রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

সংসদীয় সীমানা পুনঃনির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত আমলে নেয়নি ইসি

স্টাফ রিপোর্টার : রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শকে উপেক্ষা করে সংসদীয় সীমানা পুনর্গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চেয়েছিল সীমানা নির্ধারণ না করা। আর বিএনপির পরামর্শ ছিল পূর্বের সীমানায় ফিরে যাওয়া। আর অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু ইসি কোন রাজনৈতিক দলের পরামর্শই আমলে নেয়নি। নিজেদের মতো করে একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৬ জেলার ৩৬টি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করে পুনর্বিন্যস্ত নির্বাচনী এলাকার খসড়া প্রকাশ করেছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। প্রস্তাবিত সীমানা চূড়ান্ত হলে কিছু আসনে ভোটার সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাবে। এ সংখ্যা ৬ থেকে ৭ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যাবে। এতে বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। ইসির প্রস্তাবিত খসড়ায় ৩৮টি আসনে উপজেলার অখ-তা, প্রশাসনিক এলাকা যোগ ও বিলুপ্ত ছিটমহল যোগ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দশম সংসদের ২৬২টি আসনের সীমানা পুনর্বহাল থাকছে। খসড়া তালিকায় আসনগুলোর ভোটার সংখ্যায় বড় ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপে ভোটার ও আয়তনের সমতাভিত্তিতে সংসদীয় আসন বিন্যাস করার দাবি করেছিল বিএনপিসহ অধিকাংশ নিবন্ধিত দল। কিন্তু এ দাবি আমলে নিচ্ছে না ইসি। ইসির সঙ্গে সংলাপে দলগুলোর পরামর্শ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভোটার অনুপাতে সীমানা নির্ধারণের প্রস্তাব রেখেছিল এরশাদের জাতীয় পার্টি। ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ভোটার অনুপাতে সীমানা নির্ধারণের দাবি জানায়। একই দাবি রেখেছিল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। নতুন করে আদমশুমারি না হওয়ায় দশম সংসদের সীমানায় নির্বাচন চায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। বিকল্প ধারাও বিদ্যমান সীমানায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পক্ষে। সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে সীমানা নির্ধারণের পরামর্শ ছিল বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির। সীমানা পুনঃনির্ধারণ না করার পক্ষে ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইসি’র সঙ্গে সংলাপের পর দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয়টি আদমশুমারির সঙ্গে সম্পর্কিত। সর্বশেষ ২০১১ সালে আদমশুমারির উপর ভিত্তি করে (যা ২০১৩ সালে প্রকাশিত) ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন আদমশুমারি ছাড়া পুনরায় সীমানা পুনঃনির্ধারণ কার্যক্রম নিলে বিভিন্ন আইনগত জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এ অবস্থায় ৩০০ আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের মতো জটিল কাজ শেষ করতে সময়স্বল্পতার কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া অত্যাবশ্যক। অন্যদিকে বিএনপি নতুন আইন করে ২০০১ সালে সংসদীয় আসনের সীমানা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিল। ২০০৮ সালে অধিকাংশ আসনের সীমানা পরিবর্তন করে ইসি। বিএনপির অভিযোগ, ২০০৮ সালে তাদের আসনগুলোকে ভেঙে দলকে বিপদে ফেলা হয়েছে। কারণ যে এলাকায় বিএনপির দুইটি আসনে ভালো সমর্থক ছিল সেখানে একটি করা হয়েছে। ফলে দলীয় একটি আসন কমে গেছে। অন্যদিকে ইসির সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ চেয়েছে বর্তমান আইন দিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচন। অর্থাৎ ছিটমহলগুলোকে যুক্ত করে ২০১৩ সালের সীমানা দিয়ে নির্বাচন করতে। ইসির তথ্যমতে, এর আগে ২০০১ সালেও ১৯৯৫ সালের সীমানার গেজেট বহাল রাখা হয়েছিল। ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়। এক-এগারো পুনর্গঠিত ড. শামসুল হুদার কমিশন সারা দেশের পার্বত্য তিন জেলা বাদে ২৯৭ আসনেই পরিবর্তন নিয়ে আসে। এর মধ্যে ১৩৩টিতে পরিবর্তন আনা হয় বড় পরিসরে। এ ব্যাপক সীমানা ভাঙচুর ও তছনছ করার মাধ্যমে ঢাকায় আসন বাড়ে আটটি এবং সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল ও ফরিদপুরে একটি করে আসন কমে। ২০০৮ সালের সীমানা বহাল রেখে ২০১৩ সালে অল্প কিছু আসনে পরিবর্তন এনে দশম সংসদ নির্বাচন দেয় ইসি।
ইসি সূত্র জানায়, ঢাকার ৫টি, নারায়ণগঞ্জের ২টি, নীলফামারীর ২টি, রংপুরের ৩টি, কুড়িগ্রামের ২টি, পাবনার ২টি, মাগুরার ২টি, খুলনার ২টি, সাতক্ষীরার ২টি, জামালপুরের ২টি, শরীয়তপুরের ২টি, মৌলভীবাজারের ২টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২টি, কুমিল্লার ৪টি, নোয়াখালীর ২টি এবং চট্টগ্রামের ২টি আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। খসড়ায় দশম সংসদের ২৬২ আসনের সীমানা পুনর্বহাল রাখা হচ্ছে। প্রশাসনিক ইউনিট বিশেষ করে উপজেলা এবং সিটি করপোরেশন ওয়ার্ডের যথাসম্ভব অখ-তা বজায় রাখা হয়েছে সীমানা পুনঃনির্ধারণে। ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌর এলাকার ওয়ার্ড একাধিক সংসদীয় আসনে বিভাজন রোধ করা হয়েছে। যেসব প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি বা সম্প্রসারণ বা বিলুপ্ত হয়েছে তা নতুন সীমানায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ছিটমহল বিনিময়ের কারণে নতুন করে কিছু এলাকা কয়েকটি আসনে যুক্ত হয়েছে। সীমানা পুনর্গঠন পদ্ধতিতে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যথাযথ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। ফলে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন ছাড়াই একাদশ সংসদে বহাল থাকছে আগের সীমানা।
ইসি সূত্রে জানা যায়, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের খসড়া তালিকায় কিছু আসনে ৬ থেকে ৭ গুণ ভোটার বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি রাখা হয়েছে গাজীপুর-৫ আসনে। এখানে ভোটার রাখা হয়েছে ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬১ জন। অথচ এ আসনে ২০১৩ সালে ভোটার ছিল ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮ জন। খসড়ায় ৫ লাখের ওপরে ভোটার হবে ১১টি আসনে। ময়মনসিংহ-৪ আসনে ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৪১, ঢাকা-২ আসনে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ২৭০, ঢাকা-১৮ আসনে ৫ লাখ ৬০ হাজার ৮৩২, গাজীপুর-১ আসনে ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩০, গাজীপুর-৫ আসনে ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬১, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭১, সিলেট-১ আসনে ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮৫৯, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে ৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৩, কুমিল্লা-১০ আসনে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩০৯, নোয়াখালী-৪ আসনে ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৩, চট্টগ্রাম-১১ আসনে ৫ লাখ ১৪ হাজার ৬৮৩ জন ভোটার হচ্ছেন। এছাড়া ৪ লাখ থেকে ৫ লাখের মধ্যে ভোটার রয়েছে ৫০টি আসনে। ৩ থেকে ৪ লাখের মধ্যে ভোটার রয়েছে ১৪২টি আসনে। অন্যদিকে ১ লাখ থেকে ৩ লাখের মধ্যে ভোটার রয়েছে ৯৭টি আসনে। সব থেকে কম ভোটার রাখা হয়েছে ঝালকাঠি-১ আসনে। এখানে ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৮৫ জন। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ১৬টি জেলার ৩৮টি সংসদীয় আসনের পুনর্গঠিত এলাকার খসড়া করা হয়েছে। কোনো দাবি আপত্তি থাকলে ১লা এপ্রিল বিকাল ৫টা পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। কমিশন দাবি আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে ৩০শে এপ্রিল সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ