রবিবার ০৫ মে ২০২৪
Online Edition

জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত দেশে আইনের শাসন ফিরে আসবে না

অনির্বাচিত সরকার রোহিঙ্গাসহ কোন সমস্যাই সমাধান করতে পারছে না--- ড. মোশাররফ

স্টাফ রিপোর্টার : জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সমস্যাগুলো সমাধান হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, দেশে শান্তির জন্য চাই আইনের শাসন, টেকসই গণতন্ত্র, স্থিতিশীল রাজনীতি। এজন্য চাই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আসবে জনগণের সরকার। বর্তমান সরকার অনির্বাচিত হওয়ায় রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারছে না।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিচার বিভাগ- সরকার বাহাস : বাংলাদেশে আইনের শাসনের ভবিষ্যৎ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজ’ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটির সভাপতি ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। 

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী দলীয় রাজনীতি করছেন মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি বর্তমানে সবচাইতে জনপ্রিয় দল, সবচাইতে বৃহৎ দল। বিদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ দলকে সন্ত্রাসী বলা, জঙ্গি বলা- এটার নিন্দা করার ভাষা আমাদের নেই। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবস্থান করছেন। শুক্রবার সেখানে সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির বিরুদ্ধে হত্যা, দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, বিএনপিকে কেন টেনে আনেন বলেনতো? কেন তাদের সঙ্গে বসতে হবে, কেন তাদের রক্ষা করতে হবে ?  

 রোহিঙ্গা ইস্যুতে অন্যান্য বিরোধী দলসহ বিএনপি সরকারের সঙ্গে আসবে কি না এক সাংবাদিক জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীরা কী বললো না বললো সেটা নিয়ে তো রাজনীতি করি না।

রোহিঙ্গার মতো ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করাকে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাখ্যান করে দলীয় রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশের জনগণ তাদের এই ধরনের পদক্ষেপ সমর্থন করবে না।

সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল একটি গণতান্ত্রিক মধ্যপন্থি দল, নির্বাচনমুখী দল। এই দল পাঁচবার দেশ পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছে জনগণের নির্বাচনের মাধ্যমে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নির্বাচিত হয়েছে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে, প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তার নির্বাচিত হয়েছেন এদেশে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিন বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন এদেশের মানুষের ভোটের মাধ্যমে। 

এই ধরনের কথা-বার্তা বলে দেশকে আজ বিভক্ত করে তারা যেমন ২০১৪ সালে গায়ের জোরে ক্ষমতায় গিয়েছিলো ভবিষ্যতেও আবার সেই ধরনের গায়ের জোরে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আজকে সরকার কূটনৈতিকভাবে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তারা আগে দাবি করতো যখন চীনের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে এসেছিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন বাংলাদেশ-চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আকাশচুম্বি। ভারতে যখন প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন ফিরে এসে বললেন, বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক হিমালয়ের পরিমাণ উচ্চতায়। কিন্তু আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, রোহিঙ্গা সমস্যা যখন হলো আমরা যখন সংকটে, এই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে তখন দেখছি আমাদের পাশে না থেকে চীনও মিয়ানমারের পাশে, ভারতও মিয়ানমার পাশে। ভারত মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে এবং তাদের দেশে কোনো শরণার্থী ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট  হয়তো রোহিঙ্গা বিষয়ে এমন কোনো কথা বলেছেন যে কারণে শেখ হাসিনা বললেন রোহিঙ্গা বিষয়ে আমেরিকার কাছে কিছু আশা করেন না। তাই আমরা মনে করি এই সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য জরুরি।

তিনি বলেন, মিয়ানমারে যখন গণহত্যা শুরু হলো তখনই তা বন্ধ করার উদ্যোগ সরকার যদি কূটনৈতিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতো তাহলে আজকে বাংলাদেশে এতো পরিমাণ শরনার্থী রোহিঙ্গা পালিয়ে আসতে বাধ্য হতো না। এই জায়গা সরকারের পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থ হয়েছে।

রোহিঙ্গা শরনার্থী আমাদের দেশের জন্য একটি সমস্যা। এদেশের মানুষ সকলে চায় যে, সাময়িকভাবে তাদের আশ্রয়-থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন এবং তারপরও তাদেরকে স্থায়ীভাবে মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সকল প্রকার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা আমাদের সরকারকেই করতে হবে। আজকে যখন দেখতে পারছি সরকার কূটনৈতিকভাবে একা তখন আমরা উদ্বিগ্ন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সিনিয়র সদস্য বলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আমাদের দেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের স্থায়ীভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে হবে। যেটা ১৯৭৮ সনে জিয়াউর রহমানের সময় হয়েছে। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সময় হয়েছে।

 রোহিঙ্গায় মিয়ানমারের গণহত্যার বিষয়ে ভারতের ভূমিকার সমালোচনা করে গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভারত জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মিয়ানমারের কাছে তারা অস্ত্র বিক্রি করছে এবং তারা নির্দেশ দিয়েছে কোনো রকম রোহিঙ্গা শরনার্থী ভারতে ঢুকতে পারবে না। তাদের বিএসএফকে বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

এই ইস্যুতে আমাদের সরকার সম্পূর্ণভাবে কূটনৈতিক তৎপরতায় ব্যর্থতা হয়েছে। আমি বলব, এখন সময় এসেছে সরকারের সব বিভেদ ভুলে গিয়ে বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে বেইজিং (চীন) যাওয়া, মস্কো (রাশিয়া) যাওয়া, দিল্লী (ভারত) যাওয়া, একলা নয়। তাদেরকে দেখানো সমগ্র জাতিসত্বা আমরা একত্রিত। দেশের অর্ধেক লোককে বাদ দিয়ে এটা সম্ভব হবে না।

 ষোড়শ সংশোধনীর রায় দিয়ে বিচারপতিরা পাপমোচন করেছেন মন্তব্য করে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, বিনাবিচারে আজ হাজার হাজার মানুষ মাসের পর মাস কারাগারে আছেন। তাদের ব্যাপারে বিচারকরা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। তাদের এজন্য দিনকানা বলতে হয়। তিনি রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতাকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সংবিধানে লেখা রয়েছে যারাই স্বাধীনতা চাইবে বাংলাদেশ তাদের সমর্থন করবে। 

ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, দেশে যে আইনের শাসন নাই তা হাড়ে হাড়ে নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে টের পাচ্ছি। তিনি বলেন, ত্রুটিপূর্ণ আইন যদি ত্রুটিপূর্ণ ব্যক্তির মাধ্যমে প্রয়োগ হয় তাহলে দেশে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এসময় তিনি তার দলের মহাসচিব আমিনুর রহমানের মুক্তি দাবি করেন। 

সুপ্রিমকোর্টে আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, দুর্বলতা আছে বলেই ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সরকার এতটা ক্ষেপে যাচ্ছে। তিনি বিচার বিভাগের সমালোচনাকারীদের শাস্তি দাবি  করেন এবং নিন্ম আদালত সরকারের প্রভাবমুক্ত রাখার দাবি করেন। 

ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বাংলাদেশকে মিয়ানমারের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে বলেন, সুপ্রীম কোর্টের সমালোচনাকারীদের বিচার হওয়া দরকার। 

 গোলটেবিল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক হাসান তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ