্লেষন করা। এবং সে আলোকে দুর্বলতা নির্নয় করে প্রযুক্তি নিরাপত্তা বাড়ানো। তাহলেই ব্যাংকিং ঝুকি কিছুটা কমবে। তা না হলে এধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে।
তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেন,আইটি জ্ঞান আছে এমন একজনকে ডিজি করে নিরাপত্তার দায়িত্ব দিতে হবে। এ ব্যাপারে তদন্ত রিপোর্টে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তা কার্যকর করা। তাহলেই নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নয় এর পাশাপাশি সব ব্যাংকের নিরাপত্তা আরও বাড়াতে হবে। তা না হলে বড় ধরনের চুরি বা ডাকাতির ঘটনা আরও ঘটতে পারে।
চিঠিতে বলা হয়, সার্কুলারের ০৭ নং অনুচ্ছেদে ব্যাংক স্থাপনায় চুরি, ডাকাতিসহ যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবেলা ও প্রতিরোধের জন্য দ্রত পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিটি ব্যাংক শাখায় অটো এলার্ম সিস্টেমস চালু করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
অটো এলার্ম সিস্টেমস আরও বেশি কার্যকরি করার জন্য বেশ কিছু বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আবু ফরাহ মোঃ নাছেরের সই করা ওই চিঠিতে।
বলা হয়েছে, এলার্ম সিস্টেমের সঙ্গে অটো লক গেট স্থাপন করতে হবে যেন এলার্ম বাজলে গেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং পিন কোড ছাড়া খোলা না যায়। এলার্ম সিস্টেম এমন জায়গায় বসাতে হবে যাতে টেম্পারিং এর সুযোগ না থাকে। লেজার বিমযুক্ত এলার্ম সিস্টেম স্থাপন করতে হবে যেন রাতেও ব্যাংক অনেক বেশি নিরাপত্তা বলয়ে থাকে। এলার্ম সিস্টেম এর সঙ্গে মোশন ডিটেক্টর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ব্যবহার করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে এসব নিয়ম মেনে চললে ব্যাংকের আর বড় ধরনের চুরি বা ডাকাতি হবে না।
জানা গেছে,সব ব্যাংকের অভিভাবক হলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর  এ কারণেই নিজেদের নিরাপত্তার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তার কথাও তাদের ভাবতে হয়। যদিও এখনও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাইবার।
উল্লেখ্য   ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ হ্যাকিং এর ঘটনার পর আলোচনায় আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি। কর্মকর্তাদের উদাসীনতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব, দুর্নীতিপরায়ণ মানসিকতার কথা উঠে আসে তদন্ত প্রতিবেদনে।
ঘটনার পরপরই রিজার্ভ হ্যাকিং রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপে নেয়া হয়। ব্যাক অফিসের নিরাপত্তা জোরদার করা, চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থা, সুইফটের সঙ্গে আরটিজিএসের সংযোগ বিছিন্ন করা, সুইফট এলাইন্স এসেস আপডেট সার্ভার স্থাপন করা হয়।
তবে পুরো ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সমন্বিত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রযুক্তিবিদ রাকেশ আস্তানাকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলেও তা বাতিল করা হয়। আবার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ না হওয়ায় সুপারিশ সম্পর্কেও জানতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ