রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

আরাকানে নাডালা বাহিনীর গুপ্তহত্যা চলছেই আরো এক রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার

কামাল হোসেন আজাদ ও শাহনেওয়াজ জিল্লু : টানা দীর্ঘ আড়াই মাস মগসেনাদের অব্যাহত তান্ডবের পর এবার বিধ্বস্ত আরাকানে ব্যাপকভাবে গুপ্তহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের লেলিয়ে দেওয়া নাডালা বাহিনী। ভোক্তভোগী রোহিঙ্গারা জানিয়েছে ‘নাডালা বাহিনী’ নামের এই কিলার গ্রুপটি হত্যার জন্য সেসব রোহিঙ্গাদের টার্গেট করছে, যাদের বয়স ১০ থেকে ৪০ এর মধ্যে। দীর্ঘ সেনা নিপীড়নের পরও যারা জীবন বাজি রেখে এখনো আরাকানে রয়ে গেছে, মূলতঃ তাদের মধ্যে আতংক, ভয়-ভীতি সঞ্চার করতে এসব গুপ্তহত্যায় মেতেছে নাডালা বাহিনী নামের এ উগ্রপন্থী মগদলটি।
গত রোববার মংডুর কাইন্দা পাড়ার ছনবন্যায় ২ কিশোরের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধারের পর এবার একই এলাকায় আরো এক রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা।
সূত্র জানিয়েছে, বুধবার স্থানীয় সময় সকাল আটটায় কাইন্দাপাড়ার লোকালয়ের অদূরে একটি বিভৎস মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা। লাশের শরীরের পেছনের দিকে দু’টি এবং মুখে একটি দায়ের কোপ রয়েছে। উদ্ধারকারীরা ধারণা করছেন, রাতেই এ হত্যাকা- ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরোও জানিয়েছে, রোববার উদ্ধারকৃত ২ কিশোরের হত্যাকান্ডের সাথে এ ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় রোহিঙ্গা বিদ্বেষী মগেরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের এভাবে গুপ্তহত্যা চালিয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য করতে চাচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধারকৃত লাশটির নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে মার্কিন সিনেটরদের সাথে আরাকানের বৌদ্ধ ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের একটি বৈঠক হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে বার্মা সফরে যাওয়া মার্কিন সিনেটররা সেদেশের বৌদ্ধ ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন। এ সময় সেনাবাহিনীর সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া  প্রায় ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলিমদের ব্যাপারে তাদের মন্তব্য জানতে চান মার্কিন প্রতিনিধিরা। এ সময় আরাকান ন্যাশনাল পার্টি এএনপি’র নেতারা বার্মার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি বলে জানা গেছে। পরে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের সহাবস্থান সৃষ্টি করতে সকল সম্প্রদায়কে নমনীয় হওয়ার আহ্বান জানান সিনেটররা। পরে আরাকানের রাজধানী সিত্তুয়েতে নাগরিক সমাজের সাথে ঘন্টাব্যাপী বৈঠক করেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধিরা মংডু এলাকা পরিদর্শনের আগ্রহ প্রকাশ করলেও সেখানে যেতে অনুমতি দেয়া হয়নি তাদের। এর আগে রোবাবার ঢাকা থেকে নিজস্ব বিমানে আকিয়াবে অবতরণ করে মার্কিন প্রতিনিধি দলটি।
রাখাইনে জাতিগত নিধনের সমস্ত
আলামত রয়েছে -যুক্তরাষ্ট্র
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনীর পরিচালিত অভিযানে জাতিগত নিধনের সমস্ত আলামত রয়েছে উল্লেখ করে সতর্ক করে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস বলছে, বিশ্ব এই নৃশংসতা দেখছে এবং কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সেব্যাপারে ভাবছে। গত মঙ্গলবার ইয়াংগুনে রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওরিগন অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর জেফ মের্কলে। তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর নৃশংসতা এবং ভয়াবহ হামলার ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
‘ভয়াবহ এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ দীর্মেয়াদি পক্ষপাতমূলক আচরণ ও বৈষম্য; যা দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত।’
মার্কিন সরকারের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের কক্সবাজার, মিয়ানমারের নেইপিদো এবং রাখাইনের রাজধানী সিত্তে সফর শেষে ইয়াঙ্গুনে ওই সংবাদ সম্মেলন করে। সিনেটর জেফ মের্কলে বলেন, অং সান সু চি গত সেপ্টেম্বরে দেয়া এক ভাষণে বিদেশী কর্মকর্তাদের রোহিঙ্গা শিবির এবং গ্রামগুলো সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমরা তার এই পদক্ষেপের প্রশংসা করছি। আমরা তার সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এখানে এসেছিলাম।
কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন রাখাইনের কিছু গ্রাম ও শিবিরে মার্কিন এই প্রতিনিধি দলকে প্রবেশ করতে দেয়নি। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে মার্কিন এই সিনেটর বলেন, তিনি কষ্ট পেয়েছেন যে, রাখাইনের বেশ কিছু গ্রাম ও শিবিরে প্রতিনিধি দলকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি।
উত্তর রাখাইনে পুরোদমে মানবিক তৎপরতা শুরু করতে ও কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন এই কর্মকর্তা। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন, বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে ও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেয়ার পথ পরিষ্কার করতে নেইপিদোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া রাখাইনে নিরাপত্তাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন নিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাসযোগ্য তদন্তেরও আহ্বান জানান মের্কলে। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব দেখছে, মিয়ানমার সরকার কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।’
মের্কলে ছাড়াও মার্কিন এ প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন; ডেমোক্রেট দলীয় ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ডিক ডার্বিন, মিনেসোটার সিনেটর বেটি ম্যাক কোলাম, ইলিনয়ের অপর সিনেটর জ্যান চকোস্কি ও রোড আইল্যান্ডের ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর ডেভিড সিসিলিন। সূত্র : ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ