রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

নীতিমালা না থাকায় স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জের ৬শ’ কোটি টাকা নিয়ে বিপাকে অর্থমন্ত্রণালয়

স্টাফ রিপোর্টার : নীতিমালা না থাকায় স্বাস্থ্য উন্নয়নে সারচার্জের ৬০০ কোটি টাকা নিয়ে জটলায় পড়েছে অর্থবিভাগ। গত দুই অর্থ বছরে তামাক খাত থেকে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বাবদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবি আর) প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আদায় করলেও এ সংক্রান্ত ব্যবহার নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় অলস পড়ে আছে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ। অথচ টাকার অভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল তামাকবিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ও গ্লোবাল এডাল্ট টোবাকো সার্ভে ২০০৯ তথ্যমতে অনুসারে বাংলাদেশে ৪ কোটি ১৩ লাখ (৪৩%) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করে। আর পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে মারা যায় ৫৭ হাজার মানুষ, পঙ্গুত্ববরণ করে ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর শতকরা ৬০ ভাগ হয় অসংক্রামক রোগের কারণে। এ ক্ষতি কিছুটা পোষাতে সরকার স্বাস্থ্য উন্নয়নে সারচার্জ চালু করে। এ খাত থেকে প্রতিবছর প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আয় হয়।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, অর্থ ব্যবহারের নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় এই বিষয়ে আমি এখন কোন মন্তব্য দিতে চাই না।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত বলেন, তামাক খাত থেকে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বাবদ যে টাকা আসে তার মধ্যে ৪৫% তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত কর্মসূচিতে গবেষণা ও প্রচারে ব্যয় করা যেতে পারে। ৪০% ব্যয় করা যেতে পারে তামাক চাষে নিয়োজিত যে সকল কৃষক এবং তামাক পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের কর্মসূচিতে। বাকি ১৫% নিকোটিন আসক্তি মুক্ত করার কর্মসূচিতে ব্যয় করা যেতে পারে।
গত ৩০-৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এবং ইন্টার পার্লামেন্টটারি ইউনিয়ন আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ার স্পিকার সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তামাকজাত দ্রব্য হতে সংগৃহীত সারচার্জের অর্থের মাধ্যমে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণের ঘোষণা করেন। ঐ সম্মেলনে  তামাক নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবহারের বিষয়টি সম্পৃক্ত করা হয়।
স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জের সুষ্ঠু ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো তৈরির জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। উক্ত কমিটি সারচার্জ থেকে আদায়কৃত অর্থ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করে।
বাংলাদেশ সরকার ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক  কনভার্সন অন টোবাকো কন্ট্রোল(এফসিটি)র‌্যাটিফাই করে। আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তির আর্টিকেল ৬ এবং আর্টিকেল ২৬ এ তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি এবং আদায়কৃত করের অর্থ তামাক নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ নির্দেশিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে ধূমপানমুক্ত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে সে ঘোষণাও দিয়েছেন একাধিকবার। ফলে তামাক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন কোম্পানিগুলোর ওপর ইতোমধ্যে কিছু কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার। এর মধ্যে সিগারেট বা বিড়ির প্যাকেটে সতর্ক বার্তার পাশাপাশি ক্ষতিকর তথ্যচিত্র সংযোজন। সারচার্জের এই তহবিলের অর্থ ব্যয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট নয়টি মন্ত্রণালয়কে একত্রে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে অর্থবিভাগ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ