রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

মার্কিন এয়ারপোর্টে ৬০ হাজার মুসলিম অভিবাসীর ভিসা বাতিল

 

মার্কিন প্রেসিডেস্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও মুসলিমদের বিরুদ্ধে। নির্বাচনে জয়লাভের পর গত ২৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে ইরাক, ইরান, সুদান, সোমালিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেন এই ৭ দেশের মুসলিমদের ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দিয়েছিল মার্কিন ফেডারেল জজ। এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ব্যাপক সমালোচিতও হন ট্রাম্প। এরপরও মুসলিমদের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ট্রাম্প। দ্য গার্ডিয়ান/গালফ নিউজ/ফোর্বস বিবিসি

স্থানীয় সময় সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্প অভিবাসন নিয়ে তার নতুন নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। তবে এই আদেশে মার্কিন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে ইরাকের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের এই মুসলিম বিরোধী নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা।

তারা জানান, ট্রাম্প নামে মাত্র তার নিষেধাজ্ঞা পরিবর্তন করেছেন। আসলে তিনি তার আগের নিষেধাজ্ঞাকেই বহাল রেখেছেন। আমেরিকার সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন’স ইমিগ্রেন্ট রাইটস প্রোজেক্টের পরিচালক ওমর জাদওয়াতও গণমাধ্যমে একই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি জানান, ট্রাম্প তার আগের নির্বাহী আদেশকে নতুন বলে বহাল রেখেছেন। এটি মুসলিমদের প্রতি খুবই অনৈতিক আচরণ বলে ট্রাম্পের সমালোচনা করেন তিনি।

ইরাক বাদে ইরান, সুদান, সোমালিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেন এই ৬ মুসলিম দেশের অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে নতুন নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউস জানায়, ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞায় ইরাক বাদে বাকি ৬ দেশের মুসলিমদের উপর নতুন আদেশ করা হয়েছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা গণমাধ্যমে জানান, মার্কিন রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ট্রাম্প তার এই নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ট্রাম্পের জারি করা এ নিষেধাজ্ঞার পর মার্কিন এয়ারপোর্টে প্রায় ৬০ হাজার মুসলিম অভিবাসীদের ভিসা বাতিল করে দিয়েছে ওয়াশিয়টন এয়ারপোর্ট।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, ইরাক সস্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি দমনে অবদান রাখায় এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় পেয়েছে। তবে বাকি ৬ দেশ এ বিষয়ে কোনো অবদান রাখেনি। তাই মার্কিন নিরাপত্তা বিবেচনায় এই নতুন আদেশ জারি করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের এই নতুন নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেনি মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা । এই আদেশ জারি করার পর তারা ট্রাম্পের সমালোচনা করেন ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার নতুন করে ছয় মুসলিম-প্রধান দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর, তার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন মানবাধিকার ও ডেমোক্র্যাট নেতারা।

 হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপরই আমেরিকান সিভিল লিবারটিজ ইউনিয়ন জানিয়েছে, তারা এই আদেশের বিরুদ্ধে সাংবিধানিকভাবে লড়াই চালিয়ে যাবে। সংগঠনটির পরিচালক ওমর জাদওয়াত একে ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’ উল্লেখ করে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন আগের নিষেধাজ্ঞা থেকে অনেক সরে আসলেও এখনও এটা মুসলিম নিষেধাজ্ঞা। আর তা মার্কিন আইন ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

মার্কিন অভিবাসন আইনজীবীরাও জানিয়েছেন, ‘এখনও এই নিষেধাজ্ঞা আগেরটির মতোই ঘাতক।’ স্যাম অ্যাডাইর জানান, ‘এবারের নিষেধাজ্ঞায় কিছু বিষয় স্পষ্ট হলেও এখনও তা সংবিধানের পরিপন্থি।’

আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটি (এডিসি) নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য তহবিল সংগ্রহের আহ্বান জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানিয়েছে, ‘ইসলামোফোবিয়া ও বর্ণবাদের জন্যই এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এবারের নিষেধাজ্ঞার প্রভাবও আমাদের সম্প্রদায়ের ওপর আগেরটির মতোই পড়বে। আর আমরা আক্রান্তদের আইনি সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রাখব।’

মার্কিন টেক-জায়ান্টরাও এই নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে। উবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমাদের মনোভাব পরিবর্তিত হয়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা অনৈতিক ও ভুল। এর ফলে উবারের যারাই আক্রান্ত হবেন, তাদের জন্য আমরা লড়ে যাবো।’

এদিকে, মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা চাক শুমারও ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা থেকে ক্ষুদ্র একটি অংশ সরিয়ে নিলেও তা নিষেধাজ্ঞাই থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমন ভয়াবহ নির্বাহী আদেশের ফলে আমরা আরও অনিরাপদ হয়েছি। আর এমন নিষেধাজ্ঞা অ-মার্কিনি। এটি অবশ্যই বাতিল করতে হবে।’

নিষেধাজ্ঞাটিকে ‘বিদ্বেষপূর্ণ, অনৈতিক ও অসাংবিধানিক’ উল্লেখ করে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির প্রধান টম পেরেজ বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে লড়াই করাটা পার্টির সদস্যদের দায়িত্ব।’

উল্লেখ্য, সোমবার হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুসারে নতুন ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’র ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেলি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও আইনমন্ত্রী জেফ সেশনস।

নতুন জারি করা নিষেধাজ্ঞায় আগের তালিকায় থাকা ইরাককে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে অপর ছয়টি দেশের নাগরিকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে। 

ট্রাম্পের জারি করা নতুন এ নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের যেসব নাগরিকদের বৈধ ভিসা নেই তারা আগামী ৯০দিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। ১৬ মার্চ থেকে নিষেধাজ্ঞাটি কার্যকর হবে।

প্রসঙ্গত, ক্ষমতা গ্রহণের পরই ২৭ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশে সাত মুসলিম-প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে সিয়াটলের একজন বিচারক ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের আদেশ দেন। ট্রাম্প প্রশাসন ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলেও সান-ফ্রান্সিসকোভিত্তিক তিন বিচারকের প্যানেল তা খারিজ করেন।

সূত্র: বিবিসি, ফোর্বস।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ