রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

রাজধানীর বাড়িমালিক-ভাড়াটিয়াদের ডেটাবেজে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৮৯৯ পরিবারের তথ্য সংরক্ষণ পুলিশের

তোফাজ্জল হোসেন কামাল : উন্নত বিশ্বের আদলে রাজধানীর বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটেদের যাবতীয় তথ্য নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেজ তৈরীর কাজে হাত দিয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে ভূমিকা রাখবে-এই প্রত্যাশা নিয়ে ২০১৫ সালে প্রথম দফায় এই ডেটাবেজ তৈরির কাজে হাত দিয়েছিল তারা। দফায় দফায় নানা কারণে ডিএমপির এই উদ্যেগ ভেস্তে যাওয়ার পরও হাল ছাড়েনি পুলিশ । ডেটাবেজ নিয়ে প্রথমে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেদের অনীহা ছিল। সেই অনীহাকে নানা উপায়ে দূর করে সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস) নামে এই ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরির কাজ এখন শেষের দিকে। পুলিশের দাবি , লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের অবস্থান জানতে এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা যাতে রাজধানীতে আস্তানা গড়ে তুলতে না পারে, সেজন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। ডেটাবেজ তৈরির কাজ সম্পূর্ণ শেষ না হলেও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এর সুফল ভোগ শুরু হয়েছে বলেও তাদের দাবি।
ডিএমপির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে , প্রথমে ২০১৩ সালের শুরুর দিকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনালগ পদ্বতিতে ঢাকা মহানগরীর ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের তথ্য সংগ্রহে নেমেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তখন সবার মাঝে তথ্য চেয়ে একটি নির্দিষ্ট ধরনের ফরমও বিতরণ করা হয়। মাঝপথে সেই কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৫ সালের শেষের দিকে আবারও এ প্রক্রিয়া শুরু করে ডিএমপি। ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানসহ বিভিন্নস্থানে হামলা ও জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর এই প্রক্রিয়ার গুরুত্ব  ও গতি বেড়ে যায়। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ডিএমপি এই ডেটাবেজ তৈরি শুরু করে। পরবর্তীতে চট্টগ্রামসহ দেশের শহরগুলোতেও বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে পুলিশ। একইসঙ্গে পুলিশ এই কার্যক্রমের সুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালায়। কমিউনিটি পুলিশিং ছাড়াও শুক্রবার জুমার খুতবার আগে  মসজিদগুলোতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিরা গিয়ে এ নিয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। মসজিদের ইমামদের মাধ্যমেও এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ানো হয়।
বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে কারা থাকছেন এবং তারা কী করেন, সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। একইসঙ্গে পুলিশের চাওয়া তথ্য না দিলে যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য বাড়িওয়ালাকে দায়ী থাকতে হবে বলেও সতর্ক করে দেয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপ কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রথম দিকে মানুষ এর সুফল সম্পর্কে বুঝতে না পারলেও পরে তারা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই বিষয়টি বুঝতে পারেন। এখন আর পুলিশকে তথ্য সংগ্রহে বেশি বেগ পেতে হচ্ছে না।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, ডেটাবেজ তৈরির কাজ শেষ হলে রাজধানীতে বসবাসকারী প্রত্যেক ভাড়াটিয়াকে একটি করে আইডি নম্বর দেওয়া হবে। ওই ভাড়াটিয়া বাসা বদল করে যেখানেই যাবেন, আইডি নম্বর দিয়ে তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। এই আইডি নম্বর ধরে তার সব তথ্যও পাওয়া যাবে। আর বাড়িওয়ালার কাজ হবে নতুন ভাড়াটিয়ার তথ্য না থাকলে তা পুলিশকে অবহিত করা।
জানতে চাইলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, ‘সাফল্যের সঙ্গে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে এগিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।  তারপরও আনাচে-কানাচে  কে কোথায় কিভাবে উগ্রবাদ ও জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে যাচ্ছে, তার সব তথ্য আমরা পাচ্ছি না। পাশের ফ্ল্যাটে কী হচ্ছে সেই খবরও আমরা রাখছি না। প্রত্যেকের উচিত পাশের ফ্ল্যাটে কী হচ্ছে, সেটা নজরদারি করা। তাহলে আমরা সবাই নিরাপদে থাকব।’ তিনি বলেন, ‘তার থানা এলাকার সব বাড়ির ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। চূড়ান্ত করার জন্য সংগৃহীত তথ্য এখন  যাচাই-বাছাই চলছে।’
একই কথা বললেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আবদুর রশিদ। তিনি বলেন,‘তার থানা এলাকার আটটি বিট পুলিশের কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সেগুলোর যাচাই-বাছাই চলছে। নতুন ভাড়াটিয়া এলে থানাকে দ্রুত অবহিত করার জন্য বাড়িওয়ালাদের বলে দেওয়া হয়েছে।’
ডিএমপি’র জনসংযোগ শাখার উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস) নামের এই ডিজিটাল ডেটাবেজের কাজ শেষ হলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ভবিষ্যতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ’ এরইমধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
সিআইএমএস ডেটাবেজ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে জানিয়ে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ সোমবার (২০ নবেম্বর) পর্যন্ত ১৯ লাখ ৬ হাজার ৮৯৯টি পরিবারের তথ্য ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রতিনিয়তই এটি আপডেট করা হবে। ডেটাবেজে প্রতিটি পরিবারের যেসব তথ্য থাকবে সেগুলো হচ্ছে- বাসার বিবরণ ও ঠিকানা, পরিবার প্রধানের নাম ও স্থায়ী ঠিকানা (টেলিফোন নম্বরসহ), জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, পরিবারের অন্য সদস্যদের নাম ও পরিবার প্রধানের সঙ্গে সম্পর্ক, বর্তমান আবাসনে আসার তারিখ এবং সদ্য ছেড়ে আসা আবাসনের ঠিকানা (আবাসন মালিকের ফোন নম্বরসহ), পরিবার প্রধানের পেশা ও বর্তমান কর্মক্ষেত্রের ঠিকানা (টেলিফোন নম্বর যদি থাকে), ভাড়াটিয়া পরিবার প্রধানকে শনাক্তকারী দুই ব্যক্তির নাম ও ঠিকানা (ফোন নম্বরসহ) ও ভাড়াটিয়া পরিবার প্রধানদের পূর্ণ স্বাক্ষর।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ