রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

ভারতের কাছে হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার : শ্রীলংকায় নিদাহাস ট্রফি ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুটা ভালো হলো না বাংলাদেশে। প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছে টাইগাররা। আজ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। আজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী শ্রীলংকা। স্বাগতিক শ্রীলংকা প্রথম ম্যাচেই ভারতকে হারিয়ে জয় দিয়ে শুরু করে। ফলে আজ দ্বিতীয় ম্যাচে আরো কঠিন প্রতিপক্ষের সামনে বাংলাদেশ দল। আজ শ্রীলংকার বিপক্ষে টাইগারদের ম্যাচটিও শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জয় দিয়েই শুরু করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু প্রথম ম্যাচে হার দিয়ে শুরু করতে হয়েছে টাইগারদের। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বড় স্কোর গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। দলের পক্ষে কোন ব্যাটসম্যানই ভালো স্কোর গড়তে পারেনি। আর অতিরিক্ত ডট বল দেয়ার কারণে স্কোরটা বড় করতে পারেনি টাইগাররা। দলের পক্ষে লিটন দাস সর্বোচ্চ ৩৪ আর সাব্বির করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০ রান। আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ ৮ উইকেটে করে ১৩৯ রান। জয়ের জন্য ভারতের সামনে টাগের্ট ছিল মাত্র ১৪০ রান। ব্যাট করতে নেমে ভারত ৪ উইকেটে ৮ বল বাকি থাকতে টার্গেট রান করে ম্যাচ জিতে ৬ উইকেটে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরুর আভাস দিয়েছিলেন ওপেনিং-এ তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকার। ১টি করে চার ও ছক্কায় শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের ১২তম বলেই ভারতের পেসার জয়দেব উনাদকতের শিকার হতে হয় ১৪ রান করা সৌম্যকে। দ্বিতীয় উইকেটে লিটন দাসের সাথে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন তামিম। কিন্তু সফল হতে পারেননি তামিম। জুটিতে ১৫ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি। তামিম নিজেও ১৫ রান করেন। তার ইনিংসে ২টি চার ছিলো। দলীয় ৩৫ রানে তামিমের বিদায়ের পর বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন লিটন ও সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। মারমুখী মেজাজেই ছিলেন তারা। তাই এই জুটির কাছ থেকে ২৩ বলে ৩১ রান পায় বাংলাদেশ। ১৪ বলে ১৮ রান করা মুশফিকুরের বিদায়ে ভাঙ্গে এই জুটি। তার ইনিংসে ২টি চার ও ১টি ছক্কার মার ছিলো। মিডল-অর্ডারে নিজের দায়িত্বটা পালন করতে পারেননি অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৮ বল মোকাবেলা করে মাত্র ১ রান করেন তিনি। তার বিদায়ে ক্রিজে লিটনের সঙ্গী হন সাব্বির রহমান। রান তোলার কাজটা ভালোভাবেই করছিলেন লিটন-সাব্বির। দু’জনের ব্যাটে চড়ে শতরানের কোটা পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের স্কোর তিন অংকে পৌঁছানোর পরই থেমে যেতে হয় লিটনকে। ৩টি চারে ৩০ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন তিনি। ২৭ বলে ৩৫ রান যোগ করেন লিটন-সাব্বির। লিটনের মত সাব্বিরও ছোট এবং কার্যকরী ইনিংস খেলেন। তবে তার কাছ থেকে আরও বড় ইনিংস আশা করেছিলো বাংলাদেশ। কারণ ইনিংসের শেষদিকে বাংলাদেশের শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান ছিলেন সাব্বিরই। কিন্তু ইনিংসের ৭ বল বাকি থাকতেই প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় সাব্বিরকে। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৬ বলে ৩০ রান করেন সাব্বির। শেষ পর্যন্ত তাসকিন আহমেদের অপরাজিত ৮, মেহেদি হাসান মিরাজের ৩ ও মুস্তাফিজুর রহমানের অপরাজিত ১ রানে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৯ রানের স্কোর পায় বাংলাদেশ। ভারতের পক্ষে উনাদকত ৩টি ও বিজয় শংকর ২টি উইকেট নেন। ১৪০ রানের লক্ষ্যে মারমুখী মেজাজেই শুরু করেন ভারতের ওপেনার ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনটি বাউন্ডারিতে দলের স্কোর ৩ ওভারে ২৭ রানে নিয়ে নেয় তিনি। তবে চতুর্থ ওভারেই থেমে যায় রোহিতের ইনিংস। বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের ডেলিভারিতে বোল্ড হন তিনি। ১৩ বলে ১৭ রান করেন রোহিত। তিন নম্বরে ব্যাট করার সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারেননি ঋসভ পান্থ। বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেনের শিকার হয়ে ৮ বলে ৭ রান করেন তিনি। দলীয় ৪০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর দলকে ভালো অবস্থায় নিয়ে যান আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও চার নম্বরে ব্যাট হাতে নামা সুরেশ রায়না। ৫৪ বলে ৬৮ রান যোগ করেন তারা। এতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় ভারত। রুবেলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে রায়না ২৭ বলে ২৮ রান করে ফিরলেও, টি-২০ ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ধাওয়ান। আগের ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৯০ রান করা ধাওয়ান এবার থামেন ৫৫ রানে। ৪৩ বল মোকাবেলা করে ৫টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন তিনি। শেষদিকে, মনিষ পান্ডিয়া অপরাজিত ২৭ ও দিনেশ কার্তিক অপরাজিত ২ রান করে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশের রুবেল ২টি উইকেট নেন।

তবে প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হারলেও আজ দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে জয়ের টার্গেট নিয়েই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। লংকারদের বিপক্ষে ভালো কারার সাহস যোগাচ্ছে পুরনো স্মৃতি। কারণ কলম্বোর এই প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে গত এপ্রিলে দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে শ্রীলংকাকে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ। শ্রীলংকার মাটিতে তাদেরই বিপক্ষে ২০১৭ সালের এপ্রিলে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলো বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-২০ ছিলো এ ভেন্যুতেই। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার শেষ টি-২০ ও ছিলো সেটি। ঐ ম্যাচে উজ্জীবিত বাংলাদেশ ৪৫ রানে হারিয়েছিলো শ্রীলংকাকে। জয়ের ব্যবধান যেমনই হোক না কেন, ঐ ম্যাচে দেখা গিয়েছিলো অন্য এক বাংলাদেশকে। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করে মাশরাফির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। ঐ স্মৃতি থেকে উজ্জীবিত হয়ে আজ মাঠে নামছে টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের সহজ জয়ের পেছনে মূল কারণ ছিল বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা। নিজেদের ইনিংসে ৫৫টি ডেলিভারিতে কোন রানই নিতে পারেনি তামিম-সৌম্য-মুশফিকুর-রিয়াদররা। আর এখানেই ম্যাচ হারের প্রধান কারণ বলে জানান বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। তবে একটি জয় বাংলাদেশ দলের চিত্র পাল্টে দিবে বলে জানান রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু একটি মাত্র জয়ের অপেক্ষায় আছি। একটি জয় পেলেই অন্য এক বাংলাদেশকে দেখা যাবে। প্রথম ম্যাচে মাঝের ওভারগুলোতে আমাদের ভালো ব্যাটিং করতে হবে। মাঝের ওভারগুলোতে বাউন্ডারি এমনকি সিঙ্গেলসও আদায় করতে পারছি না আমরা।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ : ১৩৯/৮, ২০ ওভার (লিটন দাস ৩৪, সাব্বির ৩০, উনাদকট ৩/৩৮)।

ভারত : ১৪০/৪, ১৮.৪ ওভার (ধাওয়ান ৫৫, রায়না ২৮, রুবেল ২/২৪)

ফল : ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ