রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

ববি-মাওলার নেতৃত্বে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল

কামাল উদ্দিন সুমন : ২০১৪ সালে পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের সহযাত্রী ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাপাতে আবারো ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। দেশ বিদেশে বিরোধী দলে হিসেবে মূল্যায়ন না পাওয়া এরশাদের জাতীয় পার্টিতে এখন চরম হতাশা কাজ করছে। বিশেষ করে চীনের প্রেসিডিন্ট জাপারা সাথে সাক্ষাৎ না করা খোদ দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে জাপা আসলে বিরোধী দল কিনা? এছাড়া বিভিন্ন কারণে দলের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারিয়ে নতুন দল গঠন কাজ শুরু করেছে একসময়  জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ এবং জাপা ছেড়ে আসা প্রবীণ রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের মুহম্মদ গোলাম মাওলা চৌধুরী। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতার চেতনা, ইসলামী মূল্যবোধ ও জনগণের গণতন্ত্রকে মূল প্রতিপাদ্য রেখে তৈরী করা হচ্ছে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় থাকা নতুন এই দলটির ঘোষণাপত্র এবং গঠনতন্ত্র। তবে মূল নেতৃত্বে থাকছেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী প্রিন্স মুসা বিন শমসেরের বড় ছেলে তরুণ রাজনীতিক ববি হাজ্জাজ।
নতুন দল গঠনের কথা জানিয়ে ববি হাজ্জাজ  বলেন, জনগণের কল্যাণে নবীণ-প্রবীণের সমন্বয়ে সুস্থধারার রাজনীতি করতে চাই। ব্যক্তিগত জীবনে আমি বিশ্বাস করি, মানুষের জন্য কিছু করতে চাইলে,তা যে কোন পন্থায় করা সম্ভব। তবে, রাজনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে হলে,তার সুফল গণতান্ত্রিক পন্থায় জনগণের একেবারে দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া সহজ।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে আমরা কোন দল ভাঙ্গার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। রাজনীতিতে যখন জড়িয়েছি, তখন তো জনগণের কাছে একটা প্রতিশ্রুতি তৈরী হয়েছে, যা রক্ষা করা নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। রাজনীতির নামে মানুষের সঙ্গে আর কত প্রতারণা চলবে? কাউ না কাউকে তো ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও অসুস্থ রাজনৈতিক চর্চ্চা থেকে জনগণকে বের করে আনতে হবে। সুস্থধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসীদের সঙ্গে নিয়ে দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের সঠিক স্বাদ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী  বলেন, সুস্থধারার রাজনীতিই পারে, জাতীয় রাজনীতির চলমান সংকট সমাধান করতে। ৪০/৪৫ বছরেও আমরা সেই পথে সঠিক পন্থায় হাঁটতে পারিনি। নতুন প্রজন্মের জন্য তৈরী করা যায়নি,রাজনীতির সুস্থ কোন ধারা। দেয়া সম্ভব হয়নি সংকট সমাধানে কোন ধরনের সঠিক দিক-নির্দেশনা। শুধুই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। এখান থেকে জনগণকে বের করে আনতে আমরা মুক্ত ও সুস্থচিন্তার রাজনীতিকদের এক মঞ্চে সমবেত করার চেষ্টা করছি।  
 বিরোধী দলের সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও কেন জাপা ছাড়লেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মাওলা চৌধুরীর বলেন, ৮ম কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে জাতীয় পার্টি কিছুটা হলেও জনগণের কাতারে এসে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবে এবং দলে সঠিক গণতন্ত্র চর্চ্চা ফিরে আসবে, নেতাকর্মীদের এমন আশা অল্পদিনেই গুড়িয়ে যায়। ফের সুবিধাবাদী একটি চক্র আরো শক্ত অবস্থান নেয় এরশাদের আশপাশে। কাউন্সিলের পর তাদের ইশারা-ইঙ্গিতে চলে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া। কমিটি গঠনে দেখা দেয় অনিয়ম ও জেষ্ঠ্যতা লংঘনের ঘটনা।
 তিনি বলেন, অভিযোগ আছে, বড় অংকের লেনদেনের বিনিময় নাম না জানা, সাংগঠনিক ভিত্তিহীন, অখ্যাত কিছু ব্যক্তিকে স্থান করে দেয়া হয় কেন্দ্রীয় কমিটিতে। জেষ্ঠ্যতা লংঘনে করে বহু প্রবীণ ও দক্ষ নেতাকে ডিঙ্গিয়ে তাদের দেয় পদ-পদবী। আর এতে করে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয় দলের শীর্ষ ও মধ্যম সারির নেতাদের মাঝে।
তিনি বলেন, বার বার এরশাদ পার্টিকে বিরোধী দলের সঠিক ভূমিকায় আসতে নির্দেশনা দিলেও নীতি-নির্ধারকদের কেউই কর্ণপাত করেননি সে বিষয়। ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য হয়ে জাপার মন্ত্রীরা, অপজিশনে বসে বিরোধী সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দিতে এতটুকু লজ্জা বোধ করেন না, যা দেখে অজপাড়া গাঁয়ের চায়ের কাপে চুমুকে আলোচকরাও মুখ লুকিয়ে হাসেন। গোলাম মাওলা চৌধুরী  বলেন, অনেকে জানতে চান, জাপা বিরোধী দল নাকি সরকারি দল, না বেসরকারি দল, কোনটি?
বিভিন্ন কারণে অনেকে জাপা ছেড়েছেন বিভিন্ন সময়। সবশেষ গেলো ৭ই অক্টোবর পদত্যাগ করেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ, টানা ১৬ বছর জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকা এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী। এদিকে জাপা থেকে পদত্যাগ করায়  এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরীকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা শুভাকাঙ্কিরা অভিনন্দন জানান
পদত্যাগের পর থেকে গেলো দু সপ্তাহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দল গঠনের যৌক্তিকতা, উদ্দেশ্য, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান, জনগণের জন্য কি দিক-নির্দেশনা থাকা উচিত, আগাম বা আগামী নির্বাচনে দলের ভূমিকা কি হবে, জোটগত নির্বাচন হলে কি করতে হবে, সেসব বিষয় আলাপ-আলোচনা করেছেন ববি হাজ্জাজ ও মাওলা চৌধুরী। গত  ১৯ই অক্টোবর বিকেলে পল্টনে এক ব্যবসায়ীক রাজনীতিবিদের অফিসে সবশেষ এমন একটি মিটিংয়ে অংশ নেন নতুন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব এ টি এম মাওলা চৌধুরীসহ আরো অনেকে। টানা দু ঘন্টার এই বৈঠকে আলোচিত হয় দলের সম্ভাব্য নাম, গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র ও দলের প্রতীক নিয়ে। এছাড়া দলে কারা কারা আসবেন সে বিষয়ও কথা হয় উপস্থিত নানামতের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। আলোচনায় আসে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কোথায় হবে, কিভাবে গঠন করা হবে জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দলীয় কমিটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই নেতার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, কমপক্ষে ৬০ থেকে ৬৫ টি আসনের র্টাগেট নিয়ে মাঠে নামছেন ববি-মাওলা। প্রস্ততি ও খানিকটা তেমন। সব বুঝে-শুনে, কিছুটা সময় নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর দল আত্মপ্রকাশের চিন্ত-ভাবনা তাঁদের। দলের সম্ভাব্য মহাসচিব খুব শিগগিরই জেলায় জেলায় সফর করবেন অনুসারীদের নিয়ে। মতামত নেবেন ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক-কলামিষ্ট, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও সাধারণ মানুষের। পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় সম্ভাব্য কমিটিও ঠিক করবেন ঐ সফর থেকে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ