রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

সুন্দরবনে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বনদস্যু গামা নিহত : অপহৃত ১১ জেলে উদ্ধার

খুলনা অফিস : সুন্দরবনে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বনদস্যু কাজল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড পলাশ ওরফে গামা মন্ডল (৩৫) নিহত হয়েছে। এ সময় কয়রা থানার ওসি এনামুল হক, কনস্টেবল হারিজ মোল্যা (১৪২৭), মো. মোক্তার হোসেন (কং/৭৮৭), লিটন মন্ডল (কং/১১৪৬), পলাশ গাইন (কং/১১৪৮) আহত হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সুন্দরবনের আড়পাঙ্গাসিয়া নদীর (বাটলু) ভায়রার খাল এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত বনদস্যু গামা মন্ডল ডুমুরিয়া উপজেলার কাকমারী গ্রামের যতিন মন্ডলের ছেলে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় তৈরি পাইপগান, পাঁচ রাউন্ড বন্দুকের গুলী, একটি টুটু বোর রাইফেল ও পাঁচটি বিভিন্ন সাইজের দা উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় কয়রা থানায় অপহরণ ও অস্ত্র আইনে দু’টি মামলা হয়েছে। মামলা দুটি তদন্তসহ পলাতক বনদস্যুদের গ্রেফতারের অব্যাহত রয়েছে।

কয়রা থানার ওসি মো. এনামুল হক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সুন্দরবনের আড় পাঙ্গাশিয়া নদীর ভায়ালার খালের মধ্যে বনদস্যু কাজল-মুন্না বাহিনী কর্তৃক মুক্তিপণের দাবিতে জিম্মি জেলেদের উদ্ধারের জন্য অভিযান চালানো হয়। 

কয়রা পুলিশ ভায়ালার খালের মুখে পৌঁছালে বনদস্যুরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গলের ভেতর পালানোর চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ তাদের পিছু ধাওয়া করে। বনদস্যুদের কাছা-কাছি পৌঁছালে বনদস্যুরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলী বর্ষণ করতে থাকে। তখন নিজেদের জানমাল, সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে পুলিশও বনদস্যুদের লক্ষ্য করে গুলী ছুড়লে বনদস্যুরা তাদের নিকট জিম্মিকৃত জেলেদের রেখে বনের ভেতর ভায়ালার খালের উত্তর পাশে হেতালি বাগানের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। তখন পুলিশ তাদের পিছু ধাওয়া করলে বনদস্যুরা পুনরায় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলী বর্ষণ করতে থাকে। পুলিশ পুনরায় পাল্টা গুলী বর্ষণ করে। এক পর্যায়ে বনদস্যুরা দু’টি নৌকা ফেলে পালিয়ে গেলে উক্ত নৌকা দু’টির কাছে গিয়ে বনদস্যু দলের একজনকে গুলীবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে। গুলীবিদ্ধ বনদস্যুকে জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম পলাশ মন্ডল ওরফে গামা মন্ডল (৪০)। সে বনদস্যু কাজল ওরফে মুন্না বাহিনীর সেকেন্ড ইন-কমান্ড। তার সাথে থাকা বনদস্যু কাজল ওরফে মুন্না, জয় ওরফে জনি, জয়দেব ওরফে দুলাভাই, সাজু, পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় তৈরি পাইপগান, পাঁচ রাউন্ড বন্দুকের গুলী একটি টুটু বোর রাইফেল, পাঁচটি বিভিন্ন সাইজের দা উদ্ধার করা হয়। 

ডাকাতদের কাছ থেকে জিম্মি জেলে মো. আলতাফ হোসেন (৩০), হাসান মোড়ল (২৭), মান্নান গাজী (৪২), মো. আসাদুল ইসলাম (৩৭), সাউদ আলী হাওলাদার (৫২), কেসমত গাজী (৪২), সাইফুল হাওলাদার (৩৫), মো. ইমরান হোসেন (১৮), মো. আকরাম হোসেন (২৬), মো. আজিজুল ইসলাম (২৫), মো. আল মামুন (২২), উদ্ধার করা হয়েছে। 

গুলীবিদ্ধ পলাশ মন্ডল ওরফে গামা মন্ডলকে তাৎক্ষনিকভাবে ট্রলার যোগে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, প্রেরণ করা হয়। এখানে কর্তব্যরত ডাক্তার বনদস্যু পলাশ মন্ডল ওরফে গামা মন্ডলকে মৃত ঘোষণা করেন। গোলাগুলীর সময় কয়রা থানাঅফিসার ইনচার্জ এনামুল হক, কনস্টবল হারিজ মোল্যা (১৪২৭), মো. মোক্তার হোসেন (কং/৭৮৭), লিটন মন্ডল (কং/১১৪৬), পলাশ গাইন (কং/১১৪৮) আহত হন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। বনদস্যুদের সাথে বন্দুকযুদ্ধের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে ৪৩ রাউন্ড গুলী বর্ষণ করা হয়। পক্ষান্তরে বনদস্যুরা ৪০/৪৫ রাউন্ড অগ্নেয়াস্ত্রের গুলী বর্ষণ করে।

বনদস্যুদের নিকট হইতে উদ্ধারকৃত জেলেদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বনদস্যুরা তাদেরকে ( ১৭ ও ২০ নবেম্বর) মাছ ধরার নৌকা হতে অপহরণ করে নিয়ে সুন্দরবনের ভেতর আটক করে হত্যার হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আটক রেখেছিল এবং কাহারও নিকট হতে মুক্তিপণ আদায় করেছে। বনদস্যুরা দীর্ঘদিন যাবৎ সুন্দরবন এলাকায় তাহার সহযোগীদের সঙ্গে নিয়া চাঁদাবাজী, অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, ডাকাতি, গুম ও হত্যাসহ বহু সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল বলে জানা যায়। এই সংক্রান্তে কয়রা থানায় অপহরণ ও অস্ত্র আইনে দু’টি মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলা দুটি তদন্তসহ পলাতক অন্যান্য বনদস্যু গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ