সোমবার ১৩ মে ২০২৪
Online Edition

সংঘবদ্ধ ধর্ষণকে রোহিঙ্গা তাড়ানোর অস্ত্র বানিয়েছে মিয়ানমার

সংগ্রাম ডেস্ক : জাতিসংঘের এক অনুসন্ধানী দল জানিয়েছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নারীরা ধারাবাহিকভাবে সে দেশের সেনাবাহিনীর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ঘটনা তদন্তে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে গিয়ে সেইসব ভয়াবহ যৌন নিপীড়নেরা ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছে সহিংসতা ও যৌন নিপীড়ন ঘটনা তদন্তে গঠিত জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দল। অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজ আর ভারতের এনডিটিভিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের ধারাবাহিকভাবে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা তুলে এনেছে। এদিকে জাতিসংঘের দুই কর্মকর্তা বলেছেন রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে তাড়ানোর অস্ত্র হিসেবে সংঘবদ্ধ ধর্ষণকে ব্যবহার করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

মিয়ানমারের সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাম্প্রতিক মানবাধিকার হরণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা তদন্তে ওই অনুসন্ধানী দল গঠন করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনরে উদ্যোগে ওই দল তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের চলমান তদন্তকে ভিত্তি করে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আয়েশা (ছদ্ম নাম) নামের এক নারীর বিপন্নতার কথা।

আরও অনেকের সঙ্গে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন আয়েশা। ২০ বছর বয়সী এই নারী এসেই লেডা শরণার্থী শিবিরের চিকিৎসাকেন্দ্রের শরণাপন্ন হন। তার গ্রামে যখন সেনাবাহিনী প্রবেশ করে গ্রামবাসী পালাতে শুরু করে। আয়শা এএফপিকে বলেন, সেনারা এসেই বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিতে থাকে। সবাই পালাচ্ছিল। কিন্তু আমাকে তো আমার সন্তানের কথা ভাবতে হবে।

আয়শা এএফপিকে জানান, সেনা পোশাক পড়ে ৫ জন এসেছিল তার বাড়িতে। এদের একজন তাকে ধর্ষণ করে আর বাকীরা তা চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকে। যুদ্ধ-সংঘর্ষে যৌন সহিংসতার ব্যবহার সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেন এই সপ্তাহে বলেছেন, রাখাইনের নিরাপত্তা অভিযান নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, যৌন নিপীড়নকে ‘সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ( রোহিঙ্গা) জীবিতদের তাড়িয়ে দেওয়ার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন’।

সামিলার (ছদ্ম নাম) পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। ‘আমি জানি না, কোথায় আমার স্বামী-সন্তান। আমি মানুষজনের কাছে বারবার জানতে চাইছি। কোনও খবর পাচ্ছি না। দুঃখ ভারক্রান্ত মনে তিনি বলেন সামিলা। এরপর তিনি ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়ে ফিরে যান বাঁশ দিয়ে বানানো আশ্রয়স্থলে। এটাই এখন তাদের বসতবাড়ি। এএফপিকে সামিলা বলেন, যখন তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে আসছিলেন ৩দিনের পথ হেঁটে, তখনও তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছিলো। কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সংঘবদ্ধ হয়ে তিন সেনা আমাকে ধর্ষণ করে। তারা চলে যাওয়ার পর আমি দুই সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। জীবনের তাগিদে বাংলাদেশের সীমান্তের দিকে ধেয়ে আসতে থাকা মানুষের কাতারে সামিল হোই।’ 

এবিসি রেডিও’র সাংবাদিক লিয়াম কোচরেন। রাখাইনে প্রবেশের সুযোগ হয়েছিল তার। মিয়ানমার কতৃপক্ষের তত্ত¦াবধানে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। তা স্বত্তে¦ও সুকৌশলে তিনি বের করে এনেছেন সেখানকার ভয়াবহতা। রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে এবিসি- তে তিনি প্রতিবেদন করেছেন ‘রাখাইনের ভয়ঙ্কর সব ধর্ষণের গল্প বলছেন নারীরা’ শিরোনামে। 

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ঘুরে রোহিঙ্গা নারীদের বিপন্নতা তুলে এনেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একজন সম্পন্ন মানুষ ছিলেন মোহাম্মদ কাশিম। বাড়ি ছিল, গাড়ি ছিল, ছিল একটা সুখী পরিবার। তবে হঠাৎই একদিন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তার বাড়িতে ঢুকে তছনছ করে দেয় সব। কাশিমের চোখের সামনে তার মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে সেনারা। সে সময় বাধা দিতে গেলে বন্দুক আর ছুরির মুখে আটকে রাখা হয় তাদের। কাশিম এনসডিটিভিকে বলেন, ধর্ষণের পর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার ছিল না’

এএফপির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নারীদের স্বামী কিংবা অন্যান্য আত্মীয়স্বজন যখন বাড়িতে থাকেন না তখনই ঢুকে পড়ে মিয়ানমারের সেনারা। সন্তানদের সামনে ধর্ষণ করে তাদের মাকে। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার লেডা শরণার্থী শিবিরের এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত আছেন নওরিন তাশনুপা। তিনি বলেছেন, প্রায় সব নারীকেই ধর্ষণ করা হয় পেটানোর পর। নওরিন জানান, ধর্ষিতা নারীদের থেঁতলে যাওয়া শরীর আর বুক কিংবা যৌনাঙ্গে কামড়ের চিহ্ন দেখেছেন তিনি। নওরিন এএফপিকে বলেন, মানুষ এইসব ঘটনা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা করত চান না। গত অক্টোবর থেকে এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। তবে আমাদের কাছে একটা অভিযোগ আসতে ৩/৪ মাসও লেগে গেছে।’

জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থার যৌন সহিংসতা থেকে সুরক্ষা সংক্রান্ত কর্মকর্তা ইরিন লরিয়া। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য এই মুহূর্তে এটি টিকে থাকার লড়াই। তার মতে ধর্ষণকে অস্ত্র বানানো হয় নানাভাবে। ইরিন জানান ‘একসময় ধর্ষণকে ব্যবহার করা হতো নিপীড়নের একটি উপায় হিসেবে। প্রকাশ্যে নগ্ন করে হাঁটিয়ে নিয়ে বেড়ানো হতো রোহিঙ্গা নারীদের, তাদের ওপর যৌন সহিংসতা চালানো হতো।’ তবে ইরিনের ভাষ্য অনুযায়ী সবশেষ ধাপে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের যে আলামত পেয়েছেন, সেখানে ধর্ষণকে ব্যবহার করা হচ্ছে নারীদের বিরুদ্ধে ভীতি ছড়াতে। সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনাগুলো বিচার করে তার মনে হয়েছে, যতো দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেওয়াই এগুলোর উদ্দেশ্য।

জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দলের বরাত দিয়ে এএফপি আরো জানায়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। যুদ্ধে যৌনসহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেন জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সহিংসতা এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

এর আগে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রসের প্রতিনিধি কোরিন আম্লার বলেছেন, শুধুমাত্র প্রাণভয়ে যে সব রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের অবস্থা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। রোহিঙ্গাদের অবর্ণনীয় অবস্থার বর্ণনা করতে গিয়ে ইউনিসেফের মুখপাত্র ম্যারিক্সি মারকাডো বলেন, শরণার্থীদের কষ্ট দিনকে দিন বাড়ছে। তারা অমানবিক অবস্থায় অস্থায়ী ক্যাম্পে দিন পার করছেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতো প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার করে রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন।

মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে জাতিসংঘ ইতোমধ্যে ‘জাতিগত নির্মূলের পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত আখ্যা দিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অক্টোবরে শুরু হওয়া সেই যৌন নিপীড়নকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কাঠামোগত সহিংসতা আখ্যা দিয়েছেন।

‘সন্তানদের সামনেই মাকে ধর্ষণ

আরটিএনএন : ৩০ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারী শামিলা তার কন্যাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বর্ণনা করছিলেন কিভাবে মাযানমারের বর্বর সৈন্যরা তার বাড়িতে ঢুকে সন্তানদের সামনে তাকে গণধর্ষণ করে। এই কাহিনী বর্ণনা করার সময় মুহূর্তেই তার চেহারায় আতঙ্কের চাপ ভর করে। এমন মর্মান্তিক কাহিনী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে হরমেশাই শোনা যাচ্ছে। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছে, তারা মাযানমারের সাম্প্রতিক জাতিগত সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা অনেক নারীকে দেখেছেন যারা ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষিত এসব নারীদের প্রায় সবাই জানিয়েছে যে, তাদের ধর্ষকরা ছিল ইউনিফর্ম পরিহিত পুরুষ; যাদেরকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের রক্ষণশীল মুসলিম সমাজে এসব সামাজিক কলঙ্কের দাগ এবং আশ্রয় ও খাবারের চ্যালেঞ্জের অর্থ হচ্ছে অনেক নারী ও কিশোরী তাদের ধর্ষণের কাহিনী চেপে রেখেছেন। শামিলা, তার আসল নাম নয়। ধর্ষণের শিকার হওয়া এই নারী জানান, টানা তিন দিন হেঁটে বাংলাদেশে আসার পর অনেক দিন হয়ে গেলেও এখনো তার রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। ছয় বছর বয়সী মেয়েকে শক্ত করে ধরে পাশে বসে থাকা এই নারী বলেন, ‘তিনজন সৈন্যের সবাই আমাকে ধর্ষণ করেছে।’ এ কথা বলার সময় তার চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের পর তারা যখন চলে যায়, তখন আমি আমার দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি এবং জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের দিকে হাঁটতে শুরু করি।’সৈন্যদের হামলার সময় শামিলার স্বামী বাইরে ছিল এবং এখনো পর্যন্ত তিনি তার স্বামীকে খুঁজে পাননি। তিনি জানেন না তার অন্য তিন সন্তান কোথায় আছে। সৈন্যরা যখন আসে তখন ওই তিন সন্তান বাইরে খেলা করছিল। ৩০ বছর বয়সী এই রোহিঙ্গা নারী এখন কক্সবাজারের একটি অস্থায়ী শিবিরে বসবাস করছেন।

জাতিসংঘের একজন পর্যবেক্ষক জানান, তারা এখন কঠিন সময় পার করছেন এবং ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তারা বার বার রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরী মেয়েদের ধর্ষণের কাহিনী শুনছেন। যৌন সহিংসতাসহ মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য জাতিসংঘের একটি মিশন উদ্বাস্তু ক্যাম্পে কাজ করছে। যৌন সহিংসতা তদন্তে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেন জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান নিয়ে তিনি অত্যন্ত উদ্বেগের মধ্য রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যৌন সহিংসতাকে ‘সন্ত্রাসের অস্ত্র’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে; যাতে টার্গেটকৃত জনসংখ্যা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।’ রোহিঙ্গারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসলেও মিয়ানমার সরকারের সাম্প্রতিক রাষ্ট্রীয় বয়ান হচ্ছে- ‘এরা উগ্রবাদী বাঙালী সন্ত্রাসী এবং সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী।’

গত ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া তথাকথিত ‘শুদ্ধি অভিযানে’ সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা ঘরছাড়া। অন্তত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে। রাখাইন রাজ্যের অর্ধেক ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও অস্থায়ী ক্যাম্পে মানবেতর পরিস্থিতিতে জীবন যাপন করছে।‘নারীদের ধর্ষণের আগে নিষ্ঠুরভাবে পিটানো ও কামড়ানো’ধর্ষণের শিকার হওয়া এসব নারীদের গল্পগুলো অদ্ভূতভাবে একই রকম। এসব নারীদের স্বামী কিংবা পুরুষ আত্মীয় যখন বাড়ির বাইরে থাকে ঠিক তখন বর্মি সেনারা তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে তাদের সন্তানদের সামনেই ধর্ষণ করে। কক্সবাজারের লেদা শরণার্থী ক্যাম্পে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত একটি ক্লিনিকে কাজ করে নুরাইন তাসনুপা। তিনি জানান, তাদের ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া বেঁচে যাওয়া অধিকাংশ নারীকেই ধর্ষণের আগে নিষ্ঠুর কায়দায় পেটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, তিনি নারীদের দেহে আঘাতের চিহ্ন এবং তাদের স্তন ও গোপনাঙ্গে কামড়ের দাগ দেখেছেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে রাখাইনের সহিংসতার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তাসনুপা বিশ্বাস করেন যে অনেক নারী এখনো ধর্ষণের ঘটনা চেপে রেখেছেন। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘মানুষ এই ঘটনাগুলো শেয়ার করতে চায়না, এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে চেপে রাখে।’তিনি বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবরের সহিংসতা খেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা অনেক ধর্ষিত রোহিঙ্গা নারীকে আমরা ঘটনা ঘটনার তিন থেকে চার মাস পরেও চিকিৎসা দিয়েছি।’ গত অক্টোবরের ওই যৌন সহিংসতাকে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওযাচ ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত ও নিয়মানুগ আক্রমণের অংশ’ বলে মন্তব্য করে। বেঁচে থাকার লড়াই বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে সর্বশেষ আগমনকারীদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক ধর্ষিতাই বেঁচে আছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে, ঠিক কতজন নারী ধর্ষিত হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন বলে তারা মনে করছেন। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার নিরাপত্তা কর্মকর্তা আইরিন লরিও বলেন, ‘এই মুহূর্তে এটি হচ্ছে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই।’ লোরিয়া জানান, মায়ানমার সৈন্যদের এবারের ধর্ষণের প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন হতে দেখা যায় এবং তা আরো সুযোগবাদী হতে পারে। তিনি বলেন, ‘পূর্বে মনে হতো ধর্ষণ একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহƒত হচ্ছে। মানুষকে জনসম্মুখে উলঙ্গ করে রাখার মাধ্যমে তাদেরকে অপমানিত করা হতো।’জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কিন্তু এবার মনে হচ্ছে তাদেরকে যথা সম্ভব চাপ দেয়া হয়েছে যাতে তারা চলে আসতে বাধ্য হয়।’ রাখাইন থেকে বাংলাদেশে আসার এক সপ্তাহ পরে লেদা ক্লিনিকে আসা আরেক ধর্ষিত নারী আয়শা (২০) এএফপিকে জানান, উত্তর রাখাইনের বুথিডাঙ্গ শহরের তাদের গ্রামে যখন সৈন্যরা প্রবেশ করে তখন তার প্রতিবেশিরা পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের গ্রামে সকাল আটটা সময় এসেছিল। পরে তারা আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।’ ছদ্মনামে তিনি এএফপিকে বলেন, ‘লোকজন পালাতে শুরু করে কিন্তু আমাকে প্রথমে আমার সন্তানের কথা চিন্তা করতে হয়েছে। সেনারা তার বাড়িতে প্রবেশ করে এবং একজন আমাকে ধর্ষণ করে। এসময় অন্যরা তা প্রত্যক্ষ করে।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ